Saturday, January 3, 2015

কী খাবেন, কেন খাবেন — ৭ দিনের পরামর্শ


সবাই চান মেদহীন সুস্থ শরীর। আবার ভালো-মন্দ খেতেও মন চায়। কিন্তু খাওয়া হয় না অনেক কিছুই। এটা ঠিক নয়, সব রকম খাবার ভালোবেসে পরিমাণমতো খেলেই সুস্থ ও সতেজ থাকা যায়। শুধু জানতে হবে কী খাবেন, কেন খাবেন। খুশি মনে খাওয়ার পরামর্শ নিয়ে কড়চার এবারের মূল ফিচার। লিখেছেন খালেদ আহমেদ
দুপুর বেলা ভরপেট খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মন চায় প্রিয় কোনো খাবার খেতে। আবার কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে ভাত, মাছ, ডাল, তরকারি যাই হোক না কেন গোগ্রাসে গিলে ফেলেন অনেকেই। বাইরে মেঘলা আকাশ, ঝিরঝিরে বৃষ্টি। বিকেলের চায়ের সাথে ভাজা পোড়া কিছু নাস্তা হলে মন্দ হয় না। এ ছাড়া কয়েকদিন অফিসে কাজের চাপ। তাই খাবারের সময়ও যেন হয় না। তো কফি আর ফাস্টফুডের ওপরই ভরসা। খেতে আমরা সবাই ভালোবাসি। বাসার রান্না খাওয়ার ব্যাপারে সমঝদার হয়তো সবাই নন, কিন্তু তার সঙ্গে খেতে ভালোবাসার কোনো বিরোধ নেই। কোন খাবারে কত ক্যালরি তার হিসাব কষে খেয়ে থাকেন মেদহীন সুস্থ শরীর চান এমন মানুষেরাই। বাঙালি রসনার নানা স্বাদের খাবার সামনে এলেও তারা নিজেকে সংবরণ করতে পারেন খাবারের লোভ থেকে। বাকিরা কিন্তু নন। তারা উপাদেয় খাবার পেলে পেটভরে খেতেই ভালোবাসেন। এতে শরীরে মেদ জমতে সময় লাগে না। যদি আমরা জেনে নিই আমাদের খিদের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ, তবে খুশি মনে খাওয়াদাওয়া করেও ঝকঝকে, মেদহীন, সুস্থ থাকা যায়। যথাযথ খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে মনে আনন্দ থাকলে আর কী চাই! জানেন কি, শরীরে পানির চাহিদা হলেও আমরা খিদে বোধ করি। তখন এক গ্লাস পানি খেয়ে দশ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপরেও যদি খিদে পায়, বুঝবেন আপনি ডি-হাইড্রেটেড নন, প্রকৃতই খাবারের প্রয়োজন। কেন রাতে খাবারের পর এক টুকরো মিষ্টির জন্য আমরা ব্যাকুল হয়ে উঠি? মিষ্টি না থাকলে মিষ্টি জাতীয় কোনো খাবারই সই। কাজের চাপ কিংবা স্ট্রেসের সঙ্গে জাঙ্ক ফুডের কেন এত ভালোবাসা? সারাদিনের পর বাসায় ফিরে যে যতই হালকা ডিনারের পরামর্শ দিক না কেন, সামান্য ভাতের জন্য প্রাণ কাঁদে কেন? আসল কথা হলো, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট গোত্রের খাবারের তীব্র চাহিদার কারণ হলো শরীরে নির্দিষ্ট রাসায়নিক উপকরণের ঘাটতি। আমাদের কর্তব্য সেই ঘাটতি পূরণ করা। একই উপাদান বিভিন্ন খাবারে ছড়িয়ে আছে। আপনাকে বুদ্ধি করে বেছে নিতে হবে। এইখানেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, বিবেচক হতে হবে, তাহলেই ডায়েট রেজিম আর পাহাড়সম চাপ সৃষ্টি করবে না, লোভনীয় খাবার দেখেও আপনার আর দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হবে না। মিষ্টির প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা আসলে নির্দেশ করে আপনার শরীরে ক্রোমিয়াম, কার্বন ফসফরাস বা সালফেটের ঘাটতি। আর তা আপনি স্বচ্ছন্দে পেতে পারেন টাটকা ফল, বাদাম, মিষ্টি আলু জাতীয় খাবারে। এতে জিভে মিষ্টি স্বাদের ঘাটতি হবে না, নিশ্চিত করে বলতে পারি। আসল কথা হলো, সময়মতো খাওয়া, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। সঙ্গে সামান্য এক্সারসাইজ। নিজেকে ভালোবাসুন ও খেতে ভালোবাসুন। তাহলেই সুস্থ, সুন্দর ও সুখী থাকতে পারবেন।
