Wednesday, April 29, 2015

সুস্থ থাকতে যোগাসন

যোগাভ্যাস করলে শরীরের গঠন, একাগ্রতা ও মনে সতেজতা ঠিক থাকে। নিয়মিত যোগাসন করতে পারেন। কয়েকটি আসন কিভাবে করবেন আর উপকারিতা কী জানালেন যোগ প্রশিক্ষক মামুনুর রশিদ

উৎকটাসন

উপকারিতা
পায়ের পেশি শক্ত করে, হিপ জয়েন্ট নমনীয় করে পায়ের বাত, আর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন রোগের ভালো উপকার পাওয়া যায়।

করার নিয়ম
দুই পায়ের পাতা ৬ ইঞ্চি ফাঁক করে দাঁড়ান। দুই হাত সোজা করে কাঁধ বরাবর রেখে সামনে আনুন। হাতের পাতা নিচের দিকে থাকবে। পায়ের পাতা মাটিতে থাকবে। এবার সোজা হয়ে পায়ের আঙুলের ওপর জোর দিয়ে বসতে থাকুন। গোড়ালি মাটি থেকে উঠে থাকবে। মনে হবে যেন একটি চেয়ারে বসে আছেন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এভাবে দিনে ৫ থেকে ১০ বার করুন।
 গুরুড়াসন

সিটআপ

উপকারিতা
মেরুদণ্ডের নমনীয়তা ধরে রাখে। তলপেটের মেদ কমায় ও মানসিক অবসাদ দূর করে।

কিভাবে করবেন
মাটিতে চিত হয়ে শুয়ে শ্বাস নিতে নিতে উঠে বসুন। একই সঙ্গে দুটি হাত মাথার ওপরে তুলুন। পায়ের গোড়ালি মাটির সঙ্গে লেগে থাকবে। তারপর নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাতের তালু দিয়ে পায়ের আঙুল ধরার চেষ্টা করুন। আপনার কপাল হাঁটু স্পর্শ করবে। না হলে দুই কনুই দিয়ে মাটি স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। আবার দুই হাত কানের পেছনে মাথার ওপর রেখে শুয়ে পড়ুন। এভাবে দিনে ৩ বার করুন।

 পবন মুক্তাসন

উপকারিতা
এই আসন করলে পেটের মধ্যে বায়ু জমতে পারে না কিংবা কোনো রকম বায়ু হলেও তা নিরাময় হয়ে যায়। হিপ জয়েন্টের নমনীয়তা বাড়ায়। তলপেট, থাই ও নিতম্বের স্থিতিস্থাপকতাও বাড়ে। হাঁপানির জন্য উপকারী।


কিভাবে করবেন
মাটিতে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার ডান হাঁটু ভেঙে ধীরে ধীরে বুকের কাছে নিয়ে আসুন। দুই হাতে তালু ও আঙুল দিয়ে হাঁটু থেকে দুই ইঞ্চি নিচে পা ধরুন। দুটো কনুই শরীরের কাছাকাছি থাকবে। কাঁধ ও মাথা মাটিতে থাকবে। থুতনি নিচের দিকে রাখুন। পায়ের পাতা শক্ত করবেন না। বাঁ পা ও মেরুদণ্ড মাটির সঙ্গে লেগে থাকবে। তলপেটে চাপ পড়বে। মনে মনে ১০ গুনুন। এবার একইভাবে বাঁ পায়ে অভ্যাস করুন। এরপর দুই পা একসঙ্গে ভাঁজ করে বুকের কাছে আনুন। এভাবে দিনে ১০ থেকে ১৫ বার করুন।

Labels:

এই সময়ে যোগব্যায়াম

ভুজঙ্গাসন শরীর ও মনের সৌন্দর্যের জন্য নিয়মিত যোগব্যায়ামের বিকল্প নেই। এমনকি এই রমজান মাসেও করতে পারেন যোগব্যায়াম। যোগব্যায়ামের ভুজঙ্গাসন ও শলভাসন করতে পারেন এ সময়। বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হারুন এ দুটি আসন অভ্যাস করার পদ্ধতিটি বলেন—
 ভুজঙ্গাসন

 এই আসনটি আপনি নিজেই ঘরে বসে করতে পারেন।

পদ্ধতি
১. প্রথমে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এ সময় দুই পায়ের পাতা জোড়া থাকবে। হাত দুটো শরীরের দুই পাশে লাগান। তখন হাতের তালু ওপরের দিকে ফেরানো থাকবে। পা, হাঁটু ও নিতম্ব আঁটসাঁট রাখুন এ সময়।
২. হাত দুটো দুই কাঁধের বরাবর নিয়ে তালুর ওপর ভর দিয়ে মাটিতে রাখুন। আঙুলগুলো সামনের দিকে ফেরান এবং গায়ে গায়ে লাগিয়ে রাখুন। এ সময় কনুই দুটোও গায়ের সঙ্গে লেগে থাকবে।
৩. হাতের তালুর ওপর অল্প ভর দিয়ে চিবুক ওপরে তুলুন।
৪. পা থেকে নাভি পর্যন্ত শরীরের নিচের অংশ মাটিতে রেখে দেহের ওপরের অংশ হাতের ওপর বেশি জোর না দিয়ে শুধু বুক ও কোমরের ওপর জোর দিয়ে ধীরে ধীরে দম নিতে নিতে ওপরে তুলুন।
৫. শুধু মেরুদণ্ডের জোরেই পিঠটাকে যতটুকু সম্ভব ধনুকের মতো বাঁকান এবং নাভি দিয়ে মাটির ওপর চাপ দিন।
৬. শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ৩০ সেকেন্ড থাকুন।
৭. শরীরটাকে ধীরে ধীরে দম ছাড়তে ছাড়তে মাটিতে নামান।
৮. হাত দুটো দুই পাশে গায়ের সঙ্গে আগের মতো লাগিয়ে রাখুন এ সময়।
৯. এবার মুখটাকে যেকোনো এক দিকে ঘুরিয়ে নিন।
১০. ৩০ সেকেন্ড শবাসনে বিশ্রাম নিন। এই হলো একবার। এভাবে তিনবার করুন।

উপকারিতা
এই আসনটি উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য উপকারী। পিঠ ও মেরুদণ্ডের ব্যথা উপশমেও সহায়ক। তা ছাড়া মেয়েদের কোমর ও পেটের ব্যথার ক্ষেত্রেও উপকারী।
 শলভাসন

এই আসনটি উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য উপকারী। পিঠ ও মেরুদণ্ডের ব্যথা উপশমেও সহায়ক। তা ছাড়া মেয়েদের কোমর ও পেটের ব্যথার ক্ষেত্রেও উপকারী।
শলভাসন
- See more at: http://www.ebanglahealth.com/3569#sthash.gGEwEABg.dpuf

ভুজঙ্গাসন করার পর শলভাসনটিও করতে পারেন।

পদ্ধতি
১. প্রথমে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন।
২. দুই হাত সোজা করে পেট আর দুই ঊরুর নিচে রাখুন।
৩. হাতের তালু দুটো মাটিতে সমান করে পাতা থাকবে এ সময়। আঙুলগুলোও গায়ে গায়ে লেগে থাকবে।
৪. এবার দুই পা সোজা করুন।
৫. ঊরু ও নিতম্বের পেশি শক্ত করে দুই হাতের তালুর ওপর অল্প ভর দিয়ে পা একটু ফাঁকা করে যতটুকু সম্ভব ধীরে ধীরে দম নিতে নিতে ওপরে তুলুন।
৬. এ অবস্থায় লক্ষ রাখুন, যাতে পায়ের আঙুল লাগানো থাকে, হাঁটু যেন বেঁকে না যায় এবং কাঁধ যেন ওপরে না উঠে যায়।
৭. পেটের ওপর ভর রাখুন।
৮. শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এ অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড অবস্থান করুন।
৯. এবার সমস্ত শরীর শিথিল করে দম ছাড়তে ছাড়তে পা দুটো মাটিতে নামান।
১০. হাত পাশে সরিয়ে উপুড় হয়ে শবাসনে ৩০ সেকেন্ড অবস্থান করুন। এভাবে তিনবার করুন।
১১. এই আসনটি করার সময় যাঁরা দুই পা একসঙ্গে তুলতে পারবেন না, তাঁরা এক পা তুলবেন। প্রথমে ডান পা তুলুন আগের মতো এবং ডান পা নামিয়ে বাঁ পায়ে একইভাবে করুন। এভাবে এক পা তুলে শলভাসন করতে পারেন।

উপকারিতা
শলভাসন অভ্যাসের মাধ্যমে কোমর ও নিতম্বের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ফেলা যায়। মেরুদণ্ড ও কোমরের ব্যথা উপশমে সহায়ক। এ ছাড়া এর মাধ্যমে হূদযন্ত্র ও হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।

লক্ষ করুন
রমজানের সময় সেহিরর পর ভোরে যোগ্যব্যায়াম না করাই ভালো। দুপুরের দিকে যোগব্যায়ামের অভ্যাস করলেই উপকার পাওয়া যায় বেশি।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১৭, ২০১০

ভুজঙ্গাসন
ভুজঙ্গাসন শরীর ও মনের সৌন্দর্যের জন্য নিয়মিত যোগব্যায়ামের বিকল্প নেই। এমনকি এই রমজান মাসেও করতে পারেন যোগব্যায়াম। যোগব্যায়ামের ভুজঙ্গাসন ও শলভাসন করতে পারেন এ সময়। বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হারুন এ দুটি আসন অভ্যাস করার পদ্ধতিটি বলেন— - See more at: http://www.ebanglahealth.com/3569#sthash.gGEwEABg.dpuf

