Sunday, October 5, 2014

ঈদের খাবারে সুস্থতা

ঈদ সমাগত। এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ হলো আনন্দের দিন। আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো খাবার। ঈদকে উপলক্ষ করে সবার বাসায় নানান মুখরোচক খাবার তৈরি করা হয়। এক মাসের খাদ্যাভ্যাস বদলে ওই দিনই সবাই সকালে নাস্তার টেবিলে বসে মুখে দেন সেমাই, পায়েস, জর্দা, পোলাও কোর্মাসহ আরও কত খাবার। নিজ বাসায় তো বটেই, আত্দীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের বাসায় প্রায় সারা দিনই এটা-সেটা খাওয়া হয়।
 
ঈদের খাবারে সুস্থতাতবে এই আনন্দের মধ্যেও আমাদের একটু নজর দেওয়া দরকার আমরা কী খাচ্ছি, কতটুকু খাচ্ছি, খাবারের প্রতিক্রিয়া কী তার ওপর। মূল সমস্যাটা নিঃসন্দেহে খাবারের পরিমাণে। রমজানে খাবারের সংযম হোক বা না-ই হোক, ঈদের দিন ভূরিভোজ মানে এক মাসের খাবার একদিনেই উসুল করা। আবার বন্ধুদের বাড়িতে গেলে চাপে পড়ে কিছু তো খেতেই হয়। আর এই চাপ পড়ে পেটে। অনেকেই একসঙ্গে প্রচুর তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে হজম করতে পারেন না। ফলে পেট ফাঁপা, জ্বালাপোড়া, পেট ব্যথা, বার বার পায়খানা হয়। পর্যাপ্ত পানি পান না করার দরুন অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন।

দিনের মূল খাবার অর্থাৎ দুপুর ও রাতের খাবার কোথায় খাবেন ঠিক করে ফেলুন। অন্যসব বাসায় যথাসম্ভব কম খান। পানি, সরবত, ফলের রসসহ তরল খাবার বেশি খাবেন। এতে গুরুপাক খাবারের জন্য পেটে স্থান কমে যাবে। খাবারের মেন্যুতে এই দিন মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি থাকে। এ ছাড়া পোলাও, মুরগি, গরু বা খাসির মাংস, কাবাবসহ ঝাল খাবারও থাকে। এ ছাড়া চটপটি, দইবড়া কিংবা বোরহানির মতো টক খাবারও থাকে। কম বয়সী এবং শারীরিক কোনো সমস্যা নেই, তারা নিজের পছন্দমতো সবই খেতে পারেন এবং তাদের হজমেরও কোনো সমস্যা হয় না, শুধু অতিরিক্ত না হলেই হলো।

তবে অনেকে এক মাসের অনভ্যাসের কারণে হঠাৎ খুব বেশি ঝাল, তৈলাক্ত বা ভাজাপোড়া খাবার খেলে অসুস্থবোধ করতে পারেন। তাই সবারই কম মসলা ও তেলযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। যারা মাঝবয়সী, বয়োবৃদ্ধ বা যাদের শারীরিক সমস্যা আছে যেমন ডায়াবেটিস, প্রেসার, হৃদরোগ ইত্যাদি তাদের খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি। ডায়াবেটিস রোগীকে অবশ্যই মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়াতে হবে। তারা টকজাতীয় খাবারের মাধ্যমে রসনা পূরণ করতে পারেন।
সবজি বা টকফল দিয়ে খাবার আগেই বানিয়ে রাখুন, এগুলো আপনাকে অন্যসব থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে। মিষ্টি খেতে চাইলে চিনির বিকল্প দিয়ে তৈরি করে নেবেন। পোলাও-বিরানি কম খাবেন, তবে ভাত খাওয়াই ভালো। মুরগি বা গরুর মাংস খাওয়া যাবে যদি অতিরিক্ত তেল বা চর্বি না থাকে। কিডনির সমস্যা থাকলে মাংস পরিহার করা ভালো। যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের রোগী তাদের অবশ্যই তেল-চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। চর্বি ছাড়া গরুর মাংস খাওয়া যাবে, তবে পরিমাণ মতো। খাসির মাংস, কলিজা, মগজ, চিংড়ি মাছ ইত্যাদি খাবেন না।

খাবারের পরিমাণটা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে যাই খান না কেন তা পরিমাণ মতো খাওয়া বাঞ্ছনীয়।

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

Labels:

0 Comments:

Post a Comment

Subscribe to Post Comments [Atom]

<< Home