Sunday, January 18, 2015

পুরুষত্বহীনতা: part 3

কোন পুরুষের প্রাথমিক পুরুষত্বহীনতা হবে তা আগে থেকে বলা যায় না। আবার কেউ অন্যকে শেখাতে পারে না লিঙ্গ উত্থানের বিষয়টি। লিঙ্গের উত্থান একটি প্রাকৃতিক অবস্থা। রেসপিরেটোরি, সারকুলেটরী এবং স্নায়ুবিক কারণে লিঙ্গ উত্থিত হয়। কিন্তু আসল কারণটি হলো প্রাকৃতিক। তবে অনেক ক্ষেত্রে যৌন মনোদৈহিক সামাজিক কারণে ও অনেকের পুরুষত্বহীনতা হতে পারে। যে কারণগুলো পুরুষত্বহীনতার জন্য স্বাভাবিকভাবে দায়ী সেগুলো হলো

কঠিন ধর্মীয় বিশ্বাস।
যৌনতার জন্য প্রচুর শক্তি না থাকা।
মাতৃত্বের কঠিন চাপ।
সমকামিতা পছন্দ করা।
নারীদেরকে ঘৃণা করা।
পতিতার সাথে সঙ্গমে ব্যর্থ হওয়ার পরে মনে পাপ বোধের সৃষ্টি।

পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসা-
প্রায়শই পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় এবং রোগের কারণ ধরতে না পারলে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রলম্বিত হতে পারে। যৌন বিশেষজ্ঞ মাস্টার এবং জনসনের মতে যৌন সঙ্গিনী বদলের ফলেও অনেক সময় এ রোগের সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। নারীর উচিত পুরুষকে এ ব্যাপারে সহায্য করা। স্ত্রীর উচিত স্বামীকে সাহায্য করা। নৈতিক, সমাজিক,আর্থ-সমাজিক প্রোপটে পুরুষের পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসায় বর্তমানে যে বিষয়গুলো গ্রহন করা হয় সে গুলো হলো

যৌনতার পরিপূর্ণ শিক্ষাদান।
সাইকোথেরাপী।
রোগীকে হস্তমৈথুনের দ্বারা তার লিঙ্গের দৃঢ়তা বাড়ানো।
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত রোগীকে এ্যাংজিওলিটিঙ দেয়া।
নিচু মাত্রার ৫০ গ্রাম টেসটোস্টেরন ইনফেকশন সপ্তাহে তিনবার দেয়া।
যদি রোগীর কেবলমাত্র উত্থানজনিত সমস্যা হয় তবে রোগীকে নগ্ন নারীর সমনে উপস্থিত করা। এক্ষেত্রে পতিতাদের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
পেপাভেরিন ইনকেজশন লিঙ্গের দৃঢ়তা বাড়াতে পারে।
রোগীর জন্য সামাজিকতার প্রয়োজন।
যৌন উদ্দীপক গ্রন্থ পড়া উচিত।

চূড়ান্ত মাত্রার পুরুষত্বহীনতা-
অনেক পুরুষের পুরুষত্বহীনতা সাময়িক। দেখা যায় যে খুব বেশি মাত্রায় উদ্বিগ্ন থাকলে বা কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলে যৌনমিলনের সময় পুরুষ তার যৌন উত্তেজনা হারাতে পারে। আবার খুব বেশি মাত্রায় এলকোহল সেবনের ফলেও পুরুষের লিঙ্গের দৃঢ়তা নষ্ট হয়ে যায়। সাইকোজেনিক অথবা অর্গানিক নানা কারণে পুরুষের পুরুষত্বহীনতার সৃষ্টি হতে পারে। মনোদৈহিক যে যে কারণে পুরুষত্বহীনতার সৃষ্টি হতে পারে

১. দাম্পত্য সমস্যা।
২. ধর্মীয় কুসংস্কার।
৩. কঠিনভাবে পিতা বা মাতার অনুশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকা।
৪. পূর্বের যৌন অমতার জন্য পাপবোধ।
৫. অকাল বীর্যপাত।
৬. যৌনতার ব্যাপারে অনাগ্রহ।
৭. যৌনমিলনে সফলতা আসবে কিনা এই নিয়ে ভয় এবং দুশ্চিন্তা।