Labels: ,

যোগব্যায়াম: শরীর ও মনের সৌন্দর্যে

সুন্দর মনের বসবাস সুস্থ দেহের মধ্যেই। মন বা শরীর যেটির সৌন্দর্যের কথাই বলি না কেন, দুটোই নির্ভর করে ব্যায়ামের ওপর। বিশেষ করে যোগব্যায়ামের মাধ্যমে দেহ ও মনের স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য সহজেই ধরে রাখা যায়। বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের ল্যাবরেটরি সার্ভিসেসের পরিচালক অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী বলেন, ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের মন সজীব হয়। যখন আমাদের মন সতেজ থাকে, তখন এমনি এমনিই আমাদের শরীরও ভালো হয়ে যায়। তাই নিরোগ দেহের জন্য সব বয়সী মানুষই যোগব্যায়াম করতে পারে। তা ছাড়া ওষুধের পাশাপাশি যোগব্যায়াম অনুষঙ্গ হিসেবে ভালো কাজে দেয়।
বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হারুন বলেন, ‘বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞান, শৈল্পিক জীবন অর্থাৎ সায়েন্স অ্যান্ড আর্ট অফ লিভিংয়ের আলোকে দেখা যায়, আমাদের স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, মেধার বিকাশ ও রোগ থেকে মুক্তির জন্য ইয়োগাচর্চার কোনো বিকল্প নেই।’ তিনি পাঁচ থেকে ৯৯ বছর বয়সী সব মানুষকে বয়স ও শরীরের অবস্থা অনুযায়ী যোগব্যায়াম করার পরামর্শ দেন। যোগব্যায়াম করার ক্ষেত্রে তিনি কিছু বিষয় খেয়াল রাখারও পরামর্শ দেন।
 যোগব্যায়াম করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে ভোরবেলা। তবে সন্ধ্যার দিকেও করা যেতে পারে।
 ব্যায়াম করার সময় পোশাক যেন ব্যায়ামোপযোগী হয়, তা খেয়াল রাখুন। একদম চাপা আবার খুব বেশি ঢিলেঢালা পোশাক নয়, বরং হালকা ঢিলেঢালা পোশাক নির্বাচন করুন।
 কোমল বা নরম কাপড়ের ট্রাউজার এবং সুতি বা কোমল কাপড়ের ফতুয়া বা টি-শার্ট পরতে পারেন।
 ব্যায়াম করার সময় ব্রেসলেট, চুড়ি, আংটি, নূপুর, চেইন—এ ধরনের অলংকার খুলে নিলে আরাম বোধ করবেন।
 ছেলেদের চুল সামনে এলে ব্যায়ামের সময়টায় তা রাউন্ড ব্যান্ড দিয়ে আটকে নিতে পারেন। আর মেয়েরা চুলটা খোঁপা করে বা ওপরে উঠিয়ে বেঁধে নিন।
 যোগব্যায়াম করার সময় অন্য সব চিন্তা থেকে নিজেকে একটু দূরে সরিয়ে রাখুন। কেবল ব্যায়ামের দিকেই মনোযোগ দিন।
 যোগব্যায়ামটা শুরু করুন খুব সহজ কোনো আসন থেকে। তারপর ধীরে ধীরে কঠিন আসলগুলো চর্চা করে ফেলুন।
 যোগব্যায়ামের সব আসনই যে আপনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত হবে, তা নয়। যেটি করতে বেশি কষ্ট হচ্ছে, সেটি বাদ দিন।
 যে স্থানটিতে যোগব্যায়াম করবেন সেটি যেন যথেষ্ট খোলামেলা হয় এবং পর্যাপ্ত আলোবাতাস থাকে।
 ব্যায়ামের ফলে কোনো শারীরিক সমস্যা হচ্ছে কি না, সেটি খেয়াল রাখুন।
 সঠিক পদ্ধতিতে যোগব্যায়াম করুন। অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের কাছে চর্চা করতে পারেন অথবা কোনো প্রশিক্ষকের দেওয়া পদ্ধতির ধারাগুলো খুব ভালোভাবে খেয়াল করে পরে নিজে নিজে চর্চা করুন।
আমাদের নকশার নিয়মিত পাঠকদের জন্য এবারের আয়োজনে রইল যোগব্যায়ামের একটি আসন— ‘ত্রিকোণাসন’। এটি যোগব্যায়ামের খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আসনের মধ্যে একটি। এ আসনটির মাধ্যম আপনি কোমরের দুই পাশের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ফেলতে পারবেন। আপনার দেহের সুন্দর একটি কাঠামো গঠনে সহায়ক এ আসনটি। যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তারাও এটি অভ্যাস করলে উপকার পাবেন।
বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হারুন জানিয়েছেন ত্রিকোণাসনের সঠিক নিয়মটি। আপনি নিজে ঘরে বসেই করে নিতে পারেন এ অভ্যাসটি।
 প্রথমে তাড়াসনে দাঁড়ান।
 আপনার ডান পা দেড় ফুট ডান দিকে ও বাঁ পা দেড় ফুট বাঁ-দিকে নিন।
 দুই হাত সোজা করে দুই পাশের কাঁধ সমান উঁচুতে তুলুন। খেয়াল রাখুন, আপনার হাতের তালু দুটো যেন নিচের দিকে একই সরলরেখায় থাকে।
 ডান পায়ের পাতা ডান দিকে ৯০ ডিগ্রি এবং বাঁ পায়ের পাতা ৩০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি ডান দিকে ঘুরিয়ে নিন। এ সময় পায়ের পাতাটি যেন টানটান ও আঁটসাট থাকে।
 এবার নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে শরীরটা কোমর থেকে ওপরের অংশে ধীরে ধীরে ডান দিকে বাঁকান এবং ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের গোড়ালি ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি বাম হাত সোজা টানটান করে কাঁধের সঙ্গে এক সরলরেখায় রাখুন। আপনার দৃষ্টি এ সময় বাঁ-হাতের বুড়ো আঙ্গুলের দিকে দিন।
 আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন।
 নিঃশ্বাস নিতে নিতে কোমরের ওপরের অংশ আগের মতো সোজা করুন ও ডান হাতটি তুলে পায়ের পাতা আগের মতো সোজা করুন। দুই হাত একই সরলরেখায় আনুন।
 এবার একইভাবে বাঁ-দিকে করুন ও এরপর ৩০ সেকেন্ড হাত-পা সোজা করে নড়াচড়া ছাড়া অসমান্তরালভাবে মাটিতে শুয়ে থাকুন ৩০ সেকেন্ড। এটি হচ্ছে শবাসন। পুরো প্রক্রিয়াটি এভাবে তিনবার করুন।

খেয়াল রাখুন
এই যোগব্যায়ামটি করার সময় আপনি আসনে গিয়ে যতক্ষণ স্থির হয়ে থাকবেন, ঠিক একই সময় নিয়ে শবাসনে বিশ্রাম নিন।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৩, ২০১০
সুন্দর মনের বসবাস সুস্থ দেহের মধ্যেই। মন বা শরীর যেটির সৌন্দর্যের কথাই বলি না কেন, দুটোই নির্ভর করে ব্যায়ামের ওপর। বিশেষ করে যোগব্যায়ামের মাধ্যমে দেহ ও মনের স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য সহজেই ধরে রাখা যায়। বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের ল্যাবরেটরি সার্ভিসেসের পরিচালক অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী বলেন, ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের মন সজীব হয়। যখন আমাদের মন সতেজ থাকে, তখন এমনি এমনিই আমাদের শরীরও ভালো হয়ে যায়। তাই নিরোগ দেহের জন্য সব বয়সী মানুষই যোগব্যায়াম করতে পারে। তা ছাড়া ওষুধের পাশাপাশি যোগব্যায়াম অনুষঙ্গ হিসেবে ভালো কাজে দেয়।
বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হারুন বলেন, ‘বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞান, শৈল্পিক জীবন অর্থাৎ সায়েন্স অ্যান্ড আর্ট অফ লিভিংয়ের আলোকে দেখা যায়, আমাদের স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, মেধার বিকাশ ও রোগ থেকে মুক্তির জন্য ইয়োগাচর্চার কোনো বিকল্প নেই।’ তিনি পাঁচ থেকে ৯৯ বছর বয়সী সব মানুষকে বয়স ও শরীরের অবস্থা অনুযায়ী যোগব্যায়াম করার পরামর্শ দেন। যোগব্যায়াম করার ক্ষেত্রে তিনি কিছু বিষয় খেয়াল রাখারও পরামর্শ দেন।
 যোগব্যায়াম করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে ভোরবেলা। তবে সন্ধ্যার দিকেও করা যেতে পারে।
 ব্যায়াম করার সময় পোশাক যেন ব্যায়ামোপযোগী হয়, তা খেয়াল রাখুন। একদম চাপা আবার খুব বেশি ঢিলেঢালা পোশাক নয়, বরং হালকা ঢিলেঢালা পোশাক নির্বাচন করুন।
 কোমল বা নরম কাপড়ের ট্রাউজার এবং সুতি বা কোমল কাপড়ের ফতুয়া বা টি-শার্ট পরতে পারেন।
 ব্যায়াম করার সময় ব্রেসলেট, চুড়ি, আংটি, নূপুর, চেইন—এ ধরনের অলংকার খুলে নিলে আরাম বোধ করবেন।
 ছেলেদের চুল সামনে এলে ব্যায়ামের সময়টায় তা রাউন্ড ব্যান্ড দিয়ে আটকে নিতে পারেন। আর মেয়েরা চুলটা খোঁপা করে বা ওপরে উঠিয়ে বেঁধে নিন।
 যোগব্যায়াম করার সময় অন্য সব চিন্তা থেকে নিজেকে একটু দূরে সরিয়ে রাখুন। কেবল ব্যায়ামের দিকেই মনোযোগ দিন।
 যোগব্যায়ামটা শুরু করুন খুব সহজ কোনো আসন থেকে। তারপর ধীরে ধীরে কঠিন আসলগুলো চর্চা করে ফেলুন।
 যোগব্যায়ামের সব আসনই যে আপনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত হবে, তা নয়। যেটি করতে বেশি কষ্ট হচ্ছে, সেটি বাদ দিন।
 যে স্থানটিতে যোগব্যায়াম করবেন সেটি যেন যথেষ্ট খোলামেলা হয় এবং পর্যাপ্ত আলোবাতাস থাকে।
 ব্যায়ামের ফলে কোনো শারীরিক সমস্যা হচ্ছে কি না, সেটি খেয়াল রাখুন।
 সঠিক পদ্ধতিতে যোগব্যায়াম করুন। অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের কাছে চর্চা করতে পারেন অথবা কোনো প্রশিক্ষকের দেওয়া পদ্ধতির ধারাগুলো খুব ভালোভাবে খেয়াল করে পরে নিজে নিজে চর্চা করুন।
আমাদের নকশার নিয়মিত পাঠকদের জন্য এবারের আয়োজনে রইল যোগব্যায়ামের একটি আসন— ‘ত্রিকোণাসন’। এটি যোগব্যায়ামের খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আসনের মধ্যে একটি। এ আসনটির মাধ্যম আপনি কোমরের দুই পাশের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ফেলতে পারবেন। আপনার দেহের সুন্দর একটি কাঠামো গঠনে সহায়ক এ আসনটি। যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তারাও এটি অভ্যাস করলে উপকার পাবেন।
বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হারুন জানিয়েছেন ত্রিকোণাসনের সঠিক নিয়মটি। আপনি নিজে ঘরে বসেই করে নিতে পারেন এ অভ্যাসটি।
 প্রথমে তাড়াসনে দাঁড়ান।
 আপনার ডান পা দেড় ফুট ডান দিকে ও বাঁ পা দেড় ফুট বাঁ-দিকে নিন।
 দুই হাত সোজা করে দুই পাশের কাঁধ সমান উঁচুতে তুলুন। খেয়াল রাখুন, আপনার হাতের তালু দুটো যেন নিচের দিকে একই সরলরেখায় থাকে।
 ডান পায়ের পাতা ডান দিকে ৯০ ডিগ্রি এবং বাঁ পায়ের পাতা ৩০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি ডান দিকে ঘুরিয়ে নিন। এ সময় পায়ের পাতাটি যেন টানটান ও আঁটসাট থাকে।
 এবার নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে শরীরটা কোমর থেকে ওপরের অংশে ধীরে ধীরে ডান দিকে বাঁকান এবং ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের গোড়ালি ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি বাম হাত সোজা টানটান করে কাঁধের সঙ্গে এক সরলরেখায় রাখুন। আপনার দৃষ্টি এ সময় বাঁ-হাতের বুড়ো আঙ্গুলের দিকে দিন।
 আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন।
 নিঃশ্বাস নিতে নিতে কোমরের ওপরের অংশ আগের মতো সোজা করুন ও ডান হাতটি তুলে পায়ের পাতা আগের মতো সোজা করুন। দুই হাত একই সরলরেখায় আনুন।
 এবার একইভাবে বাঁ-দিকে করুন ও এরপর ৩০ সেকেন্ড হাত-পা সোজা করে নড়াচড়া ছাড়া অসমান্তরালভাবে মাটিতে শুয়ে থাকুন ৩০ সেকেন্ড। এটি হচ্ছে শবাসন। পুরো প্রক্রিয়াটি এভাবে তিনবার করুন।
খেয়াল রাখুন
এই যোগব্যায়ামটি করার সময় আপনি আসনে গিয়ে যতক্ষণ স্থির হয়ে থাকবেন, ঠিক একই সময় নিয়ে শবাসনে বিশ্রাম নিন।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৩, ২০১০
- See more at: http://www.ebanglahealth.com/3564#sthash.FTCFqMRT.dpuf
সুন্দর মনের বসবাস সুস্থ দেহের মধ্যেই। মন বা শরীর যেটির সৌন্দর্যের কথাই বলি না কেন, দুটোই নির্ভর করে ব্যায়ামের ওপর। বিশেষ করে যোগব্যায়ামের মাধ্যমে দেহ ও মনের স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য সহজেই ধরে রাখা যায়। বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের ল্যাবরেটরি সার্ভিসেসের পরিচালক অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী বলেন, ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের মন সজীব হয়। যখন আমাদের মন সতেজ থাকে, তখন এমনি এমনিই আমাদের শরীরও ভালো হয়ে যায়। তাই নিরোগ দেহের জন্য সব বয়সী মানুষই যোগব্যায়াম করতে পারে। তা ছাড়া ওষুধের পাশাপাশি যোগব্যায়াম অনুষঙ্গ হিসেবে ভালো কাজে দেয়।
বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হারুন বলেন, ‘বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞান, শৈল্পিক জীবন অর্থাৎ সায়েন্স অ্যান্ড আর্ট অফ লিভিংয়ের আলোকে দেখা যায়, আমাদের স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, মেধার বিকাশ ও রোগ থেকে মুক্তির জন্য ইয়োগাচর্চার কোনো বিকল্প নেই।’ তিনি পাঁচ থেকে ৯৯ বছর বয়সী সব মানুষকে বয়স ও শরীরের অবস্থা অনুযায়ী যোগব্যায়াম করার পরামর্শ দেন। যোগব্যায়াম করার ক্ষেত্রে তিনি কিছু বিষয় খেয়াল রাখারও পরামর্শ দেন।
 যোগব্যায়াম করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে ভোরবেলা। তবে সন্ধ্যার দিকেও করা যেতে পারে।
 ব্যায়াম করার সময় পোশাক যেন ব্যায়ামোপযোগী হয়, তা খেয়াল রাখুন। একদম চাপা আবার খুব বেশি ঢিলেঢালা পোশাক নয়, বরং হালকা ঢিলেঢালা পোশাক নির্বাচন করুন।
 কোমল বা নরম কাপড়ের ট্রাউজার এবং সুতি বা কোমল কাপড়ের ফতুয়া বা টি-শার্ট পরতে পারেন।
 ব্যায়াম করার সময় ব্রেসলেট, চুড়ি, আংটি, নূপুর, চেইন—এ ধরনের অলংকার খুলে নিলে আরাম বোধ করবেন।
 ছেলেদের চুল সামনে এলে ব্যায়ামের সময়টায় তা রাউন্ড ব্যান্ড দিয়ে আটকে নিতে পারেন। আর মেয়েরা চুলটা খোঁপা করে বা ওপরে উঠিয়ে বেঁধে নিন।
 যোগব্যায়াম করার সময় অন্য সব চিন্তা থেকে নিজেকে একটু দূরে সরিয়ে রাখুন। কেবল ব্যায়ামের দিকেই মনোযোগ দিন।
 যোগব্যায়ামটা শুরু করুন খুব সহজ কোনো আসন থেকে। তারপর ধীরে ধীরে কঠিন আসলগুলো চর্চা করে ফেলুন।
 যোগব্যায়ামের সব আসনই যে আপনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত হবে, তা নয়। যেটি করতে বেশি কষ্ট হচ্ছে, সেটি বাদ দিন।
 যে স্থানটিতে যোগব্যায়াম করবেন সেটি যেন যথেষ্ট খোলামেলা হয় এবং পর্যাপ্ত আলোবাতাস থাকে।
 ব্যায়ামের ফলে কোনো শারীরিক সমস্যা হচ্ছে কি না, সেটি খেয়াল রাখুন।
 সঠিক পদ্ধতিতে যোগব্যায়াম করুন। অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের কাছে চর্চা করতে পারেন অথবা কোনো প্রশিক্ষকের দেওয়া পদ্ধতির ধারাগুলো খুব ভালোভাবে খেয়াল করে পরে নিজে নিজে চর্চা করুন।
আমাদের নকশার নিয়মিত পাঠকদের জন্য এবারের আয়োজনে রইল যোগব্যায়ামের একটি আসন— ‘ত্রিকোণাসন’। এটি যোগব্যায়ামের খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আসনের মধ্যে একটি। এ আসনটির মাধ্যম আপনি কোমরের দুই পাশের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ফেলতে পারবেন। আপনার দেহের সুন্দর একটি কাঠামো গঠনে সহায়ক এ আসনটি। যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তারাও এটি অভ্যাস করলে উপকার পাবেন।
বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হারুন জানিয়েছেন ত্রিকোণাসনের সঠিক নিয়মটি। আপনি নিজে ঘরে বসেই করে নিতে পারেন এ অভ্যাসটি।
 প্রথমে তাড়াসনে দাঁড়ান।
 আপনার ডান পা দেড় ফুট ডান দিকে ও বাঁ পা দেড় ফুট বাঁ-দিকে নিন।
 দুই হাত সোজা করে দুই পাশের কাঁধ সমান উঁচুতে তুলুন। খেয়াল রাখুন, আপনার হাতের তালু দুটো যেন নিচের দিকে একই সরলরেখায় থাকে।
 ডান পায়ের পাতা ডান দিকে ৯০ ডিগ্রি এবং বাঁ পায়ের পাতা ৩০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি ডান দিকে ঘুরিয়ে নিন। এ সময় পায়ের পাতাটি যেন টানটান ও আঁটসাট থাকে।
 এবার নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে শরীরটা কোমর থেকে ওপরের অংশে ধীরে ধীরে ডান দিকে বাঁকান এবং ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের গোড়ালি ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি বাম হাত সোজা টানটান করে কাঁধের সঙ্গে এক সরলরেখায় রাখুন। আপনার দৃষ্টি এ সময় বাঁ-হাতের বুড়ো আঙ্গুলের দিকে দিন।
 আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন।
 নিঃশ্বাস নিতে নিতে কোমরের ওপরের অংশ আগের মতো সোজা করুন ও ডান হাতটি তুলে পায়ের পাতা আগের মতো সোজা করুন। দুই হাত একই সরলরেখায় আনুন।
 এবার একইভাবে বাঁ-দিকে করুন ও এরপর ৩০ সেকেন্ড হাত-পা সোজা করে নড়াচড়া ছাড়া অসমান্তরালভাবে মাটিতে শুয়ে থাকুন ৩০ সেকেন্ড। এটি হচ্ছে শবাসন। পুরো প্রক্রিয়াটি এভাবে তিনবার করুন।
খেয়াল রাখুন
এই যোগব্যায়ামটি করার সময় আপনি আসনে গিয়ে যতক্ষণ স্থির হয়ে থাকবেন, ঠিক একই সময় নিয়ে শবাসনে বিশ্রাম নিন।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৩, ২০১০
- See more at: http://www.ebanglahealth.com/3564#sthash.FTCFqMRT.dpuf

