Thursday, April 30, 2015

তরুণদের যৌন সচেতনতা

কলেজ, ইউনিভার্সিটি লেবেলের পাঠ্যসূচিতে যৌনরোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে প্রতিটি যুবক-যুবতী এ রোগগুলোর ভয়াবহতা সম্পর্কে নূ্যনতম জ্ঞান লাভে সক্ষম হয়।

বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর যে সংখ্যক লোক এ যৌনরোগে আক্রান্ত হয় তার সংখ্যা আনুমানিকভাবে ২৫ কোটি। তার মধ্যে একমাত্র গনোরিয়ায়ই আক্রান্ত হয় সাড়ে ৬ কোটিরও বেশি। বলা হয় ২ কোটিরও বেশি যুবক যুবতী বর্তমান বিশ্বে এইডস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন। কিছুদিন আগের এক পরিসংখ্যানে দেখা যেছে যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবছর সিফিলিসে আক্রান্ত হয় প্রায় ১০ লাখ নর-নারী। তাই এই যৌনরোগ প্রতিরোধকল্পে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে। লিখেছেন ডা. দিদারুল আহসান। 
বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর যে পরিমাণ লোক এ যৌনরোগে আক্রান্ত হয় তার পরিমাণ আনুমানিকভাবে ২৫ কোটি। তার মধ্যে একমাত্র গনোরিয়ায়ই আক্রান্ত হয় সাড়ে ৬ কোটিরও বেশি। বলা হয় ২ কোটিরও বেশি যুবক যুবতী বর্তমান বিশ্বে এইডস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন। কিছুদিন আগের এক পরিসংখ্যানে দেখা যেছে যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবছর সিফিলিসে আক্রান্ত হয় প্রায় ১০ লাখ নর-নারী। তাই এই যৌনরোগ প্রতিরোধকল্পে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে। আর যৌনরোগ মানে সিফিলিস, গনোরিয়া কিংবা এইডস তা কিন্তু নয়।
প্রায় ২৫টির মতো রোগ আছে যা যৌনপথে বিস্তার লাভ করে। তার মধ্যে এইডস ছাড়াও হেপাটাইটিস বি-এর মতো মারাত্মক রোগও অন্তর্ভুক্ত। যা কিছুদিন আগেও মানুষ মনে করত এটা কোনো সঙ্গমজনিত রোগই নয়। যৌনরোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসা নয় প্রতিরোধই হচ্ছে অন্যতম ব্যবস্থা। তাই সব যুবক যুবতীর মধ্যে এ শিক্ষা আমাদের পোঁছে দিতে হবে যে কী করে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারবে। আমাদের একটি কথা মনে রাখতেই হবে আমরা ঘৃণা করব রোগকে রোগীকে নয়। কিন্তু বস্তুত আমাদের দেশে হচ্ছে তার উল্টো। আমরা যৌনরোগ এবং যৌন রোগী উভয়কেই যেন ঘৃণার চোখে দেখি। তাই আসুন আমরা লক্ষ্য করি কী করে এ রোগের বিস্তার প্রতিরোধ করা যায়।
১. যুব সমাজের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে, তাদের জানতে দিতে হবে যে এগুলো প্রতিরোধযোগ্য রোগ এবং তাদের এও জানাতে হবে যে এ রোগে আক্রান্ত হলে তার মৃত্যুও হতে পারে।
২. কলেজ, ইউনিভার্সিটি লেবেলের পাঠ্যসূচিতে যৌনরোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে প্রতিটি যুবক-যুবতী এ রোগগুলোর ভয়াবহতা সম্পর্কে নূ্যনতম জ্ঞান লাভে সক্ষম হয়।
৩. আক্রান্ত হলে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে থানা, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে পেঁৗছে দিতে হবে যেন আক্রান্ত মানুষ ত্বরিত চিকিৎসার সুযোগ পায়।
৪. কেউ আক্রান্ত হলে তার সঙ্গী বা সঙ্গিনী উভয়েরই চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং স্বামী-স্ত্রী হলেও উভয়ের ক্ষেত্রেই রোগ নির্ণয় এবং একই সঙ্গে চিকিৎসার ব্যবস্থা উভয়ের জন্যই করতে হবে। তা না হলে সাময়িকভাবে সুস্থ হলেও আবার স্বামীর থেকে স্ত্রী বা স্ত্রীর থেকে স্বামী আক্রান্ত হবেই। সঙ্গী সঙ্গিনীর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