অর্গানিক কারণে সৃষ্ট পুরুষত্বহীনতা-
১. এনাটোমিকাল বড় হাইড্রোসেল টঙিকুলার ফাইব্রোসিস।
২. কার্ডিওরেসপেরেটোরী মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন ইনজিনা ফাইমোসিস।
৩. জেনিটো ইউরিনারী প্রিয়াপিজম প্রোসটাটিটিস ইউরেথ্রিটিস প্রোসটাটেকটমী।
৪. এন্ড্রোক্রাইনাল, ডায়াবেটিস থাইরোটঙিকোসিস স্থুলতা ইনফা্যান্টালিজম ক্যাসট্রেশন এক্রোমেগালি।
৫. নিউরোলজিক্যাল, মাল্টিপোল, সিরোসিস, অপুষ্টি, পারকিনসন্স অসুখ, টেমপোরাল লবের সমস্যা, স্পাইরাল কর্ডের আঘাত, ই.সি.টি।
৬. ইনফেকশন, টিউবারকিলোসিস, গনোরিয়া, মাম্পস।
৭. ড্রাগ নির্ভরতা, এলকোহল সেবন, স্নায়ু শিথিলকারী ওষুধ, এন্টিহাইপারটেনসিভ ওষুধ, সাইকোট্রপিকস ওষুধ, যেমন-ইমিপ্রামিন, ডিউরেটিঙ। যেমন-রেজারপাইন।

রোগ নির্ণয়-
যে কোনো ধরণের পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসার জন্য তার রোগ নির্ণয়ের প্রয়োজন রয়েছে। ডাক্তারকে জানতে হয় পুরুষের ক্রমাগত যৌন সমস্যা কেন সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মনোদৈহিক কারণের চাপ শরীরের উপর এসে পড়ে এবং এই জন্য পুরুষ উত্থান সমস্যায় ভোগে। রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তারকে যে বিষয়গুলো জানতে হয়

১. রোগীর পারিবারিক ডাক্তারী ইতিহাস,
২. রোগীর ব্যক্তিগত ডাক্তারী ইতিহাস।
৩. রোগীর শারীরিক পরীক্ষা।
৪. রোগীর লিঙ্গ পরীক্ষা।
৫. ল্যাবটেষ্ট।
৬. মিনেন সোটা মালটিফেজিক পারসোনালিটি ইনভেনটোরি।

রোগীর পারিবারিক ডাক্তারী ইতিহাস এবং রোগীর ব্যক্তিগত ডাক্তারী ইতিহাস জানা এই জন্য জরুরী যে, এতে করে রোগ নির্ণয় করা সুবিধা হয় । ডাক্তার বুঝতে পারেন পুরুষত্বহীনতার এই সমস্যাটির কারন শারীরিক নয় মানসিক। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এলকোহল সেবনজনিত কারণে পুরুষের পুরুষত্বহীনতা দেখা দেয় এবং অনেকের অকাল বীর্যপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। রোগীর শারীরিক পরীক্ষা নিরীার মধ্যে প্রধান বিবেচ্য বিষয় থাকে তার রেসপিরেটোরী এবং কার্ডিওভাসকুলার ঠিকমত কাজ করছে কিনা তা ল্য করা। এছাড়া ও স্নায়ু এবং তলপেট ব্যবস্থা কতটুকু সুস্থ আছে এটিও ডাক্তারদেরকে জানতে হয়। লিঙ্গ পরীক্ষার সময় ডাক্তার যে বিষয়গুলো ল্য করেন।

প্রিপিউজ-ফাইমোসিসের জন্য।
মূত্রনালীর মুখ- স্টেনোসিসের জন্য।
অন্ডথলি-হাইড্রোসেলের জন্য।
করপরা কেভারনোসা-যে কোনো প্রকার ফাইব্রেসিসের জন্য।

ল্যাবরেটরী টেষ্ট-
ল্যাবরেটরীতে ডাক্তার রোগীর বিভিন্ন শারীরিক বিষয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকেন। এতে করে দ্রুত সমস্যা নির্ণয় করা সহজ হয়। ল্যাবরেটরীতে পুরুষত্বহীনতার জন্য যে সমস্ত টেষ্ট করানো হয় সেগুলো হলো

সি.বি.সি।
ই.এস.আর।
মূত্র পরীক্ষা।
লিভারের এনজাইম পরীক্ষা।
বীর্য পরীক্ষা।
থুথু পরীক্ষা।
এস এম এ ১২।
টেসটোসটেরন স্তন পরীক্ষা।
প্রেল্যাকটিন স্তন পরীক্ষা।

পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসা-
পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসার ব্যাপারে অধিকাংশ পরামর্শ এসেছে মাস্টার এবং জনসনের কাছ থেকে। তারা তিনটি বিষয়ে প্রাথমিকভাবে গবেষণা করে থাকেন যে কোনো একজন পুরুষ পুরুষত্বহীনতার ভোগে। এই তিনটি কারণকে বিশ্লেষণ করে তারা এমন কিছু কৌশল এবং পদ্ধতির কথা বলেন যাতে করে পুরুষত্বহীনতা সমস্যা কাটানো যায়। তাদের গভেষণার বিষয় তিনটি হলো

১. যৌনতার ব্যাপার পুরুষ এবং নারীর ভ্রান্ত ধারণা।
২. পুরুষের পুরনো চিন্তা ভাবনা এবং উঁচু মাত্রার শারীরিক এবং মনোদৈহিক চাপ। বিশেষ করে স্বামী স্ত্রী মধ্যকার যৌনতার ব্যাপারে আলোচনা কম হওয়া। মনে রাখা উচিত স্বামী স্ত্রী মধ্যকার যৌন আলোচনা যৌন উদ্দীপনা বাড়াতে পারে।
৩. পুরুষত্বহীন পুরুষের মানসিক চাপ বেশি থাকে সেই কারণে স্ত্রীর বা যৌন সঙ্গিনীর উচিত তাকে আশ্বস্ত করা যে এটি কোনো রোগ নয়। মাস্টার এবং জনসনের পুরুষত্বহীনতার ব্যাপারে দেয়া পরামর্শগুলো হলো।

যৌন সঙ্গী এবং সঙ্গিনীর মধ্যে খোলামেলা যৌন আলোচনা করা উচিত। এটি পরস্পরের যৌনানুভূতিকে চাঙ্গা করতে পারে এবং পুরুষের লিঙ্গের দৃঢ়তা সৃষ্টি করে।
যৌনতার ব্যাপারে কোনো প্রকার ধারণা পোষণ করা উচিত নয়। এবং পুরুষ উভয়েরই উচিত যৌনতার ব্যাপের একজন অন্যজনকে সাহায্য করা। এর ফলে যৌন অনুভূতি এবং পুরুষের লিঙ্গের দৃঢ়তা তৈরী হতে পারে।
যদি নারী বা পুরুষের যে কোনো একজনের যৌনতা ব্যাপারে কোনো প্রকার সন্দেহ ভয় ভীতি বা দুশ্চিন্তা কাজ করে তাহলে সাথে সাথে তা ডাক্তারকে জানানো উচিত। অনেক নারী যৌনতার ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা খুব পছন্দ করে। হয়তো তার যৌন সঙ্গী বা স্বামী ওরাল সেক্স পছন্দ করছে অথচ নারী সেটি পছন্দ করছে না। এতে করে উভয়ের যৌন অনুভূতির মধ্যে একটা পার্থক্য তৈরী হতে পারে। এ ব্যাপারটি দিকে খেয়াল রাখা উচিত।
পরস্পরের সাথে গভীর স্পর্শের সম্পর্ক থাকা উচিত।
পুরুষদের যদি উত্তেজনা কম থাকে সে ক্ষেত্রে নারীর উচিত পুরুষকে উত্তেজিত করে তোলা। নারী বিভিন্ন ভাবে পুরুষকে উত্তেজিত করে তুলতে পারে। বিশেষ করে নারী তার স্তন, স্তনবৃন্ত, কিটোরিস ইত্যাদি উত্তেজক শারীরিক অংশের স্পর্শ দ্বারা পুরুষকে উত্তেজিত করে তুলতে পারে।
পুরুষত্বহীনতা সমস্যা মোকাবেলায় নারীর ভূমিকা রয়েছে খুব বেশি। নারী পুরুষকে বিভিন্ন ভাবে উত্তেজিত করে আবার তাকে শিথিল করে তার লিঙ্গের দৃঢ়তা বাড়াতে পারে। স্ত্রী দিনে অন্তত তিন চার বার স্বামীর দৃঢ়তা বাড়াতে এ কাজটি করতে পারে।
লিঙ্গের উত্তেজনা দীর্ঘণ ধরে না রেখে পুরুষের উচিত একবার লিঙ্গ শিথিল করে আবার লিঙ্গের উত্তেজনা তৈরী করা। এতে করে পুরুষত্বহীনতার সমস্যা কিছুটা কমতে পারে।