Labels: ,

জেনেনিন কিছু ভেষজ উদ্ভিদের ঔষধী গুন

আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে। এর প্রায় সকলই মানুষের কল্যানে আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু কোন উদ্ভিদে কি গুন তা আমরা সবাই জানি না। প্রত্যকটি ভেজষ উদ্ভিদেরই কিছু না কিছু ঔষধী গুন রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাড়ে পাঁচ শ ঔষধি উদ্ভিদ প্রজাতি বা ভেষজ। ঔষুধ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ভেষজ উদ্ভিদের চাহিদা সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ইউনানি, আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি বিউটি পার্লার ও প্রসাধনীতে এখন প্রচুর ভেষজ উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাংলাদেশে স্বল্পসময়ে কম জমিতে অধিক হারে উৎপাদন করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব_এমন ঔষধি রয়েছে ২৫টির মতো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে_পুদিনা, ঘৃতকুমারী, থানকুনি, অর্জুন, আমলকী, হরীতকী, কালমেঘ, নিম, বহেড়া, কালিজিরা, বসাক, উলটকমল, অশ্বগন্ধা, সর্পগন্ধা, তুলসী, মেথি, সোনাপাতা, যষ্টিমধু, বাবলা, শতমূলী, ইসবগুল, আদা, রসুন, হলুদ, পিঁয়াজ ইত্যাদি।

নীচে কিছু ভেজষ উদ্ভিদের ঔষধী গুনাগন তুলে ধরা হলো:

বাসক:

বাসক একটি ভারত উপমহাদেশীয় ভেষজ উদ্ভিদ। আর্দ্র, সমতলভূমিতে এটি বেশী জন্মে। লোকালয়ের কাছেই জন্মে বেশী। হালকা হলুদে রংয়ের ডালপালায়ক্ত ১ থেকে ২ মি. উঁচু গাছ, ঋতুভেদে সর্ব্বদাই প্রায় সবুজ থাকে। বল্লমাকারের পাতা বেশ বড়। ফুল ঘন, ছোট স্পাইকের ওপর ফোটে। স্পাইকের বৃন্ত পাতার চেয়ে ছোট। স্পাইকের ওপর পাতার আকারে উপপত্র থাকে যার গায়ে ঘন এবং মোটা শিরা থাকে। ফুলের দল (কোরোল্লা বা পত্রমূলাবর্ত) সাদা বর্ণ। তার ওপর বেগুনী দাগ থাকে। ফল সুপারি আকৃতির; বীজে ভর্তি।
বাসকের ঔষধী গুণ:
তাজা অথবা শুকানো পাতা ওষুধের কাজে লাগে। বাসকের পাতায় “ভাসিসিন” নামীর ক্ষারীয় পদার্থ এবং তেল থাকে। শ্বাসনালীর লালাগ্রন্থিকে সক্রিয় করে বলে বাসক শ্লেষ্মানাশক হিসেবে প্রসিদ্ধ । বাসক পাতার নির্যাস, রস বা সিরাপ শ্লেষ্মা তরল করে নির্গমে সুবিধা ক’রে দেয় বলে সর্দি, কাশি এবং শ্বাসনালীর প্রদাহমূলক ব্যাধিতে বিশেষ উপকারী। তবে অধিক মাত্রায় খেলে বমি হয়, অন্তত: বমির ভাব বা নসিয়া হয়, অস্বস্তি হয়। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় বাসকের ভেষজ গুণাবলি প্রমাণিত হয়েছে।
এর মূল, পাতা, ফুল, ছাল সবই ব্যবহার হয়।
প্রয়োগ:
১. বাসক পাতার রস ১-২ চামচ হাফ থেকে এক চামচ মধুসহ খেলে শিশুর সদির্কাশি উপকার পাওয়া যায়।
২. বাসক পাতার রস স্নানের আধ ঘন্টা আগে মাথায় কয়েকদিন মাখলে উকুন মরে যায়। আমবাত ও ব্রণশোথে (ফোঁড়ার প্রাথমিক অবস্থা) বাসক পাতা বেটে প্রলেপ দিলে ফোলা ও ব্যথা কমে যায়।
৩. যদি বুকে কফ জমে থাকে এবং তার জন্যে শ্বাসকষ্ট হলে বা কাশি হলে বাসক পাতার রস ১-২ চামচ এবং কন্টিকারীরস ১-২ চামচ, ১ চামচ মধুসহ খেলে কফ সহজে বেরিয়ে আসে।
৪. প্রস্রাবে জ্বালা-যন্ত্রনা থাকলে বাসকের ফুল বেটে ২-৩ চামচ মিছরি ১-২ চামচ সরবত করে খেলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।
৫. জ্বর হলে বা অল্প জ্বর থাকলে বাসকের মূল ৫-১০ গ্রাম ধুয়ে থেঁতো করে ১০০ মিলি লিটার জলে ফোটাতে হবে।
৬. ২৫ মিলি লিটার থাকতে নামিয়ে তা ছেঁকে নিয়ে দিনে ২ বার করে খেলে জ্বর এবং কাশি দুইই চলে যায়।
৭. বাসকের কচিপাতা ১০-১২ টি এক টুকরো হলুদ একসঙ্গে বেটে দাদ বা চুলকানিতে লাগলে কয়েকদিনের মধ্যে তা সেরে যায়।
৮. বাসকপাতা বা ফুলের রস ১-২ চামচ মধু বা চিনি ১চামচসহ প্রতিদিন খেলে জন্ডিস রেগে উপকার পাওয়া যায়।
৯. পাইরিয়া বা দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে বাসক পাতা ২০ টি থেঁতো করে ২ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় কুলকুচি করলে এই রোগে উপকার পাওয়া যায়।
ভেষজ দাওয়াই:
* শিশুর পেটে কৃমি থাকলে বাসকের ছালের ক্বাথ খাওয়ালে এর উগ্র তিক্ত স্বাদ কৃমি বের হয়ে যায়।
* যাদের হাঁপানির টান আছে তারা বাসক পাতা শুকনো করে, ওই পাতা বিড়ি বা চুরুটের মতো পাকিয়ে এর সাহায্যে ধূমপান করলে শ্বাসকষ্ট প্রশমিত হয়।
* যাদের গায়ে ঘামের গন্ধ হয় তারা বাসক পাতার রস গায়ে লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে।
*বাসকপাতার রস ও শঙ্খচূর্ণ মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে রং ফরসা হবে।
* এক কলসি পানিতে তিন-চারটি বাসকপাতা ফেলে তিন-চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেই পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়। এরপর ব্যবহার করতে পারেন।
* পাতার রস নিয়মিত খেলে খিঁচুনি রোগ দূর হয়ে যায়।
* বাসক পাতার রস মাথায় লাগালের উকুন চলে যায়।
* বাসক পাতা বা ফুলের রস এক বা দুই চামচ মধু বা চিনি দিয়ে খেলে জন্ডিস ভালো হয়।
* শরীরে দাদ থাকলে বাসক পাতার রস লাগালে ভালো হয়ে যায়।
অন্যান্য উপকারিতা:
বাসকের পাতা সবুজ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং পাতা থেকে হলদে রং পাওয়া যায়। বাসক পাতায় এমন কিছু ক্ষারীয় পদার্থ আছে যায় ফলে ছত্রাক জন্মায় না এবং পোকামাকড় ধরে না বলে ফল প্যাকিং এবং সংরক্ষণ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। পাতায় কিছু দুর্গন্ধ আছে বলে পগুরা মুখ দেয় না। সেই কারণে চাষ আবাদের জন্য জমি উদ্ধারের কাজে বাসকের পাতা বিশেষ উপকারী।

