Monday, May 11, 2015

কন্ডোম পুরাকালে সাপের চামড়া দিয়ে তৈরি হত


লাইগেশন বা ফিমেল স্টেরিলাইজেশন

স্থায়ী গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা মেয়েদের শরীরে বন্ধ্যাত্ব এনে দেয় | জরায়ুর সংলগ্ন দু’ধারে দু’টি ফ্যালোপিয়ান টিউব থাকে | এই নল দুটির যে দিকটায় সেই দিকের একটু আগে অর্থাৎ সমগ্র নলতিকে চার ভাগ করলে তৃতীয় ভাগের জায়গায় কেটে সুতো দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় | এই অপারেশন খুবই নিরাপদ ও সহজ | আগে পেট কেটে এই অস্ত্রোপচার করা হত, সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে | আজকাল করা হয় ল্যাপারোস্কোপের সাহায্যে, পেট সামান্য ফুটো করে | অজ্ঞান করতে লাগে না, লোকাল অযানাসথেসিয়াতেই করা যায় | রোগী সেইদিনই বাড়ি ফিরতে পারে, সেলাই কাটার ব্যাপার নেই | ৩-৪ দিনেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরত যাওয়া যায়, প্রসবের ৬ সপ্তাহের মধ্যে বা বাচ্চা নষ্ট করিয়ে সঙ্গে সঙ্গে লাইগেশন করানো অনেক নিরাপদ | সবার জানা উচিত, যখন পেটে সন্তান নেই, তখন প্রতিষেধক ব্যবস্থা নিলে অনেক উপসর্গ ও বিপদ এড়ানো যায় |

অপরিণত মন নিয়ে অনুরোধ বা টাকার লোভে অল্পবয়সী (২০ থেকে ২৫ বছর) মেয়েদের ১টি বাচ্চার পরেই এই অপারেশন করানো ঠিক না | এত কম বয়সে সন্তানধারণের ক্ষমতা ব্যাহত হলে মানসিক অবসাদ, জরায়ু ও ওভারির কাজে বাধা ইত্যাদি অসুবিধা দেখা দিতে পারে | সাধারণত লাইগেশন অপারেশনে রোগীর বয়স ৩০-এর এধার ওধার হওয়া উচিত | যে মহিলার দুটি বাচ্চা আছে এবং দ্বিতীয় বাচ্চাটিকে সব কটি সংক্রামক অসুখের টিকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে (অর্থাৎ তার বয়স বছর দেড়েক), সেই মাকে অপারেশনের উপযুক্ত বলে মনে করা হয় | কোনও ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে যে লাইগেশনের পর মায়ের দুটি বাচ্চাই মারা গিয়েছে | সেক্ষেত্রে রিক্যানালাইজেশন অপারেশন করে টিউব আবার জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে | স্বামীর অজ্ঞাতসারে বা অবিবাহিতা মহিলার কখনওই লাইগেশন করা উচিত নয় | আবার দ্বিতীয় বা তৃতীয় সিজারিয়ানের ক্ষেত্রে, যেখানে পেট খুলতেই হচ্ছে, সেখানে দম্পতির অনুমতি নিয়ে লাইগেশন করে নেওয়াই ভাল | অনেক সময় দেখা যায়, স্বামীর রোজগার নেই, চাকরি চলে গিয়েছে, স্বামীকে না জানিয়ে মহিলা লাইগেশন করিয়ে নিলেন | সে ক্ষেত্রে আইনের দিকটিও ভাবতে হবে | তবে আশার কথা, মেয়েদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আইন এখন অনেকটাই মেয়েদের দিকে | লাইগেশন করলে শরীর কমজোরি হয়ে যায়, কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় | শারীরিক মিলনের আগ্রহ ও ক্ষমতা লোপ পায় — এমন অনেক ভিত্তিহীন ধারণা আমাদের সমাজে আজও প্রচলিত আছে যার কোনওটিই ঠিক নয় | বরং নিশ্চিন্ত নিরাপদ জীবন মেয়েদের শরীর-মনে আলাদা আনন্দের স্বাদ এনে দেয়, নতুন করে বাঁচার রসদ জোগায় |

গর্ভনিরোধের ইতিহাস
সম্ভবত উত্তর আমেরিকার কোনও অঞ্চলে বার্থ কন্ট্রোলের ভাবনার সূত্রপাত | যদি মেয়েরা ভাবে আমি মা হব কখন এবং কবে, সেটা তাদেরই চিন্তা-ভাবনার বিষয় হওয়া উচিত — এইভাবে চিন্তা শুরু হয়েছিল্ | আরও পরে ১৮৩০ সালে ইংল্যান্ডে ও নাইট সোস্যালিস্টদের মধ্যে গর্ভনিরোধের ভাবনার উদয় হয়েছিল আর সেটা সারা পৃথিবীতে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছিল |
১৮৫০ সালে মধু, গঁদের আঠা, কুমিরের বিষ্ঠা এই সকল পদার্থ মেয়েদের শরীরে ঢুকিয়ে রাখা হত গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে | তখনকার দিনে মায়েরা দুধ অনেকদিন ধরে বাচ্চাকে খাইয়ে যেতেন পুনরায় গর্ভসঞ্চার বন্ধ করার জন্য, তবে এই প্রক্রিয়া যে কর্যকরী নয় তা আগেই আলোচিত হয়েছে | ২০ শতকের প্রথম দিকে মারি স্টোপস গর্ভনিরোধক ব্যবস্থার কথা বিশেষভাবে ভাবেন | ১৬০০ সালে ডাঃ কন্ডোম Sheath-এর কথা ভেবেছিলেন | মারি স্টোপস ক্লিনিক, কন্ডোম ইত্যাদি শব্দগুলি সেই থেকেই এসেছে |