সূত্রঃ প্রফেসর ডাঃ মোহাম্মদ ফিরোজ

Labels: ,

সমকামিতা (লেসবিয়ান)

সমকামিতা (ইংরেজি: Homosexuality, হোমোসেক্‌শুয়্যালিটি) একটি যৌন প্রবৃত্তি, যার দ্বারা সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি যৌন আকর্ষণ বোঝায়। এইরূপ আকর্ষণের কারণে সমলিঙ্গীয় মানুষের মধ্যে যৌনসম্পর্ক ঘটতে পারে। প্রবৃত্তি হিসেবে সমকামিতা বলতে বোঝায় মূলত সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি "স্নেহ বা প্রণয়ঘটিত এক ধরনের যৌন প্রবণতা"। এই ধরনের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যক্তিগত বা সামাজিক পরিচিতি, এই ধরনের আচরণ এবং সমজাতীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত এক সম্প্রদায়ের সদস্যতাও নির্দেশিত হয়।

শব্দতত্ত্ব

সমকামিতার ইংরেজি প্রতিশব্দ হোমোসেক্সুয়ালিটি তৈরি হয়েছে গ্রিক ‘হোমো’ এবং ল্যাটিন ‘সেক্সাস’ শব্দের সমন্বয়ে। গ্রিক ভাষায় ‘হোমো’ বলতে বোঝায় ‘সমধর্মী’ বা ‘একই ধরণের’। আর সেক্সাস শব্দটির অর্থ হচ্ছে যৌনতা। কাজেই একই ধরনের অর্থাৎ, সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করার (যৌন)প্রবৃত্তিকে বলে হোমোসেক্সুয়ালিটি [৩][২]
১৮৬৯ সালে কার্ল মারিয়া কার্টবেরি সডোমি আইনকে তিরষ্কার করে ইংরেজিতে প্রথম‘হোমোসেক্সুয়াল’ শব্দটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে জীববিজ্ঞানী গুস্তভ জেগার এবং রিচার্ড ফ্রেইহার ভন ক্রাফট ইবিং ১৮৮০’র দশকে তাদের সাইকোপ্যাথিয়া সেক্সুয়ালিস গ্রন্থে হেটারোসক্সুয়াল ও হোমোসেক্সুয়াল শব্দ দুটো দ্বারা যৌন পরিচয়কে দুই ভাগে বিভক্ত করেন, যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী যৌন পরিচয়ের শ্রেণীবিভাজন হিসেবে ব্যাপক পরিসরে গৃহীত হয়।
বর্তমানে হোমোসেক্সুয়াল শব্দটি একাডেমিয়ায় কিংবা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হলেও ‘গে’ এবং ‘লেসবিয়ান’ শব্দদুটি অধিক হারে ব্যবহৃত হয়। গে শব্দটির দ্বারা পুরুষ সমকামীদের বোঝানো হয় এবং নারী সমকামীদেরকে বোঝানো হয় লেসবিয়ান শব্দটির দ্বারা। পশ্চিমে ‘গে’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায় ১৯২০ সালে। তবে সে সময় এটির ব্যবহার একেবারেই সমকামীদের নিজস্ব গোত্রভুক্ত ছিলো। মুদ্রিত প্রকাশনায় শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায় ১৯৪৭ সালে। লিসা বেন নামে এক হলিউড সেক্রেটারী ‘Vice Versa: America’s Gayest Magazine’ নামের একটি পত্রিকা প্রকাশের সময় সমকামিতার প্রতিশব্দ হিসেবে ‘গে’ শব্দটি ব্যবহার করেন। আর ‘লেসবিয়ান’ শব্দটি এসেছে গ্রিস দেশের ‘লেসবো’ নামের দ্বীপমালা থেকে। কথিত আছে, খ্রীষ্টপূর্ব ছয় শতকে স্যাপো নামে সেখানকার এক শিক্ষিকা মেয়েদের মধ্যকার যৌন জীবন নিয়ে কাব্য রচনা করে ‘কবিতা উৎসব’ পালন করেছিলেন। প্রথম দিকে লেসবিয়ান বলতে ‘লেসবো দ্বীপের অধিবাসী’ বোঝালেও, পরবর্তীতে নারীর সমকামিতার সাথে এটি যুক্ত হয়ে যায়।