তেলাকুচা

তেলাকুচা একপ্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে একে ‘কুচিলা’, তেলা, তেলাকচু, তেলাহচি, তেলাচোরা কেলাকচু, তেলাকুচা বিম্বী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। অনেক অঞ্চলে এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। গাছটির ভেষজ ব্যবহারের জন্য এর পাতা, লতা, মূল ও ফল ব্যবহৃত হয়। এটি লতানো উদ্ভিদ। এটি গাঢ় সবুজ রঙের নরম পাতা ও কাণ্ডবিশিষ্ট একটি লতাজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। লতার কাণ্ড থেকে আকশীর সাহায্যে অন্য গাছকে জড়িয়ে উপরে উঠে। পঞ্চভূজ আকারের পাতা গজায়, পাতা ও লতার রং সবুজ। এর ফল ও কচি ডগা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেখানে। তেলাকুচায় প্রচুর বিটা-ক্যারোটিন আছে।
ঔষধি গুণাগুণ:
তেলাকুচা ফলে আছে ‘মাস্ট সেল স্টেবিলাইজিং’, ‘এনাফাইলেকটিক-রোধী’ এবং ‘এন্টিহিস্টামিন’ জাতীয় উপাদান। কবিরাজী চিকিৎসায় তেলাকুচা বেশ কিছু রোগে ব্যবহৃত হয়, যেমন- কুষ্ঠ, জ্বর, ডায়াবেটিস, শোথ (edema), হাঁপানি, ব্রংকাইটিস ও জন্ডিস।

কালমেঘ:

কালমেঘ একটি ভেষজ উদ্ভিদ। ১ সে.মি. লম্বা ফুলের রং গোলাপী। দেড় থেকে দু সে.মি. লম্বা ফল অনেকটা চিলগোজার মতন দেখতে।শিকড় ব্যতীত কালমেঘ গাছটির সব অংশই ঔষুধের কাজে লাগে। কালমেঘ অত্যন্ত তেতো এবং পুষ্টিকর। মানব দেহের রোগপ্রতিরোধী শক্তি বৃদ্ধি করে। জ্বর, কৃমি, আমাশয়, সাধারণ শারীরিক দুর্বলতা এবং বায়ু আধিক্যে কালমেঘ অত্যন্ত উপকারী।
শিশুদের যকৃৎ রোগে এবং হজমের সমস্যায় কালমেঘ ফলপ্রদ। কালমেঘের পাতা থেকে তৈরী আলুই পশ্চিম বাংলার ঘরোয়া ঔষুধ যা পেটের অসুখে শিশুদের দেওয়া হয়। টাইফয়েড রোগে এবং জীবানুরোধে কালমেঘ কার্য্করী। সাধারণ একটা বিশ্বাস ছিল যে সাপের কামড়ে কালমেঘ খুব উপকারী। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে কথাটা ভুল। কোথাও কোথাও কালমেঘ গাছ বেটে সরষের তেলে চুবিয়ে নিয়ে চুলকানিতে লাগানো হয়। গাছের পাতার রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও লিভার রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
কালমেঘ গাছের পাতার রস জ্বর, কৃমি, অজীর্ণ, লিভার প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা শিশুদের বদহজম ও লিভারের সমস্যায় প্রাচীনকাল থেকে এটি ব্যবহার করছে। এ গাছের রস রক্ত পরিষ্কারক, পাকস্থলী ও যকৃতের শক্তিবর্ধক ও রেচক হিসেবেও কাজ করে। আবার এ গাছের পাতা সিদ্ধ করে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলে ঘা-পাঁচড়া জাতীয় রোগ দূর হয় বলে আদিবাসীদের বিশ্বাস।

অর্জুন:

ঔষধি গুন :
ভেষজশাত্রে ঔষধি গাছ হিসাবে আর্জুনের ব্যবহার অগনিত।বলা হয়ে থাকে, বাড়িতে একটি অর্জুন গাছ থাকা আর এক জন ডাক্তার থাকা একই কথা।এর ঔষধি গুন মানবসমাজের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে সুপ্রাচীন কাল থেকেই।শরীরের বল ফিরিয়ে আনা এবং রণাঙ্গনে মনকে উজ্জীবিত রাখতে অর্জুন ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে মহাভারত ও বেদ-সংহিতায়।তার পর যত দিন যাচ্ছে ততই অর্জুনের উপকারী দিক উদ্ভাবিত হচ্ছে।
* যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ উচ্চ রাক্তচাপ নাই, তাদের পক্ষে অর্জুন ছাল কাঁচা হলে ১০-১২ গ্রাম, শুকনা হলে ৫-৬ গ্রাম একটু ছেঁচে ২৫০ মিলি দুধ ও ৫০০ মি লি জল এর সাথে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে আনুমানিক ১২৫ মিলি থাকতে ছেঁকে বিকেলবেলা খেলে বুক ধড়ফড়ানি কমে যায়।তবে পেটে যাতে বায়ু না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
* অর্জুন ছাল বেটে খেলে হৃৎপিন্ডের পেশি শক্তিশালী হয়, হৃৎপিন্ডের ক্ষমতা বাড়ে।এটি রক্তের কোলেষ্টরল কমায় এবং ফলত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে।
* বিচুর্ণ ফল মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং লিভারসিরোসিসের টনিক হিসাবে ব্যাবহৃত হয়।
* অর্জুনের ছালে ট্যানিন রয়েছে, এ টানিন মুখ,জিহ্বা ও মাড়ীর প্রদাহের চিকিৎসায় ব্যাবহার হয়।এটি মাঢ়ীঢ় রক্তপাত বন্ধ করে এবং শরীরে ক্ষত, খোস পাঁচড়া দেখা দিলে অর্জুনের ছাল বেটে লাগালে সেরে যায়।
* অর্জুনের ছাল হাঁপানি, আমাশয়, ঋতুস্রাবজনিত সমস্যা, ব্যথ্যা ,প্রদর ইত্যাদি চিকিৎসায়ও উপকারী।
* এটি সংকোচ ও জ্বর নিবারক হিসাবেও কাজ করে।
* এ ছাড়া অর্জুনে saponin রয়েছে, একটি যৌন উদ্দীপনা বাড়ায়।তাই চর্ম ও যৌন রোগে অর্জুন ব্যাবহ্রত হয়।যৌন উদ্দীপনা বাড়াতেও অর্জুনের ছালের রস ব্যাবহার হয়।
* অর্জুনের ছালে essential oil রয়েছে তাই অর্জুন খাদ্যা হজম ক্ষমতা বাড়ায়।খাদ্যাতন্ত্রের ক্রিয়া স্বভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
* ক্যান্সার কোষের বর্ধন রোধকারী gallic acid,ethy gallae ও lutenolin রয়েছে অর্জুন ছালে। এ কারনে এটি ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যাহারের সুযোগ রয়েছে।

অশ্বগন্ধা:

অশ্বগন্ধা আমাদের দেশের ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম। গাছের গন্ধ ঘোড়া বা অশ্ব এর মত বলেই সংস্কৃতে একে অশ্বগন্ধা বলে। বাংলায় ও আমার অশ্বগন্ধা-ই বলে থাকি। শক্তিবর্ধক হিসেবে এবং এ্যাফ্রোডেসিয়াক হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলেই ইংরেজিতে একে Indian Ginseng বলে। Solanaceae ফ্যামিলির গাছ অশ্বগন্ধার বৈঙ্গানিক নাম Withania somnifera (L.) Dunal. Withanine নামক রাসায়নিক উপাদান এই গাছ থেকে আলাদা করার কারণে এই গাছের নামে Withania নামকরণ করা হয়েছে। আর somnifera এসেছে somnifer থেকে যার মানে নিদ্রা আনয়নকারী। মূল এবং পাতা স্নায়ুর বিভিন্ন রোগে ব্যবহৃত হয়। এ গাছ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকায় পাওয়া যায়। নিদ্রা আনয়নকারী ঔষধ হিসেবে প্রচীন মেসোপটেমিয়া এবং মিশরে এর ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।

তুলসী:

তুলসী একটি ঔষধিগাছ। তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। সুগন্ধিযুক্ত, কটু তিক্তরস, রুচিকর। এটি সর্দি, কাশি, কৃমি ও বায়ুনাশক এবং মুত্রকর, হজমকারক ও এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে বিশেষ করে কফের প্রাধান্যে যে সব রোগ সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে তুলসী বেশ ফলদায়ক।
ঔষধিগুণ:
শিশুদের সর্দি কাশির জন্য এটি একটি মহা ঔষধ হলেও যে কোন বয়সের মানুষই এ থেকে উপকার পেয়ে থাকে । শুধু পুজো-অর্চনাতেই লাগে না ৷ তুলসী পাতার অনেক গুণ রয়েছে ৷
* জ্বর হলে জলের মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করুন ৷ অথবা তিনটে দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন ৷ দিনের মধ্যে তিন-চার বার ঐ বড়িটা জলের সঙ্গে খান ৷ জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।
* কাশি যদি না কমে সেই ক্ষেত্রে তুলসী পাতা এবং আদা পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান ৷ এতে উপকার পাবেন ৷
* পেট খারাপ হলে তুলসীর ১০ টা পাতা সামান্য জিরের সঙ্গে পিষে ৩-৪ বার খান ৷ পায়খানা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে, মানে পায়খানার ওই সমস্যাটা আর কি!
* মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪-৫ বার তুলসী পাতা চেবান ৷
* ঘা যদি দ্রুত কমাতে চান তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান, কমে যাবে ৷
* শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান, এতে জ্বালা কমবে ৷ পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে ৷ সেখানে কোন দাগ থাকবে না ৷
* ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য, এছাড়াও ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রোন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান ৷
* বুদ্ধি এবং স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ৫-৭ টা তুলসী পাতা চিবান ৷
* প্রস্রাবে জ্বালা হলে তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন ৷ উপকার পাবেন ৷
* ত্বকের সমস্যা দূর করতে তিল তেলের মধ্যে তুলসী পাতা ফেলে হালকা গরম করে ত্বকে লাগান ৷
ব্যবহার:
আমাদের দেশে ছেলেমেয়েদের সর্দি-কাশিতে তুলসী পাতার রস ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়। এসব ক্ষেত্রে কয়েকটি তাজা তুলসী পাতার রসের সাথে একটু আদার রস ও মধুসহ খাওয়ানো হয়। বাচ্চাদের সর্দি-কাশিতে এটি বিশেষ ফলপ্রদ। তাজা তুলসী পাতার রস মধু, আদা ও পিঁয়াজের রসের সাথে এক সাথে পান করলে সর্দি বের হয়ে যায় এবং হাপানিতে আরাম হয়।
ঔষধি গুণাগুণ 
* পেট কামড়ানো, কাশি: তুলসী পাতার রসে মধু মিশিয়ে খাওয়ালে বাচ্চাদের পেট কামড়ানো, কাশি ও লিভার দোষে উপকার পাওয়া যায়।
* ঘামাচি ও চুলকানি: তুলসী পাতা ও দুর্বার ডগা বেটে গায়ে মাখলে ঘামাচি ও চুলকানি ভাল হয়।
দাদ ও অন্যান্য চর্মরোগে: স্থানীয়ভাবে তুলসী পাতার রস দাদ ও অন্যান্য চর্মরোগে ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। পাতার রস ফোঁটা ফোঁটা করে কানে দিলে কানের ব্যথা সেরে যায়।
* ম্যালেরিয়া: পাতা ও শিকড়ের ক্বাথ ম্যালেরিয়া জ্বরের জন্য বেশ উপকারী। ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে প্রতিদিন সকালে গোল মরিচের সাথে তুলসী পাতার রস খেতে দেয়া হয়। যতদিন সম্ভব খাওয়া যায়।
* বসন্ত, হাম: বসন্ত, হাম প্রভৃতির পুঁজ ঠিকমত বের না হলে তুলসী পাতার রস খেলে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসবে।
* ক্রিমি: তুলসী পাতার রসের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ক্রিমি রোগে বেশ উপকার পাওয়া যায়। শুষ্ক তুলসী পাতার ক্বাথ সর্দি, স্বরভঙ্গ, বক্ষপ্রদাহ, উদারাময় প্রভৃতি রোগ নিরাময় করে থাকে।
* পেট ব্যথা: অজীর্ণজনিত পেট ব্যথায় তুলসী পাতার বেশ উপকার সাধন করে থাকে। এটি হজমকারক। প্রতিদিন সকালে ১৮০ গ্রাম পরিমান তুলসী পাতার রস খেলে পুরাতন জ্বর, রক্তক্ষয়, আমাশয়, রক্ত অর্শ এবং অজীর্ণ রোগ সেরে যায়।
* বাত ব্যথা: বাত ব্যথায় আক্রান্ত স্থানে তুলসী পাতার রসে ন্যাকড়া ভিজিয়ে পট্টি দিলে ব্যথা সেরে যায়।
* কীট-পতঙ্গ কামড়ালে: বোলতা, ভীমরুল, বিছা প্রভৃতি বিষাক্ত কীট-পতঙ্গ কামড়ালে ঐ স্থানে তুলসী পাতার রস গরম করে লাগালে জ্বালা-যন্ত্রণা কম হয়।
* সর্দি: যারা সহজেই সর্দিতে আক্রান্ত হয় (বিশেষ করে শিশুদের) তারা কিছুদিন ৫ ফোঁটা মধুর সাথে ১০ ফোঁটা রস খেলে সর্দি প্রবণতা দূর হয়।
তুলসী মূল শুক্র গাঢ়কারক এবং বাজীকারক। তুলসী পাতার ক্বাথ, এলাচ গুঁড়া এবং এক তোলা পরিমাণ মিছরী পান করলে ধাতুপুষ্টি সাধিত হয় যতদিন সম্ভব খাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত ইন্দ্রিয় উত্তেজক। প্রতিদিন এক ইঞ্চি পরিমাণ তুলসী গাছের শিকড় পানের সাথে খেলে যৌনদূর্বলতা রোগ সেরে যায়।
কোন কারনে রক্ত দূষিত হলে কাল তুলসিপাতার রস কিছুদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।শ্লেষ্মার জন্য নাক বন্ধ হয়ে কোনো গন্ধ পাওয়া না গেলে সে সময় শুষ্ক পাতা চূর্ণের নস্যি নিলে সেরে যায়। পাতাচূর্ণ দুই আঙ্গুলের চিমটি দিয়ে ধরে নাক দিয়ে টানতে হয়, সেটাই নস্যি। তুলসী পাতা দিয়ে চায়ের মত করে খেলে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকা যায়। তুলসী চা হিসাবে এটি বেশ জনপ্রিয়।
তুলসিপাতার রসে লবন মিশিয়ে দাদে লাগালে উপশম হয়।
* প্রস্রাবজনিত জ্বালা: তুলসীর বীজ পানিতে ভিজালে পিচ্ছিল হয়। এই পানিতে চিনি মিশিয়ে শরবতের মত করে খেলে প্রস্রাবজনিত জ্বালা যন্ত্রনায় বিশেষ উপকার হয়।
* কালো দাগ: মুখে বসন্তের কাল দাগে তুলসীর রস মাখলে ঐ দাগ মিলিয়ে যায়। হামের পর যে সব শিশুর শরীরে কালো দাগ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে তুলসী পাতার রস মাখলে গায়ে স্বাভাবিক রং ফিরে আসে।

চিরসবুজ বৃক্ষ হরীতকী:

হরীতকী মধ্যম থেকে বৃহদাকার চিরসবুজ বৃক্ষ। ত্রিফলার অন্যতম ফল হচ্ছে হরীতকী। হরীতকী গাছকে ভেষজ চিকিৎসকরা মায়ের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। তারা বলেন, মানুষের কাছে এ বৃক্ষ মায়ের মতোই আপন। মানুষের শরীরে সংক্রামিত প্রায় সব রোগ-ব্যাধির ওষুধ হিসেবে হরীতকীর ব্যবহার রয়েছে। অর্শরোগে, রক্তার্শে, চোখের রোগ, পিত্তবেদনা, গলার স্বর বসে যাওয়া, হৃদরোগ, বদহজম, আমাশয়, জন্ডিস, ঋতুস্রাবের ব্যথা, জ্বর, কাশি, হাঁপানি, পেটফাঁপা, ঢেঁকুর ওঠা, বর্ধিত যকৃত ও প্লীহা, বাতরোগ, মহৃত্রনালীর অসুখ, ফুসফুস, শ্বাসনালীঘটিত রোগে হরীতকী ফলের গুঁড়া ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া ঘন ঘন পানির তৃষ্ণা কিংবা বমি বমিভাব কাটাতেও হরীতকী ব্যবহৃত হয়। ত্রিফলা অর্থাৎ আমলকী, বহেরা, হরীতকী_ এর প্রতিটির সমপরিমাণ গুঁড়ার শরবত কোলেস্টেরল অর্থাৎ প্রেসার বা রক্তচাপ কমানোর মহৌষধ। এক ওষুধ গবেষক দলের মতে, আধুনিক যে কোনো অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের তুলনায় ত্রিফলা কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি ফলপ্রসহৃ। তাদের মতে, দ্রব্যগুলোর দিক দিয়ে হরীতকীই সর্বশ্রেষ্ঠ। দ্বিতীয় স্থানে আমলকী এবং তৃতীয় স্থানে বহেরা। ত্রিফলা শুধু কোলেস্টেরলই কমায় না বরং এতে প্লীহা ও যকৃতের উপকার হয়। এছাড়া হরীতকীর কাঠ আসবাবপত্র, কৃষি যন্ত্রপাতি ছাড়াও নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। ফল থেকে ট্যানিন, লেখার কালি ও রং পাওয়া যায়।
নানা রোগ নিরাময়ে হরীতকী খুব উপকারী:
হরীতকী বললেই ত্রিফলার কথা আসে। ত্রিফলা মানে তিনটি ফলের সমাহার। এই তিনটি ফল হলো_ আমলকী, হরীতকী ও বহেড়া। তবে তিনটি ফলের মধ্যে হরীতকীর রয়েছে অসাধারণ গুণ। ফলে পাক ধরলে হলুদাভ সবুজ বর্ণ ধারণ করে এবং চিবুলে তিতকুটে লাগে। ফলের কোনো কিছু ফেলনা নয়। বীজের ভেতরের শাঁসও মজা করে খাওয়া যায়। হরীতকী ভেষজ গুণসমৃদ্ধ। আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে ত্রিফলা ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও কলেরা ও আমাশয় নিরাময়ে এর যথেষ্ট ব্যবহার রয়েছে। হরীতকী চূর্ণ ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে পিত্তশূল দূর হয়। বিশেষভাবে পরিশোধনের মাধ্যমে।
পাইলস, হাঁপানি, চর্ম, ক্ষত, কনজাংটিভাইটিস রোগেও হরীতকী ব্যবহৃত হয়। হরীতকীর কাঠ খুবই শক্ত এবং টেকসই। গৃহনির্মাণ এমনকি সুদৃশ্য আসবাবপত্র তৈরিতে এ কাঠ ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য গুণাগুণের কারণে বাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় নিমের পাশাপাশি মানুষ হরীতকীর গাছ লাগায়। এমনকি সরকারও বনায়ন কর্মসূচির আওতায় রাস্তার পাশে হরীতকী রোপণে মনোনিবেশ করেছে।
হরীতকীর গুণাবলি :
আয়ুর্বেদিক বিজ্ঞানে ত্রিফলা নামে পরিচিত তিনটি ফলের একটি হরীতকী। এর নানা গুণ আছে। স্বাদ তিতা। এটি ট্যানিন, অ্যামাইনো এসিড, ফ্রুকটোজ ও বিটা সাইটোস্টেরল-সমৃদ্ধ।
ব্যবহার:
হরীতকী দেহের অন্ত্র পরিষ্কার করে এবং একই সঙ্গে দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে। এটা রক্তচাপ ও অন্ত্রের খিঁচুনি কমায়। হৃৎপিণ্ড ও অন্ত্রের অনিয়ম দূর করে। এটা রেচক, কষাকারক, পিচ্ছিলকারক,পরজীবীনাশক, পরিবর্তনসাধক, অন্ত্রের খিঁচুনি রোধক এবং স্নায়বিক শক্তিবর্ধক। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য, স্নায়বিক দুর্বলতা, অবসাদ এবং অধিক ওজনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। হরীতকীতে অ্যানথ্রাকুইনোন থাকার কারণে রেচক বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হরীতকী।
অ্যালার্জি দূর করতে হরীতকী বিশেষ উপকারী। হরীতকী ফুটিয়ে সেই পানি খেলে অ্যালার্জি কমে যাবে। হরীতকীর গুঁড়া নারিকেল তেলের সঙ্গে ফুটিয়ে মাথায় লাগালে চুল ভালো থাকবে। হরীতকীর গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। গলা ব্যথা বা মুখ ফুলে গেলে হরীতকী পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গার্গল করলে আরাম পাবেন। দাঁতে ব্যথা হলে হরীতকী গুঁড়া লাগান, ব্যথা দূর হবে। রাতে শোয়ার আগে অল্প বিট নুনের সঙ্গে ২ গ্রাম লবঙ্গ বা দারুচিনির সঙ্গে হরীতকীর গুঁড়া মিশিয়ে খান। পেট পরিষ্কার হবে।

বহেড়া:

বিভিন্ন রোগে প্রয়োগ:
* ইন্দ্রিয়-দৌর্বল্যেঃ এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে রোজ দু’টি করে বহেড়া বিচীর শাঁস খান।
* শ্বেতী রোগেঃ বহেড়া বিচির শাঁসের তেল বের করে শ্বেতীর ওপর লাগালে গায়ের রং অল্পদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হবে।
অকালে টাক পড়লেঃ বহেড়া বিচির শাঁস অল্প পানিতে মিহি করে বেটে চন্দনের মতো টাকে লাগালে, টাক সেরে যায়।
* শ্লেস্মায়ঃ আধা চা-চামচ বগেড়া চূর্ণ, ঘি গরম করে তার সাথে মিশিয়ে আবার গরম করে মধু মিশিয়ে চেটে খেলে উপরকার পাওয়া যায়।
* আমাশয়ঃ সাদা বা রক্ত যে কোনও আমাশয়ে প্রতিদিন সকালে পানির সাথে বহেড়া চূর্ণ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
অকালে চুল পাকলেঃ বহেড়ার বিচি বাদ দিয়ে ১০ গ্রাম ছাল নিয়ে পানি দিয়ে বাটুন। এক কাপ পানিতে গুলে পানিতে ছেঁকে নিন, এবার সে পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
* ফুলো কমানোর জন্যঃ বহেড়ার বিচি বাদ দিয়ে ছাল বেটে একটু গরম করে ফুলোয় প্রলেপ দিলে ফুলো কমে যাবে।
ভেষজ দাওয়াই
ব্যবহার:
বহেড়া বিশেষভাবে পরিশোধিত করে এর ফল, বীজ এবং বাকল ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসায়। বহেড়ার কাঠ হরিদ্রাভ ও শক্ত। এ কাঠ সহজে পানিতে পচে না। এটি নৌকা তৈরিতে ব্যবহার হয়। ফল থেকে লেখার কালি বানানো হয়। বীজ থেকে বিশেষভাবে অঙ্কুরোদ্গম করা হয়।
ঔষধি গুণ:
কথিত আছে, প্রতিদিন বহেড়া ভেজানো পানি এক কাপ পরিমাণ পান করলে দীর্ঘায়ু হওয়া যায়। বহেড়া হৃৎপিণ্ড এবং যকৃৎ রোগের আক্রমণ কমায়। সর্দি-কাশি নিরাময় করে। এটা কৃমিনাশক, স্বরনাশক এবং অনিদ্রা দূর করে। এ ছাড়া পাইলস, হাঁপানি ও কুষ্ঠরোগে বহেড়ার চিকিৎসা বেশ ফলপ্রসূ।

আমলকী:

আমলকী বা ‘আমলকি’ একপ্রকার ভেষজ ফল। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম ‘আমালিকা’।
কাঁচা আমলকি:
আমলকি নিয়ে প্রাথমিক গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। এতে দেখা গেছে যে, এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অস্টিওপোরোসিস রোগে আমলকির রস কিছু কাজ করে। কয়েক ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও এর কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগেও আমলকি কার্যকর বলে ইঁদুরের উপর চালিত গবেষণায় প্রমান মিলেছে। প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের পরে ক্ষতিগ্রস্ত প্যানক্রিয়াস (অগ্ন্যাশয়) -এর ক্ষত সারাতে আমলকি কার্যকর। আমলকির ফল, পাতা ও ছাল থেকে তৈরি পরীক্ষামূলক ওষুধে কিছু রোগ নিরাময়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে যেমন- ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, প্রদাহ এবং কিডনি-রোগ। আমলকি মানুষের রক্তের কোলেস্টেরল-মাত্রা হ্রাস করতে পারে বলে প্রমাণ রয়েছে ডায়াবেটিক ইঁদুরের উপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমলকির রস রক্তের চিনির মাত্রা কমাতে পারে এবং লিভারের কর্মক্ষমতা পুনরোদ্ধারে সাহায্য করতে পারে।
আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন-সি বা এস্করবিক এসিড থাকে (৪৪৫ মিগ্রা/১০০ গ্রাম)। তা সত্ত্বেও আরো অন্যান্য উপাদান নিয়ে মতভেদ আছে এবং আমলকির ‘এন্টি-অক্সিডেন্ট’রূপে কার্যকারিতার পেছনে মূল ভূমিকা ভিটামিন-সি এর নয়, বরং ‘এলাজিটানিন’ নামক পদার্থসমূহের বলে মনে করা হয়।যেমন এমব্লিকানিন-এ (৩৭%), এমব্লিকানিন-বি (৩৩%), পানিগ্লুকোনিন (১২%) এবং পেডাংকুলাগিন (১৪%).এতে আরো আছে পানিক্যাফোলিন, ফিলানেমব্লিনিন-এ, বি, সি, ডি, ই এবং এফ।এই ফলে অন্যান্য ‘পলিফেনল’ও থাকে। যেমন- ফ্ল্যাভোনয়েড, কেমফেরল, এলাজিক এসিড ও গ্যালিক এসিড।
ব্যবহার:
আমলকির ভেষজ গুণ রয়েছে অনেক। ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ থাকে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। আমলকিতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
একজন বয়স্ক লোকের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার। দিনে দুটো আমলকি খেলে এ পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। আমলকি খেলে মুখে রুচি বাড়ে।স্কার্ভি বা দন্তরোগ সারাতে টাটকা আমলকি ফলের জুড়ি নেই। এছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তহীনতার জন্যও খুবই উপকারী।লিভার ও জন্ডিস রোগে উপকারী বলে আমলকি ফলটি বিবেচিত। আমলকি, হরিতকী ও বহেড়াকে একত্রে ত্রিফলা বলা হয়। এ তিনটি শুকনো ফল একত্রে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা ছেঁকে খালি পেটে শরবত হিসেবে খেলে পেটের অসুখ ভালো হয়।বিভিন্ন ধরনের তেল তৈরিতে আমলকি ব্যবহার হয়। কাঁচা বা শুকনো আমলকি বেটে একটু মাখন মিশিয়ে মাথায় লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসে।কাঁচা আমলকি বেটে রস প্রতিদিন চুলে লাগিয়ে দুতিন ঘন্টা রেখে দিতে হবে। এভাবে একমাস মাখলে চুলের গোড়া শক্ত, চুল উঠা এবং তাড়াতড়ি চুল পাকা বন্ধ হবে।
ঔষধি গুণ:
  •  আমলকী কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে।
  •  বমি বন্থে কাজ করে।
  •  দীর্ঘমেয়াদি কাশি সর্দি হতে উপকার পাওয়ার জন্য আমলকীর নির্যাস উপকারী।
  • এটি হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক।
  • ভিটামিন সি’সমৃদ্ধ আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। বিভিন্ন অসুখ সারানো ছাড়াও রোগ প্রতিরোধক ৰমতা গড়ে তুলতেও আমলকী দারুণ সাহায্য করে। আমলকীর গুণাগুণের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধেও এখন আমলকীর নির্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে।
আমলকী খাওয়ার উপকারিতা

*ভিটামিন সি’সমৃদ্ধ আমলকীতে যথেষ্ট পরিমাণে এ্যান্টি অঙ্েিডন্ট রয়েছে, যা ফ্রি র্যাডিকালস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বুড়িয়ে যাওয়া ও সেল ডিজেনারেশনের অন্যতম কারণ এই ফ্রি র্যাডিকালস।
*আমলকী ত্বক, চুল ও চোখ ভাল রাখার জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িও ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
*আমলকী হজমে সাহায্য করে ও স্টমাক এ্যাসিডে ব্যালেন্স বজার রাখে।
* আমলকী লিভার ভাল রাখে, ব্রেনের কার্যকলাপে সাহায্য করে ফলে মেন্টাল ফাংশনিং ভাল হয়।
* আমলকী বস্নাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল লেভেলেও কম রাখাতে যথেষ্ট সাহায্য করে।
* হার্ট সুস্থ রাখে, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে তোলে।
* শরীর ঠান্ডা রাখে, শরীরের কার্যৰমতা বাড়িয়ে তোলে, মাসল টোন মজবুত করে।
* লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলে দাঁত ও নখ ভাল রাখে।
* জ্বর, বদহজম, সানবার্ন, সানস্ট্রোক থেকে রৰা করে।
* আমলকীর জুস দৃষ্টি শক্তি ভাল রাখার জন্য উপকারী। ছানি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ব্রণ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যায় উপকারী।
* পেটের জ্বালা জ্বালাভাব কম রাখে। লিভারের কার্যকলাপে সাহায্য করে, পাইলস সমস্যা কমায়।
* শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে। ব্রঙ্কাইটেসও এ্যাজমার জন্য আমলকীর জুস উপকারী।
* আমলকী গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে থেকে পারেন। খিতে বাড়াতে সাহায্য করে।
* এক গস্নাস দুধ বা পানির মধ্যে আমলকী গুঁড়ো ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারেন। এ্যাসিডেটের সমস্যা কম রাখতে সাহায্য করবে।
* আমলকীতে সামান্য লবণ, লেবুর রস মাখিয়ে রোদে রাখুন। শুকিয়ে যাওয়ার পর খেতে পারেন।
* খাবারের সঙ্গে আমলকীর আচার খেতে পারেন। হজমে সাহায্য করবে।
* আমলকী মাঝারি আকারে টুকরো করে নিয়ে ফুটনত্ম পানির মধ্যে দিন। আমলকী নরম হয়ে তরে নামিয়ে ঝরিয়ে লবণ, আদা কুঁচি, লেবুর রস মাখিয়ে রোদে রেখে দিতে পারেন। সারা বছরই ভাল থাকবে।

নিম:

নিম একটি ঔষধি গাছ, বৈজ্ঞানিক নাম(AZADIRACHTA INDICA)। এর ডাল, পাতা, রস, সবই কাজে লাগে। নিম একটি বহু বর্ষজীবি ও চির হরিত বৃক্ষ। কৃমিনাশক হিসেবে নিমের রস খুবই কার্যকর।নিমের কাঠ খুবই শক্ত। এ কাঠে কখনো ঘুণ ধরে না। পোকা বাসা বাঁধে না। উইপোকা খেতে পারে না। এ কারণে নিম কাঠের আসবাবপত্রও তৈরি করা হচ্ছে আজকাল। এছাড়া প্রাচীনকাল থেকেই বাদ্যযন্ত্র বানানোর জন্য কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর উত্পাদন ও প্রসারকে উত্সাহ এবং অন্যায়ভাবে নিম গাছ ধ্বংস করাকে নিরুত্সাহিত করছে। নিমের এই গুনাগুনের কথা বিবেচনা করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘একুশ শতকের বৃক্ষ’ বলে ঘোষনা করেছে।
নিম একটি বহু বর্ষজীবি ও চির হরিত বৃক্ষ।নিম গাছের পাতা, ফল, ছাল বা বাকল, নিমের তেল,বীজ। এক কথায় নিমের সমস্ত অংশ ব্যবহার করা যায়।
ঔষধি গুণাগন:
বিশ্বব্যাপী নিম গাছ, গাছের পাতা, শিকড়, নিম ফল ও বাকল ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বিশ্বে নিমের কদর তা কিন্তু এর অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যহারের জন্য। নিম ছত্রাকনাশক হিসেবে, ব্যাকটেরিয়া রোধক হিসেবে ভাইরাসরোধক হিসেবে, কীট-পতঙ্গ বিনাশে চ্যাগাস রোধ নিয়ন্ত্রণে, ম্যালেরিয়া নিরাময়ে,দন্ত চিকিতসায় ব্যাথামুক্তি ও জ্বর কমাতে, জন্ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।
ব্যবহার:
  1. কফজনিত বুকের ব্যথা: অনেক সময় বুকে কফ জমে বুক ব্যথা করে। এ জন্য ৩০ ফোটা নিম পাতার রশ সামান্য গরম পানিতে
  2. মিশিয়ে দিতে ৩/৪ বার খেলে বুকের ব্যথা কমবে। গর্ভবতী,শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এ ঔষধটি নিষেধ।
  3. কৃমি: পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়। পেটে বড় হয়। চেহারা ফ্যকাশে হয়ে যায়। এ জন্য ৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিম গাছের মূলের ছালের গুড়া দিন ৩ বার সামান্য পানি গরমসহ খেতে হবে।
  4. উকুন নাশ: নিমের পাতা বেটে হালকা করে মাথায় লাগান। ঘন্টা খানেক ধরে মাথা ধুয়ে ফেলুন। ২/৩ দিন এভাবে লাগালে উকুন মরে যাবে।
  5.  অজীর্ণ: অনেকদিন ধরে পেটে অসুখ। পাতলা পায়খানা হলে ৩০ ফোটা নিম পাতার রস, সিকি কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে সকাল- বিকাল খাওয়ালে উপকার পাওয়া যাবে।
  6. খোস পাচড়া: নিম পাতা সিদ্ধ করে পানি দিয়ে গোসল করলে খোসপাচড়া চলে যায়। পাতা বা ফুল বেটে গায়ে কয়েকদিন লাগালে চুলকানি ভালো হয়।
  7. পোকা-মাকড়ের কামড়: পোকা মাকড় কামল দিলে বা হুল ফোটালে নিমের মূলের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হবে।
  8. দাতের রোগ: নিমের পাতা ও ছালের গুড়া কিংবা নিমের চাল দিয়ে নিয়মিত দাত মাজলে দাত হবে মজবুত, রক্ষা পাবে রোগ।
  9. জন্ম নিয়ন্ত্রণে নিম: নিম তেলা একটি শক্তিশালী শ্রক্রানুনাশক হিসেবে কাজ করে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, নিম তেল মহিলাদের জন্য নতুন ধরনের কার্যকরী গর্ভনিরোধক হতে পারে। এটি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই শুক্রানু মেরে ফেলতে সক্ষম।