৫. কনডম ব্যবহার করতে হবে। এবং কনডম ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিও বহুগামী লোকদের শেখাতে হবে এবং তাদের বহুগামীর পথ পরিত্যাগ করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
৬. কনডম সব যৌনরোগ প্রতিরোধে সক্ষম নয় এ কথা জনগণকে জানাতে হবে। অনেকে মনে করেন কনডম ব্যবহার করলেই আর যৌনরোগ হতে পারবে না এ ধারণা নিয়ে যারা বহুগামিতায় বিশ্বাস করেন তাদের প্রতিহত করতে হবে এবং যৌনরোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে তাদের জ্ঞান দিতে হবে।
৭. শিক্ষিত জনগণ যেন মাঝে মধ্যে তাদের জননেন্দ্রিয় পরীক্ষা করেন তা তাদের জানাতে ও শেখাতে হবে।
৮. বহু যৌনরোগ উপসর্গবিহীন অবস্থায় থাকতে পারে। যেমন গনোরিয়া মহিলাদের বেলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপসর্গবিহীন অবস্থায় থাকতে পারে। কাজেই উপসর্গ নাই তাই যৌনরোগ নাই এ কথা ভাবা ঠিক নয়। আবার সিফিলিসের ক্ষত চিকিৎসা না করালেও এমনিতেই কিছুদিন পর শুকিয়ে যায় তার মানে এই নয় যে সে রোগমুক্ত হয়ে গেছে। বস্তুত এ জীবাণু তার দেহে দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিল এবং চিকিৎসা না হলে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে এমনকি তার জীবনও বিপন্ন হতে পারে।
৯. অপরের দাঁত মাজার ব্রাশ ও দাড়ি কাটার বেস্নড ব্যবহার করা উচিত নয়। সেভ কারার সময় কেটে যেতে পারে কিংবা দাঁত মাজার সময় দাঁত থেকে রক্ত বের হতে পারে এবং সেই রক্তে জীবাণু থাকতে পারে তা সহজেই অন্য ব্যবহারকারীর দেহে চলে যেতে পারে।
১০. এইডস বা যৌনরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সামাজিকতার ভয়ে চেপে যান, অনেকে মনে করেন এইডস হয়েছে জানলে চিকিৎসক পুলিশে খবর দিয়ে ধরিয়ে দিতে পারে সেই ভয়ে তারা এইডসের পরীক্ষা করাতেই চায় না। ধারণাটি আদৌ সত্য নয়।
১১. জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে যৌনরোগ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে এবং তার বিস্তার রোধে বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে হবে।
১২. রক্ত গ্রহণ বা প্রদানের আগে এইডস হেপাটাইটিস-বি, ও সিফিলিসের পরীক্ষা অবশ্যই করাতে হবে। এগুলো পাওয়া গেলে সে রক্ত অবশ্যই গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৩. শিরাপথে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীদের নিবৃত্ত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আর তাদের যদি নিবৃত্ত করা না যায় তাহলে অন্তত তাদের এটুকু শেখাতে হবে যেন একই সুই তারা একাধিকবার ব্যবহার না করেন। করলে এইডস থেকে শুরু করে যে কোনো যৌনরোগ তার দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সর্বোপরি ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত করতে হবে এবং নৈতিকতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিজ নিজ পিতামাতা তাদের সন্তানদের নৈতিকতার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেন।
 

সূত্রঃ যায় যায় দিন লিখকঃ ডা. দিদারুল আহসান।  চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগবিশেষজ্ঞ

Labels: , , , ,

0 Comments:

Post a Comment

Subscribe to Post Comments [Atom]

<< Home