প্রাণিজগতে সমকামিতা

সমকামিতার ব্যাপারটি আধুনিক জীববিজ্ঞানীরা একটি নিখাঁদ বাস্তবতা বলেই মনে করেন। জীববিজ্ঞানী ব্রুস ব্যাগমিল তার ‘বায়োলজিকাল এক্সুবারেন্স : এনিমেল হোমোসেক্সুয়ালিটি এন্ড ন্যাচারাল ডাইভার্সিটি’ বইয়ে প্রায় পাঁচশ প্রজাতিতে সমকামিতার অস্তিত্বের উদাহরণ লিপিবদ্ধ করেছেন [৪]সামগ্রিকভাবে জীবজগতে ১৫০০ রও বেশী প্রজাতিতে 

সমকামিতার অস্তিত্ব প্রমাণিত[৫]তালিকায় স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে শুরু করে পাখি, মাছ, সরীসৃপ, উওভচর, কীটপতঙ্গ সবই আছে। বিজ্ঞানীরা এখন মনে করেন, পৃথিবীতে আসলে এমন কোন প্রজাতি নেই যেখানে সমকামিতা দেখা যায় না [৬][৩]সমকামিতা ছাড়াও প্রাণিজগতে উভকামিতা এবং রূপান্তরকামিতারও বহু প্রমাণ পাওয়া গেছে [৭]

মানব সমাজে সমকামিতা

বিপরীতকামী-সমকামী অনবচ্ছেদ অনুসারে যৌন প্রবৃত্তির প্রধান তিনটি বর্গের অন্যতম হল সমকামিতা (অপর বর্গদুটি হল উভকামিতা  বিপরীতকামিতা)বিভিন্ন কারণে গবেষকেরা সমকামীরূপে চিহ্নিত ব্যক্তির সংখ্যা বা সমলৈঙ্গিক যৌন সম্পর্কে অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের অনুপাত নির্ধারণ করতে সক্ষম হন নি।[৮]
আধুনিক পাশ্চাত্য জগতে বিভিন্ন প্রধান গবেষণার ফলে অনুমিত হয় সমকামী বা সমলৈঙ্গিক অভিজ্ঞতাসম্পন্নরা মোট জনসংখ্যার ২% থেকে ১৩%।[৯][১০][১১][১২][১৩][১৪][১৫][১৬][১৭][১৮][১৯] ২০০৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, জনসংখ্যার ২০% নাম প্রকাশ না করে নিজেদের মধ্যে সমকামী অনুভূতির কথা স্বীকার করেছেন; যদিও এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে খুব অল্পজনই নিজেদের সরাসরি সমকামীরূপে চিহ্নিত করেন।[২০]
মানব ইতিহাসের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন রুপে সমকামিতার অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়। কোন কোন জায়গায় সমকামী যৌনাচরণের চর্চা হত গুপ্ত বিনোদন হিসেবে, আবার কোন কোন জায়গায় সমকামিতা উদযাপন করা হত সংস্কৃতির অংশ হিসেবে। প্রাচীন গ্রীসে পাইদেরাস্ত্রিয়া, কিংবা এরাস্তেস এবং এরোমেনোস-এর সম্পর্কগুলো উল্লেখযোগ্য। সমকামিতার প্রছন্ন উল্লেখ আছে প্রাচীন বহু সাহিত্যে। হোমারে বর্ণিত আকিলিস এবং পেট্রোক্লুসের সম্পর্ক, প্লেটোর দার্শনিক গ্রন্থ সিম্পোজিয়ামে ফায়াডেরাস, পসানিয়াস, এগাথন, অ্যারিস্টোফেনেস, এরিক্সিমাচুসের নানা বক্তব্য এবং সক্রেটিসের সাথে আলকিবিয়াডসের প্লেটোনিক সম্পর্ককে বহু বিশেষজ্ঞ সমকামিতার দৃষ্টান্ত হিসেবে হাজির করেন। খ্রীস্টপূর্ব ছয় শতকের গ্রিসের লেসবো 
দ্বীপের উল্লেখযোগ্য বাসিন্দা স্যাপো নারীদের নিয়ে, তাদের সৌন্দর্য নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন [২১]এই লেসবো থেকেই লেসবিয়ান (নারী সমকামিতা) শব্দটি এসেছে। বহু রোমান সম্রাট - যেমন জুলিয়াস সিজার, হাড্রিয়ান, কমোডাস, এলাগাবালাস, ফিলিপ দ্য এরাবিয়ান সহ অনেক সম্রাটেরই সমকামের প্রতি আসক্তি ছিলো বলে ইতিহাসে উল্লিখিত আছে[২২]রেনেসাঁর সময় বহু খ্যাতনামা ইউরোপীয় শিল্পী যেমন, দোনাতেল্লো, বত্তিচেল্লী, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এবং মাইকেলেঞ্জেলোর সমকাম প্রবণতার উল্লেখ আছে। চৈনিক সভ্যতা এবং ভারতীয় সংস্কৃতিতেও সমকামিতার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন বিষ্ণুর মোহিনী অবতাররূপে ধরাধামে এসে শিবকে আকর্ষিত করার কাহিনী এর একটি দৃষ্টান্ত। বিষ্ণু (হরি) এবং শিবের (হর) মিলনের ফসল অয়াপ্পানকে হরিহরপুত্র নামেও সম্বোধন করা হয়। এ ছাড়া অষ্টাবক্র, শিখন্ডী এবং বৃহন্নলার উদাহরণগুলো সমকামিতা এবং রূপান্তরকামিতার দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে উঠে এসেছে।