Labels:

প্রকৃতির ওষুধ পেয়ারা

পেয়ারা মেক্সিকো এবং দক্ষিণ আমেরিকার একটি ফল। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে হয়। পেয়ারা নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ একটি ফল। তাই এই ফলকে সুপার ফুড বলে।

পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে দ্রবীভূত খাদ্য আঁশ আছে। সেই সঙ্গে আছে অত্যধিক পরিমাণ ভিটামিন সি। পেয়ারা থেকে কমলালেবুর তুলনায় চার-পাঁচ গুণ বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যায়। একটি পেয়ারায় যে পরিমাণ ভিটামিন সি আছে, তা আমাদের এক দিনের চাহিদার তিন গুণ। ভিটামিন-‘এ’র একটি ভালো উৎস। পেয়ারায় সমপরিমাণ কলার চেয়ে বেশি পটাসিয়াম আছে। এ ছাড়া আছে ভিটামিন বি, ভিটামিন ই ও ভিটামিন কে। খনিজ লবণের মধ্যে আছে ম্যাগনেসিয়াম, কপার ও ম্যাঙ্গানিজ।

অত্যধিক মাত্রায় দ্রবীভূত পেয়ারার খাদ্য আঁশ ল্যাক্সিটেভের মতো কাজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। এই আঁশ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় এবং বিষক্রিয়া থেকে কোলনের উপরিভাগকে রক্ষা করে কোলন ক্যান্সার থেকে মুক্ত রাখে। পেয়ারার অতিরিক্ত মাত্রার ভিটামিন সি এন্টি অক্সেডিন্ট হিসেবে কাজ করে ফ্রি রেডিক্যালস নিষ্ক্রিয় করে দেয় এবং ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এটা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, হাড়, রক্ত নালি এবং ত্বকের কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। পেয়ারার ভিটামিন এ এবং ফ্লাভোনয়েড ত্বকের ক্যান্সার ও রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে। এর লাইকোপিন সানস্ক্রিনের মতো ইউভি রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচায় এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়া প্রতিরোধ করে।

 পেয়ারার পটাসিয়াম হার্ট-রেটকে নিয়ন্ত্রণ করে ব্লাডপ্রেশারকে স্বাভাবিক রাখে। এর কপার হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় এবং থাইরয়েডের কার্যক্ষমতাকে ঠিক রাখে। পেয়ারা কোলেস্টেরল কমায়, স্কার্ভি প্রতিরোধ করে, অ্যাজমা এবং ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। এটা দাঁত ও মাড়ির ব্যথা কমায় এবং ঠাণ্ডা ও কফ নিয়ন্ত্রণ করে।
  
সূত্র/কালের কণ্ঠ

Labels: ,

ব্রণের দাগ দূর করতে প্রতিদিন রাতে পুদিনা পাতার রস


 প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে পুদিনা। তাই খাদ্য হিসেবে পুদিনা আপাত অবহেলিত হলেও ওষুধ হিসেবে অবহেলিত নয় মোটেও! বরং যত দিন যাচ্ছে তত গবেষণা হচ্ছে পুদিনা ও পুদিনার মতো ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে, আর ততই মানুষ জানছে এসবের গুণাগুণ সম্পর্কে। আর তাই ব্যবহারের আগ্রহও তৈরি হচ্ছে নানা ভেষজ সম্পর্কে। শুধু খাবার আর ওষুধ হিসেবে নয়, রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও পুদিনার রয়েছে যথেষ্ট অবদান। বিশেষ করে ব্রণের দাগ দূর করতে এর তুলনা নেই। কীভাবে ব্যবহার করবেন? জেনে নিন পদ্ধতিটি।

ব্রণের দাগ দূর করতে প্রতিদিন রাতে পুদিনা পাতার রস আক্রান্ত স্থানে লাগান। সম্ভব হলে সারারাত রাখুন। নতুবা কমপক্ষে ২/৩ ঘণ্টা রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। মাস খানেকের মাঝেই দাগ দূর হবে।

Labels: ,

করল্লার তেতো স্বাদের আড়ালে

করল্লা… বাঙালি মাত্রই কমবেশি পরিচিত এই সবজির সাথে। তবে পছন্দের চাইতে অপছন্দের তালিকাই দীর্ঘ। এর তিক্ত স্বাদের জন্য অনেকেই, বিশেষ করে শিশুরা তো মতেই খেতে চায়না করল্লা, তবে সত্যি বলতে কি, ভোজন রসিক বাঙ্গালিই কেবল বোঝেন করল্লার আসল স্বাদ!!

বেশী করে পিঁয়াজ দিয়ে ঘিয়ে ভাজা করল্লা-আলুর যে স্বাদ, তাতে এক থালা ভাত খেয়ে ফেলা যায় অনায়াসেই। কিংবা করল্লা দিয়ে কুচো চিংড়ি, ডাল দিয়ে করল্লার চচ্চড়ি কিংবা ইলিশ মাছের কাঁটা কুটো দিয়ে মাখো মাখো করল্লা… আহ! আর ইলিশ বা রুই মাছের ডিম দিয়ে করল্লা ভাজার যে স্বাদ, মুখের সাথে লেগে থাকবে একবার খেলে। বাঙ্গালির রসনা বৈচিত্র্যের অনবদ্য উদাহরণ এই সকল খাবার।

হতে পারে করল্লা বিচ্ছিরি তেতো। তবে এই তেতো হওয়াটাই এর স্বাদ। জেনে রাখা ভালো যে খাবারের শুরুটা তেতো দিয়ে হলে তা মুখের মাঝে কিছু বিশেষ এনজাইমের সক্রিয়তা বাড়ায়। ফলে খাদ্য হজম হয় দ্রুত ও সহজে। এবং একারণেই তা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

শত বছর ধরে চীন এবং ভারতে তথা সম্পূর্ণ এশিয়াতেই করল্লা ব্যবহৃত হয়ে আসছে ডায়বেটিসের ওষূধ হিসেবে। এতে প্ল্যান্ট ইনসুলিন আছে যা রক্তে গ্লুকোজ লেভেল কম রাখে। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান অঞ্চলের আদিবাসীরাও বহু বছর ধরেই করলাকে ডায়াবেটিস, পেটের গ্যাস, হাম ও হিপাটাইটিসের ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। ব্যবহার করে আসছে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে, ম্যালেরিয়া জ্বরে এবং মাথা ব্যথায়ও।

করলা জন্মায় ট্রপিক্যাল অঞ্চলে। যেমন-এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকা, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ আমেরিকা। করলার আছে পালং শাকের চেয়ে দ্বিগুণ ক্যালশিয়াম আর কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম। আছে যথেষ্ট লৌহ, প্রচুর ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং আঁশ। ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি এন্টি অক্সিডেন্ট, যা কিনা শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে বার্ধক্য ঠেকিয়েও রাখতে পারে! আরও আছে লুটিন আর লাইকোপিন। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লাইকোপিন শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্টও বটে।
সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডোর ক্যান্সার সেন্টার কর্তৃক গবেষনায় দেখা গ্যেছে যে করল্লা অত্যন্ত সফল ভাবে অগ্নাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। গবেষনায় দেখা গেলো যে টেস্ট টিউবে রাখা মানুষের অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার কোষে করল্লার জুস প্রয়োগে কোষের মৃত্যুর হার বেড়েছে। কিন্তু কিভাবে? মূলত দ্রূত বর্ধনশীল ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন প্রচুর গ্লুকোস বা চিনি। করল্লা ইন্সুলিন এর নিঃসরন বাড়িয়ে এই গ্লুকোস মেটাবলিসম বা ভেঙ্গে ফেলার ব্যবস্থা করে। ফলে ক্যান্সার কোষ বাড়তে না পেরে মরে যায়। ঠিক একই ভাবে করল্লা নিয়ন্ত্রন করে ডায়বেটিস ও।
এছাড়াও রক্তের চর্বি তথা ট্রাইগিস্নসারাইড কমায় করল্লা। এবং ভাল কলেস্টেরল এইচডিএল কে বাড়ায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ক্রিমিনাশক হিশাবেও করল্লার তুলনা মেলা ভার।

করল্লা ভাইরাস নাশক হিশাবেও সমান কার্যকারী। হিপাটাইটিস এ, হারপিস ভাইরাস, ফ্লু, ইত্যাদির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। লিভার ক্যান্সার, লিউকেমিয়া, মেলানোমা ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে পারে। করল্লার ল্যাক্সেটিভ পায়খানাকে নরম রাখে, ও কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে। জীবাণুনাশী-বিশেষ করে ই কোলাই নামক জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর। ফলে ডায়রিয়াও প্রতিরোধ হয়।

এছাড়া করল্লা নানান রকম চর্মরোগ প্রতিরোধ করতেও অত্যন্ত কার্যকর। করল্লার জুস লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, রক্ত পরিশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশে করল্লার আরেকটি নাম প্রচলিত আছে- “উস্তা” ।

Labels: ,

তুলসী পাতার ঔষধি ব্যবহার

তুলসীর উপকারিতার কথা কে না জানে। সর্দি, কাশি, ঠাণ্ডাজনিত সকল রোগের ঔষধ এই তুলসী। তুলসীর বৈজ্ঞানিক নাম ওসিমাম স্যাঙ্কটাম। অন্য নাম হলি বাসিল, বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায় গাছটিকে এ নামে ডেকে থাকে। তাদের কাছে গাছটি ধর্মীয় উপাসনার অনুষঙ্গ।