বাঙালি খেতে ভালোবাসে এটা কোনো নতুন কথা নয়। সুস্বাদু খাবার সামনে পেলে আমরা ভুলে যাই পরিমিত খাবার খাওয়ার বিষয়টি। সপ্তাহে প্রতিদিন হাজার চেষ্টা করেও কাজ হবে না যদি আমরা খাবার গ্রহণে সচেতন না হই। পরিশ্রম এবং বয়সের ওপর নির্ভর করে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা করে নিলে বাড়তি খাওয়া এবং অসময়ে খাওয়ার প্রবণতা কমে আসতে বাধ্য। আপনাদের জন্য সপ্তাহের সাত দিনের একটি খাদ্য তালিকা উপস্থাপন করা হলো—শনিবার
সকাল :রুটি, সবজি, ডিম, চা
দুপুর :ভাত, মাছ, সবজি, ডাল
বিকেল :ফল
রাত :রুটি, সবজি, এক গ্লাস দুধ।
রবিবার
সকাল :পরোটা, সবজি, চা
দুপুর :ভাত, শাক, মাছ
বিকেল :জুস
রাত :রুটি, সবজি, সালাদ।
সোমবার
সকাল :টোস্ট, কলা, চা
দুপুর :ভাত, সবজি, মাংস সালাদ
বিকেল :স্যান্ডউইচ
রাত :রুটি, ডাল, সালাদ।
মঙ্গলবার
সকাল :পাউরুটি, জ্যাম, ডিম, চা
দুপুর :ভাত, সবজি, ছোট মাছ, ডাল
বিকেল :পেয়ারা অথবা আপেল
রাত :সবজি খিচুরি।
বুধবার
সকাল :রুটি, কলিজা ভুনা, চা
দুপুর :ভাত, সবজি, সালাদ, ডাল
বিকেল :বিস্কুট, কফি
রাত :ভাত, ডাল, ভাজি, মাছ।
বৃহস্পতিবার
সকাল :রুটি, সবজি, একটা ফল, চা
দুপুর :ভাত, ডাল, মাংস
বিকেল :মুড়ি, চিড়া, চা
রাত :রুটি, সবজি, সালাদ।
শুক্রবার
সকাল :সবজি খিচুরি
দুপুর :ভাত, মাছ, সবজি, সালাদ
বিকেল :ফল
রাত :আপনার পছন্দ।
পুরো সপ্তাহ নিয়মমতো খাবার খান। ছুটির দিন রাতে নিজের পছন্দের মেন্যু বেছে নিন। এই তালিকা তৈরি করে চোখে পড়ে এমন জায়গায় রাখুন। আর বাড়তি খাওয়ার আগে একবার তালিকাটির দিকে দেখে নিন। আমাদের মনই বারণ করবে বাড়তি খেতে। নিজেকে ভালোবাসুন পরিমিত খেয়ে সুস্থ থাকুন। তালিকা তৈরির সময় যে বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে হবে, তা হলো—বয়স, ওজন, শারীরিক অসুস্থতা, পরিশ্রম এবং ব্যায়াম কতটুকু করা হয়।
‘ভালোবেসে খাবার
খেতে হবে’
সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য কম খেলে হবে না। বেশি করে খেতে হবে। তবে ব্যালেন্স ফুডের কথাটা মাথায় রাখতে হবে। সাথে ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকা। যাদের রুচি আছে এবং আগ্রহ নিয়ে খাবার খান তারা মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতের মধ্যে আছেন। কিন্তু যাদের খাবারে রুচি হয় না, বুঝতে হবে তারা সামনে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। খাওয়ার জন্য রুচিটা জরুরি। আর সুস্থ থাকতে হলে সব স্বাদের খাবারই গ্রহণ করতে হবে। ভালোবেসে অল্প পরিমাণে খাবার খেতে কোনো সমস্যা নেই। এক কথায় খাবারকে এনজয় করতে হবে। কেননা ভালোবেসে খাবার খেলেই সুস্থ থাকা যায়।
 
তামান্না চৌধুরী
প্রধান পুষ্টিবিদ
অ্যাপোলো হসপিটাল


Labels: ,

0 Comments:

Post a Comment

Subscribe to Post Comments [Atom]

<< Home