কারণ

সমকামিতার সামাজিকতা

মানবজাতির ইতিহাসের সমগ্র সময়কাল জুড়ে সমকামী সম্পর্ক ও আচরণ নিন্দিত হয়ে এসেছে। তবে কখনো-কখনো সামাজিক ঔদার্য ও আনুকূল্যও পরিলক্ষিত হয়েছে। এই প্রশংসা ও নিন্দা নির্ভর করেছে স্থানভেদে সমকামিতার বহি:প্রকাশের রূপ, সমসাময়িক বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসের প্রভাব ও সাংস্কৃতিক মানসিকতার উপর। তবে অধিকাংশ সমাজে এবং সরকার ব্যবস্থায় সমকামী আচরণকে দণ্ডণীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। উদাহরণস্বরুপ ভারত এবং বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ৭টি দেশের সংবিধানে ৩৭৭ ধারা এবং ১৯টি দেশে সমপর্যায়ের ধারা এবং ১১টি দেশে সম্পূরক ধারা মোতাবেক সমকামিতা ও পশুকামিতা প্রকৃতিবিরোধী যৌনাচার হিসেবে শাস্তিযোগ্য ও দন্ডনীয় অপরাধ। পৃথিবীর মোট ৮১ টি দেশে সমকামিতা সরকারীভাবে অবৈধ এবং ৭টি দেশে সমকামী আচরণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু আছে।
সমকামিতা আবহমানকাল ধরে অসামাজিক বিবেচিত হয়েছে যার প্রধান কারণ হলো, এটি এমন একটি যৌনাচরণ যার মাধ্যমে সন্তান জন্ম দান সম্ভব নয়, ফলে মানুষের বংশরক্ষা সম্ভব নয়। এছাড়া সকল প্রধান ধর্ম সমকামী যৌনাচরণ নিষিদ্ধ করেছে। আধুনিক সমাজেও সমকামী যৌনাচরণ একপ্রকার যৌনবিকৃতি হিসাবে সাধারণভাবে পরিগণিত। তবে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে পাশ্চাত্য মন:স্তাত্ত্বিকরা 'সমকাম প্রবণতাকে' মনোবিকলনের তালিকা থেকে বাদ দেয়। ১৯৭৫-এ যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মনস্তত্ত্ব ফেডারেশন 'সমকাম প্রবণতাকে' স্বাভাবিক বলে দাবি করে। তবে পাশ্চাত্য ও উন্নত কিছু দেশ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে সমকামী যৌনাচারণের প্রতি সাধারণ মানুষের বৈরীভাব বহাল আছে। অধিকাংশ সমাজে সমকামী যৌনাচারণ একটি অস্বাভাবিক ও নেতিবাচক প্রবৃত্তি হিসেবে লজ্জার ব্যাপার এবং ধিক্কারযোগ্য। ধর্ম এবং আইনের বিধান এবং সামাজিক অনুশাসনের কারণে কার্যকলাপ তথা সমকামী যৌনসঙ্গম একটি অবৈধ ও গুপ্ত আচরণ হিসাবেই সংঘটিত হয়।

বিগত শতাব্দীর সমকামিতা ও সমকামিতাবিরোধী আন্দোলন, রাষ্ট্রীয় সহনশীলতা এবং গে, এক্স-গে আন্দোলন