শোনা যায় বহু আগে শুকনো গোবর আর মধু প্রসবদ্বারে রাখা হত গর্ভসঞ্চার বন্ধ করার জন্য | এও শোনা যায় ভারতে নাকি গাজরের বীজ খেতে দেওয়া হত গর্ভনিরোধক বড়ি হিসাবে | ১৪০০ শতাব্দীতে আবার বলা হয়েছিল যদি কোনও মহিলা মৌমাছি খেয়ে নেয় তাহলে সে গর্ভবতী হবে না |
৪০০০ বছর আগে পুরনো কাহুন প্যাপিরাস (গাছের পাতা) হল সবচেয়ে প্রাচীন লিখিত নিদর্শন | এতে লেখা আছে জন্ম সঙ্কোচন ব্যবস্থার ওপর | এখানেও কুমিরের বিষ্ঠার উল্লেখ আছে | আরবে প্রথম আই ইউ ড (ইন্ট্রা ইউটেরাইন ডিভাইস) প্রবর্তিত হয়েছে মেয়ে উটদের জরায়ুতে ছোট পাথর ঢুকিয়ে দিয়ে — যাতে মরুভূমিতে উট হঠাৎ গর্ভবতী না হয় |

কন্ডোম পুরাকালে ছিল ভেড়া, ছাগল এমনকি সাপের চামড়া দিয়ে তৈরি, পাতলা কাপড়ের কথাও শোনা যায় | পাতিলেবুর রসে কাপড় ভিজিয়ে মেয়েদের শরীরের ভিতরে রাখার কথাও শোনা যায়, পাঞ্জাবি পরিবারে ৩০/৪০ বছর আগে পর্যন্ত একইঅভাবে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহৃত হত | আর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে আজও এসব চালু আছে | শুঁটকি মাছের লেইও ব্যবহৃত হত |

সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার যেমন পরিবর্তন হয়েছে, আয়ুও তেমন বাড়ছে | জনবিস্ফোরণের সমুদ্রের ঢেউ কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না | সর্বক্ষণই মেয়েদের ওপর বলির খাঁড়া — গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা তাকেই নিতে হবে | এত যে আন্তর্জাতিক মানের সমীক্ষা হচ্ছে, ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে পরিবারগতভাবে প্রতিটি মহিলা জন্মসূত্রে তার জননস্বাস্থ্যের জন্য এই কনট্রাসেপটিভ ব্যবস্থার মধ্যে থাকছে | জন্মের হার, পরিবারের মাপ, জনবিস্ফোরণ নির্ভর করে জলবায়ু, পুষ্টির মান, জনস্বাস্থ্য, বিয়ের বয়স, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, পুত্রসন্তানের চিন্তা, সম্পত্তির আইনগত দিক, ধর্ম, রাজনীতি, যুদ্ধের সমস্যা , শিক্ষর মান, সর্বশেষে শিশুমৃত্যুর হারের ওপর |

যেখানে স্বামী বা স্ত্রীর কোনও জটিল ও দুরারোগ্য অসুখ আছে সেখানে তখন সেই সময় গর্ভ সঞ্চার না হওয়াই ভাল | মেয়েটির যদি টিউবারকিউলেসিস, নেফ্রাইটিস, রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদযন্ত্রের অসুখ, মানসিক বৈকল্য, থ্যালাসিমিয়া ইত্যাদি থাকে, তা হলে গর্ভাবস্থা ও প্রসব মেয়েটির জীবনের আশঙ্কা এনে দেয় | বারংবার গর্ভপাত, সিজারিয়ান সেকশন, জরায়ুতে টিউমার, এপিলেপসি — মেয়েটি যদি এই সকলের শিকার হয় তবে পুনরায় গর্ভবতী হবার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই দরকার | ছোট বয়সে বিয়ে হলে তাড়াতাড়ি সন্তান কিছুতেই নয় | আবার অনেক সময় দেখা যায় সন্তানধারণ সম্পর্কে মেয়েটির কোনও ধারণাই নেই |

যে কোনও মেয়ের ঋতুস্রাব শুরু হওয়া (মেনার্ক) থেকে বন্ধ হওয়া (মেনোপজ) পর্যন্ত গর্ভসঞ্চারের ভয় থেকেই যায় আর reproductive age হল ১৫ থেকে ৪৪ বছর | অবাঞ্চিতও গর্ভসঞ্চারের হাত থেকে বাঁচতে হলে চাই পরিবার, স্বামী, সমাজ ও চিকিৎসকের সাহায্য,ওষুধের অপব্যবহার সেখানে সাহায্যের মাপকাঠি নয় |

 তথ্যসূত্র :বাংলালাইভ

Labels:

0 Comments:

Post a Comment

Subscribe to Post Comments [Atom]

<< Home