Monday, January 19, 2015

একিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডার : একটি মনোরোগ


mental disorder


একিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডার কী : যে ঘটনা মানুষের স্বাভাবিক চিন্তার জগৎকে নাড়া দিয়ে স্বাভাবিক ছন্দকে নষ্ট করে দেয়, প্রচণ্ড ভয় ধরিয়ে দেয় এবং যে ঘটনাটিকে অবশ্যই প্রতিদিনের ঘটনা বা চিন্তা দিয়ে ব্যাখ্যা করাও সম্ভব নয়_এমন আকস্মিক, অগ্রহণযোগ্য ও অকল্পনীয় ঘটনার সঙ্গে মানসিক বিপর্যয়ের সম্পর্ক আছে। আর এ মানসিক বিপর্যয়টাই হলো একিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা তীব্র মানসিক চাপজনিত ভারসাম্যহীনতা।
সাভারে ঘটে যাওয়া ঘটনার ক্ষেত্রে ব্যাপারটির বিশদ ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। সেখানে প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রেই এমন পরিণতি ঘটার আশঙ্কা প্রায় শতভাগ। প্রতিটি মানুষের জন্যই যা অসহনীয়, অকল্পনীয়, আকস্মিক ও অস্বাভাবিক ঘটনা।

তবে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনেও এমনটি হতে পারে। সাধারণত ঘটনার সঙ্গে প্রচণ্ড ভয়, মানসিক চাপ বা ব্যথা, গুরুতর ইনজুরি বা জখম হওয়ার আশঙ্কা, মৃত্যু বা মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। সেই সঙ্গে চরমতম অসহায়ত্ব কাজ করে। মনে রাখতে হবে, এ ক্ষেত্রে হঠাৎ ঘটা এবং প্রচণ্ড ভয়_দুটিই কার্যকর ভূমিকা রাখে।


কাদের হয় : যেকোনো মানুষ, যে এমন কোনো একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বা অস্বাভাবিক ঘটনার ভুক্তভোগী কিংবা প্রত্যক্ষকারী।

কী হয় : প্রতিক্রিয়াগুলো বিভিন্ন রকমের হতে পারে। শুরুতেই একেবারে কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়, যে সময়টাকে মানুষ ব্যাখ্যা করতে পারে না। ঠিক পরবর্তী সময়েই দেখা যায় এক ধরনের ভয়ার্ত অনুভূতি কিংবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা দম বন্ধ হওয়ার মতো অনুভূতি। কারো কারো ক্ষেত্রে চিন্তায় অসংলগ্নতাও দেখা যায়।

এ ধরনের প্রতিক্রিয়াগুলো আবার অনেক সময় এমনি এমনিই ঠিক হয়ে যায়। দু-তিন মিনিট থেকে দু-তিন দিন পর্যন্ত সময় নিতে পারে। কেউ কেউ ঘটে যাওয়া ঘটনাটির সম্পূর্ণ কিংবা কিছু অংশ মনে করতে পারে না।

তবে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কেটে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে বিভিন্ন রকমের মানসিক সমস্যা শুরু হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে কিছু চিনতে না পারা, চারদিকের পরিবেশকে বুঝতে না পারা, কিছু মনে করতে না পারা, বারবার ঘটনাটি চোখের সামনে চলে আসা, দুঃস্বপ্নের মতো বিভিন্ন ভয়ার্ত দৃশ্য কল্পনা করা, কখনো ওই সব বিষয়কে ভয় করা বা এড়িয়ে চলা। টেনশনের কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রতিদিনের কাজ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

ঘটনা ঘটার কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ দুই দিনের মধ্যেই সমস্যা শুরু হয়, যা সাধারণত দুই দিন থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। যেসব ক্ষেত্রে ঘটনার কারণ বা তার ভোগান্তি থেকে যায়, সেসব ক্ষেত্রে আরো অনেক দিন সমস্যা চলতে পারে, যা পরবর্তীকালে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা পিটিএসডি-এ রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ চার সপ্তাহ পর থেকে পিটিএসডি বলা হবে।


সতর্কতা : একেবারে শুরুতে যে সমস্যা হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা কমে যাওয়ার বড় কারণ হলো আমাদের শরীর তার নিজস্ব পদ্ধতিতে বিষয়গুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে অনেককে ভারমুক্ত মনে হলেও ধীরে ধীরে আবার সপ্তাহের মধ্যে সমস্যাগুলো ফিরে আসতে পারে। যদি এসব বিষয় সতর্কভাবে মোকাবিলা না করা হয়, তবে ঘটনাটি পরবর্তী জীবনে যেকোনো ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

চিকিৎসা : শারীরিক যেকোনো ক্ষতি বা প্রতিক্রিয়ার জন্য তো অবশ্যই, মানসিক বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার জন্যও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জরুরি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া যদি কমে না আসে, তবে ওষুধ বেশ কার্যকরী এবং জরুরি। এ ছাড়া অতিরিক্ত টেনশন দূর করার জন্যও ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘটনাটিকে স্বাভাবিক দিকে প্রবাহিত করার জন্য, সে সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। প্রয়োজনে সম্পূর্ণ বিষয়টিকে মনে করতে সাহায্য করা দরকার। এ ক্ষেত্রে এক্সপার্টই শুধু নয়, বিষয়টি কাছের যেকোনো ব্যক্তিই করতে পারেন।

সাইকোথেরাপির ভূমিকাও কম নয়। বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থাপনায়, বিভিন্ন ধরনের রিলাক্সশেন ও কগনেটিভ রিস্ট্রাকচারিং বেশ উপকারী। বিষয়গুলোকে মনে করা এবং প্রয়োজনে ঘটনার স্থান বা বিষয়গুলো বারবার চিন্তার মাধ্যমে কিংবা সরাসরি প্রত্যক্ষ করাও একটি ভালো পদ্ধতি। 

সূত্র : কালের কণ্ঠ

Labels:

0 Comments:

Post a Comment

Subscribe to Post Comments [Atom]

<< Home