বিশ শতাব্দীর দ্বিতীয় পদে সমকামীদের ক্রমাগত আন্দোলনের কারণে সমকামিতার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় শৈথিল্য দেখা যেতে শুরু করে। পাশ্চাত্যের বেশ কিছু দেশে সমকামী যৌনাচারণের অবৈধতা তুলে নেয়া হয়। কয়েকটি দেশ সমকামী ব্যক্তিদের বিবাহ আইনসিদ্ধ ঘোষণা করে। স্টোনওয়াল দাঙ্গার পর থেকে[২৩] সমকামী ব্যক্তিরা এলজিবিটি সামাজিক আন্দোলনের সূচনা ঘটায়। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল সমকামীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ, স্বীকৃতি, আইনি অধিকারদান এবং একই সঙ্গে সমলিঙ্গের বিবাহ, দত্তকগ্রহণ, সন্তানপালন, বৈষম্যবিরোধী আইন প্রয়োগ, পরিষেবা ও স্বাস্থ্য পরিষেবায় বৈষম্যের বিরুদ্ধে অধিকার প্রদানের দাবি উত্থাপন। এছাড়া একই সময়ে বেশ কিছু প্রাক্তন সমকামী বা এক্স-গে সংগঠনের সূচনা ঘটে যারা সমকামী মনোভাব দুরীকরণ ও সমকামী প্রবনতা প্রতিকারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এগিয়ে আসে। সমকামিতার পক্ষে ও বিপক্ষে সমাজ প্রভাবক অগনিত উত্থানপতন প্রকাশ্য ও গোপনে এখনও ঘটে চলেছে।

লূত (ইসলাম)

লুত (আঃ) ( আরবি: لوطঅক্ষরীকরণ: Lūṭ ), পরিচিত লুত হলেন কুরআনে উল্লেখিত আল্লাহ প্রেরিত একজন নবী।[১][২] পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ২৫ জন নবীর মধ্যে ইসলামের একজন নবী যাকে সমকামিতায় লিপ্ত থাকা স্বীয় জাতির সতর্ককারী হিসেবে আল্লাহ তাআলা নিয়োজিত করেছিলেন| সমকামিতা ত্যাগ না করায় তারা আল্লাহর আযাবে সমূলে ধ্বংস হয়েছিলো|

কুরআনের বর্ননানুসারে লূত(আঃ) এবং তার সম্প্রদায়ের কাহিনী


পবিত্র কুরআনে ১৫,২৬,২৯ এবং ৬৬ নম্বর সূরাসমূহের বিভিন্ন অংশে লূত(আঃ) এর কাহিনী বর্ননা করেন| লূত(আঃ) এর জাতি পার্থিব উন্নতির চরম উৎকর্ষে পৌছে যাওয়ার কারণে বিলাসিতার অতিশয্যে সীমালঙ্ঘনের দিক দিয়ে তাদের পূর্বের গযবপ্রাপ্ত জাতিগুলোকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল| লূত(আঃ) এর জাতি ব্যভিচার ও অজাচার তো করতোই, তার উপর সমকামিতার মত চরম সীমালঙ্ঘনও তারাই প্রথম শুরু করে, যা তাদের পূর্বে কেউ কখনো করে নি; উপরন্তু, তারা এর ফলে বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত না হয়ে গর্বভরে তা সমাজে প্রকাশ করে বেড়াত এবং প্রকাশ্যে ও নির্লজ্জভাবে এসব নিষিদ্ধ কাজগুলো করত| আল্লাহ তাআলা তাই লূত(আঃ)কে তার জাতির জন্যে সতর্ককারী নবী মনোনীত করলেন এবং আল্লাহকে ভয় করে তাদের এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলার নির্দেশ দিলেন| লুত(আঃ) দীর্ঘ সময় ধরে সতর্ক করার পরও যখন তাদের পরিবর্তন হল না তখন আল্লাহ তাআলা চুড়ান্ত বিপর্যয়ের মাধ্যমে আকাশ থেকে একাধারে পাথর বর্ষণ করে সমগ্র জাতিকে সমুলে নিশ্চিহ্ন করে দেন| বর্ণিত আছে, বর্তমান মৃত সাগর বা ডেড সি হল লুত (আঃ) এর জাতির সেই বাসস্থান যেখানে তাদের ধ্বংস করা হয়েছিলো|

 

Labels: ,