Friday, May 1, 2015

ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার – প্রস্রাব আটকে যাবার রোগ

ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার

ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার – প্রস্রাব আটকে যাবার রোগ

মূত্রনালী সরু বা সংকীর্ণ হয়ে যাওয়াকে স্ট্রিকচার ইউরেথ্রা বলে। এটি অত্যন্ত প্রাচীন একটি রোগ। এই রোগের বর্ণনা প্রাচীন গ্রীক চিকিত্সা বিজ্ঞানে উল্লেখ দেখা যায়। ইউরেথ্রা বা প্রস্রাবের নালী পুরুষের ক্ষেত্রে ২৫ সেঃমিঃ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪ সেঃমিঃ লম্বা হয়। এটি প্রস্রাবের থলি থেকে প্রস্রাব দেহের বাহিরে নিঃসরণ করে। এটি মোটামুটিভাবে ক্লিনিক্যালি দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়। এন্টেরিয়র ইউরেথ্রা ও পোষ্টেরিয়ির ইউরেথ্রা। এন্টেরিয়র ইউরেথ্রা প্রস্রাবের নালীর মুখ, পেনাইল ইউরেথ্রা ও বালবার ইউরেথ্রা নিয়ে গঠিত। পোষ্টেরিয়র ইউরেথ্রা মেম্রেনাস ইউরেথ্রা ও প্রোষ্টেটিক ইউরেথ্রা নিয়ে গঠিত।
ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার – প্রস্রাব আটকে যাবার রোগ
 
ইউরেথ্রা করপাস স্পনজিওসামের মধ্যে থাকে এর দু’পার্শ্বে আরও দ’টি অংশ আছে যাদেরকে বলা হয় করপাস ক্যাভারনসাম। ইউরেথ্রাতে সংক্রমণ, রক্ত চলাচলে স্বল্পতা বা আঘাত জনিত কারণে ইউরেথ্রা সরু হতে থাকে যা প্রস্রাব নির্গমণে বাধা সৃষ্টি করে। পোষ্টেরিয়র ইউরেথ্রাতে সাধারণত আঘাত জনিত কারণে স্ট্রিকচার হয়। ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার কারণগুলোর  মধ্যে রয়েছে আঘাত, সংক্রমণ, ক্যান্সার বা জন্মগত। সংক্রমণের মধ্যে গণোরিয়া উল্লেখযোগ্য। এই রোগী সাধারণত প্রথমদিকে ধীরে ধীরে অনেকক্ষণ ধরে চাপ দিয়ে প্রস্রাব করে থাকে। এদের প্রস্রাবে সংক্রমণও এক পর্যায়ে প্রস্রাব আটকে যেতে পারে। রোগীর উপসর্গ সমূহ মারাত্মক আকার ধারণ করলে, প্রস্রাবের থলিতে পাথর হলে, প্রস্রাব পরবর্তী মূত্রথলিতে অতিরিক্ত প্রস্রাব জমা থাকলে যখন ওষুধ প্রয়োগে নিরাময়ের সম্ভবনা থাকে না তখন শল্য চিকিত্সার প্রয়োজন হয়। যদি সংক্রমণ থাকে তবে তা শল্য চিকিত্সার পূর্বে চিকিত্সা করে নিতে হবে।
এই রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর রোগের ইতিহাস, কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা যেমন ইরোফ্লোমিট্রি বা প্রস্রাবের ধারা পরীক্ষা, মূত্র নালীর বিশেষ ধরণের এক্স-রে যাকে বলা হয় RGU & MCU এবং প্রস্রাবের রাস্তার আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষাপ্রয়োজন। এছাড়া সরাসরি যন্ত্রের মাধ্যমে দেখে এই রোগ নির্ণয় করা যায় একে বলা হয় ইউরোথ্রো সিসটোস কপি। শল্য চিকিত্সার মধ্যে রয়েছে ইউরেথ্রাল ডাইলেটেশন, ইন্টারনাল ইউরোথ্রোটমি, প্রাইমারী রিপেয়ার, রিপেয়ার উইথ টিস্যু ট্রান্সফার ও পারমানেন্ট স্টেন্ট। ইউরেথাল ডাইলেটেশন এর মধ্যে রয়েছে রিজিড ডাইলেটেশন ও সেলফ্ ডাইলেটেশন পদ্ধতি।

রিজিড ডাইলেটেশন ও সেলফ্ ডাইলেটেশন পদ্ধতি

 রিজিড ডাইলেটেশনে অভিজ্ঞ চিকিত্সক বিশেষ ধরণের মেটালিক বুজি দিয়ে ইউরেথ্রার সরু অংশ মোটা করে দিয়ে থাকেন। এটি একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর করতে হয়। অপটিক্যাল ইউরোথ্রটমি বা রিজিড ডাইলেটেশনের পর নিজে নিজে একটি পরিস্কার ক্যাথেটার দিয়ে প্রতিদিন প্রস্রাবের রাস্তায় প্রবেশ করানোকে সেলফ্ ডাইলেটেশন বলে। ইন্টারনাল উইরেথ্রোটমি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে প্রস্রাবের নালীর ভিতর দিয়ে কেটে দেওয়া হয়। এরপর ৩-৫ দিন ক্যাথেটার দিয়ে রাখা হয়।

 রাইমারী রিপেয়ারের ক্ষেত্রে চিকন হয়ে যাওয়া অংশ কেটে ফেলে দিয়ে জোড়া লাগানো হয়। সাধারণত সরু অংশ ১-২ সেঃমিঃ হলে ভাল হয়। তবে বিশেষ পদ্ধতিতে ৩-৪ সেঃমিঃ পর্যন্ত করা যায়। টিস্যু ট্রান্সফার পদ্ধতিতে সাধারণত অন্য স্থানের চামড়া নিয়ে সরু হয়ে যাওয়া অংশে লাগানো হয়। সাধারণত মুখ গহবরের ভিতরের চামড়া নিয়ে লাগালে ভাল ফল পাওয়া যায়। পারমানেন্ট ইউরেথ্রাল ষ্টেন্ট সাধারণত অপারেশনের অনুপযোগী রোগী যাদের বালবার ইউরেথ্রাতে স্বল্প দৈর্ঘ্য ষ্ট্রিকচার আছে তাদের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা যেতে পারে। স্ট্রিকচার ইউরেথ্রা একটি বাজে  ধরণের রোগ। কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে পরিপূর্ণ নিস্কৃৃতি পাওয়া দুস্কর। বারে বারে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে।


ডাঃ মুহাম্মদ হোসেন
সহযোগী অধ্যাপক, ইউরোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
চেম্বার: ল্যাব এইড স্পেশালাইজড হসপিটাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

সূত্রঃ  হেল্থ বাংলা

 

Labels: , ,

0 Comments:

Post a Comment

Subscribe to Post Comments [Atom]

<< Home