হিন্দু পরিবারগুলো তাদের ঘরের সামনে ফুলের টবে এ গাছটির রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। তাদের প্রার্থনার সময় তুলসীপাতা ব্যবহৃত হয় দেবতার উদ্দেশে। প্রসাদ হিসেবেও তারা তুলসীপাতা ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু তাই বলে এটা হিন্দুদের গাছ এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। সব ধরনের মানুষের কাছেই এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক।
এই তুলসীর আছে নানান রকম ঔষধি ব্যবহার। নানান রকম রোগ বালাইয়ের ঘরোয়া চিকিৎসায় ব্যবহার করা সম্ভব এই তুলসী। বর্ণনা করার চেষ্টা করা হলো এমনই কয়েকটি গুনাগুণ।
  • তুলসীপাতা স্নায়ুটনিক এবং স্মৃতিবর্ধক হিসেবে পরিচিত। ফুসফুসের শ্লেষ্মা নিঃসরণে তুলসীপাতার রস অতুলনীয়। পাকস্থলীর শক্তি বর্ধনেও তা অনন্য।
  • তুলসীর বীজ গায়ের চামড়াকে মসৃণ রাখে। বীজ সেবনে প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে থাকে।
  • বিভিন্ন প্রকার জ্বরে তুলসীপাতার রসের ব্যবহার অনেকটা শাস্ত্রীয় বিষয় হিসেবে পরিচিত। বিশেষত ঋতু পরিবর্তন হেতু যে জ্বর, ম্যালেরিয়া জ্বর এবং ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে সমাজে। এর জন্য কচি তুলসীপাতা চায়ের সাথে সেদ্ধ করে পান করলে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ হয়ে থাকে।
  • একিউট জ্বরে তুলসীপাতার সেদ্ধ রসের সাথে এলাচিগুঁড়া এবং চিনি ও দুধ মিশিয়ে পান করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। গলক্ষতের জন্য তুলসীপাতা সেদ্ধ পানি পান করলে এবং গারগল করলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
  • তুলসী পাতার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে ফুসফুসীয় সমস্যায়। ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কাশি এবং ঠাণ্ডাজনিত রোগে তুলসী পাতার রস, মধু ও আদা মিশিয়ে পান করলে উপশম পাওয়া যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে তুলসী পাতার রস, লবণ ও লবঙ্গ মিশিয়ে পান করলে ফল পাওয়া যায়। এ ধরনের রোগের ব্যবহারের জন্য তুলসী পাতা আধা লিটার পানিতে সেদ্ধ করতে হয় ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষন তা অর্ধেকে পরিণত হয়।
  • কিডনির পাথরে তুলসীর ব্যবহার চমকপ্রদ ফলাফল দিয়ে থাকে। তুলসীপাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে নিয়মিত একাধারে ছয় মাস পর্যন্ত ব্যবহারে কিডনির পাথর অপসারিত হয়ে থাকে। এ ছাড়া তুলসী কিডনিকে শক্তিশালী করে থাকে। হৃদরোগেও তুলসীর ব্যবহার রয়েছে। কোলেস্টেরল বৃদ্ধিজনিত হৃদরোগে তুলসীপাতার রস খুব উপকারী। এমনকি কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমিয়ে দেয় তুলসী। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রাও কমিয়ে দেয় তুলসীর রস।
  • তুলসীপাতার রস শিশুদের জন্য বেশ উপকারী। বিশেষত শিশুদের ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর হওয়া, কাশি লাগা, ডায়রিয়া ও বমির জন্য তুলসীপাতার রস ভালো কাজ করে। জলবসন্তের পুঁজ শুকাতেও তুলসীপাতা ব্যবহৃত হয়।
  • মানসিক চাপে অ্যান্টিস্ট্রেস এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক অবসাদ প্রশমনে এমনকি প্রতিরোধে তুলসী চমৎকার কাজ করে। কোনো সুস্থ ব্যক্তি যদি প্রতিদিন অন্তত ১২টি তুলসীপাতা দিনে দু’বার নিয়মিত চিবাতে পারেন তাহলে সেই ব্যক্তি কখনো মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হবেন না বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
  • মুখের ঘা শুকাতেও তুলসীপাতা ভালো কাজ করে। মুখের ইনফেকশন দূর করতে তুলসীপাতা অতুলনীয়। প্রতিদিন কিছু পাতা (দিনে দুবার) নিয়মিত চিবালে মুখের সংক্রমণ রোধ করা যেতে পারে। চর্মরোগে তুলসীপাতার রস উপকারী। দাউদ এবং অন্যান্য চুলকানিতে তুলসীপাতার রস মালিশ করলে ফল পাওয়া যায়। ন্যাচার অ্যাথিতে শ্বেতীরোগের চিকিৎসায় তুলসীপাতার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
  • চোখের ক্ষতে এবং রাতকানা রোগে নিয়মিত তুলসীপাতার রস ড্রপ হিসেবে ব্যবহারে ফল পাওয়া যায়। দাঁতের সুরক্ষায় তুলসীপাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে দাঁত মাজলে দাঁত ভালো থাকে। এ ছাড়া সরিষার তেলের সাথে তুলসীপাতার গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে দাঁত মাজলেও দাঁত শক্ত থাকে। মুখের দুর্গন্ধ রোধে তুলসীপাতার মাজন ভালো ফল দিয়ে থাকে।
  • মাথাব্যথায় তুলসীপাতার পেস্ট কপালে ব্যবহার করলে ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া গনোরিয়া ও গাউট রোগেও তুলসীপাতার রস উপকারী। তুলসীপাতার ব্যবহার ছাড়া তুলসী বীজও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ডায়রিয়া, পুরনো আমাশয়, কোষ্ঠবদ্ধতা, পাইলস, গনোরিয়া কাশি, কিডনি সমস্যা এবং জ্বরে তুলসী বীজ উপকারী।
  • হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় তুলসী থেকে তৈরি ওষুধটির নাম ওসিমাস স্যাঙ্কটাম, অ্যাজমা, ঠাণ্ডা লাগা, কাশি হওয়া, জ্বর প্রভৃতিতে এর প্রধান ব্যবহার, মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত এবং স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ায় এর চমৎকার ব্যবহার রয়েছে। গলাব্যথা, বুকে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখ ব্যথা, কান ব্যথার লক্ষণেও এটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মুখের ক্ষত, মুখের দুর্গন্ধ, পেট ফাঁপা, ক্ষুধামান্দ্য, লিভারে ব্যথা প্রভৃতিতে এর ব্যবহার রয়েছে।
  • ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য হোমিওপ্যাথিতে এর ব্যবহার রয়েছে। টাইফয়েড জ্বরেও এর নিয়মিত ব্যবহার রয়েছে। হোমিওপ্যাথিতে ডায়রিয়া, আমাশয়, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং বারবার প্রস্রাবের চিকিৎসায়ও এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

Labels:

স্ত্রী সহাবাসের আগে ও পরে করনীয় সব কিছু ।


সম্ভোগের আগে স্বামীর কর্তৃব্য
 ১। পতির কর্তব্য হলো, পত্নীকে প্রিয়তমা জ্ঞানে বা সত্যিকারের ধর্মপত্নী জ্ঞানে নিজের তৃপ্তির সঙ্গে সঙ্গে তারও দৈহিক ও মানসিক তৃপ্তি বিধান করা। নিজের কামনা পরিতৃপ্ত করাই সম্ভোগের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়।
২। কোন প্রকার বল প্রয়োগ করা আদৌ বাঞ্ছনীয় নয়। একথা মনে রাখতে হবে।
৩। চুম্বন, আলিঙ্গন, নিপীড়ন ইত্যাদি নানাভাবে স্ত্রীর মনে পূর্ণ কামাব জাগিয়ে তারপর তার সঙ্গে সহবাসে রত হওয়া প্রতিটি পুরুষের কর্তব্য।
৪। নারী ধীরে ধীরে আত্নসমর্পণ না করা পর্যন্ত তার সঙ্গে কখনও সহবাসে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়।
৫। নারী কখনও নিজের যৌন উত্তেজনাকে মুখে প্রকাশ করে না। তবে সেটা অনেকটা লক্ষণ দেখে বুঝে নিতে হয়।
৬। নারীর কর্তৃব্য সর্বদা পতির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার ভাব ফুটিয়ে তোলা।
৭। পতিকে ঘৃণা করা, তাকে নানা কু-কথা ইত্যাদি বলা কখনই উচিত নয়। সহবাসের অনিচ্ছা থাকলে তা তাকে বুঝিয়ে বলা উচিত। ঘৃণা বা বিরক্তিসূচক তিরস্কার করা কখনও উচিত নয়। এতে পতির মনে দুঃখ ও বিরক্তি জাগতে পারে।
৮। নারীর কর্তৃব্য স্বামীর চুম্বন, দংশন ও আলিঙ্গনের প্রতিউত্তর দেওয়া।
৯। নারীর পূর্ণ কামভাব জাগলে পতিকে কৌশলে তা বুঝিয়ে দেওয়া উচিত।
১০। নারীর উত্তেজনা ধীরে ধীরে আসে-আবার তা ধীরে ধীরে তৃপ্ত হয়। পুরুষের উত্তেজনা আসে অকস্মাৎ আবার তা অকস্মাৎ শেষ হয়। তাই নারীর পূর্ণ কামভাব না জাগিয়ে সঙ্গমে মিলিত হলে নারী পূর্ণ তৃপ্তি পেতে পারে না। এরকম করা রিধিবিরুদ্ধৃ। এতে নারী পূর্ণ তৃপ্তি পায় না- এর জন্যে সে পর-পুরুষ পর্যন্ত গমন করতে পারে। দাম্পত্য জীবনে অনেক বিপর্যয় এর জন্যে আসতে পারে।

স্ত্রীকে দ্রুত তৃপ্তির উপায়
১। গালে ঠোঁটে ঘন ঘন চুম্বন করা।
২। স্ত্রীর ঊরুদেশ জোরে জোরে মৈথুনের আগে ঘর্ষণ করা।
৩। সম্ভোগের আগে যোনিদেশ, ভগাঙ্কুর কামাদ্রি আলতো ভাবে ঘর্ষণ করা।
৪। ভগাঙ্কুর মর্দন।
৫। মৈথুনকালে স্তন মর্দ্দন।
৬। সহাবাসের আগে যদি পুরুষাঙ্গের আগায় খুব সামান্য পরিমাণ কর্পূর লাগানো হয় তবে স্ত্রী দ্রুত তৃপ্তি লাভ ক’রে থাকে। তবে কর্পূর যেন বেশি না হয়, তাতে স্ত্রী যোনি ও পুরুষাঙ্গ জ্বলন অনুভূত হ’তে পারে।

সহবাসের কাল
১। মেয়েদের একটু ঘুমোবার পর রাত্রির দ্বিতীয় প্রহর শ্রেষ্ঠ মৈথুন সময়।
২। দিনের বেলা সহবাস নিষিদ্ধ।
৩। ভোরবেলা সহবাস শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর হ’তে পারে।
৪। গুরু ভোজনের পর সঙ্গে সঙ্গে সহবাস নিষিদ্ধ।
৫। ক্রুদ্ধ বা চিন্তিত মেজাজে স্ত্রী সহবাস উচিত নয়। প্রফুল্ল মনে সহবাস উচিত।
কোন ঋতু মৈথুনের পক্ষে কতটা উপযোগী তার বিচার করা হচ্ছে।
ক। বসন্তকাল-৯০%।
খ। শরৎকাল-৭০%।
গ। বর্ষাকাল-৫০%।
ঘ। হেমন্তকাল-৪০%।
ঙ। গ্রীষ্মকাল-৩০%।
চ। শীতকাল-২০%।

প্রহরণ বা মৃদু প্রহার
মৈথুনকালে মৃদু প্রহার-শৃঙ্গারও কামের একটি অঙ্গ হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে।
কথাটা শুনতে অনেকটা আশ্চার্য্য বোধ হয়, কিন্তু কামসূত্রে তার ব্যাখ্যা প্রদত্ত হয়েছে।
নারী কিছুটা উৎপীড়িত হ’তে চায় যৌন মিলনে-তাই মনোবিজ্ঞান স্বীকার করে যে, পুরুষ কিছুটা উৎপীড়ন করতে পারে নারীকে।
কিন্তু প্রহরণ ঠিক শৃঙ্গার নয়-কারণ মিলনের আগে এর প্রয়োজন নেই।
পূর্ণ মিলনের সময় আনন্দ বৃদ্ধির জন্যে পুরুষ ধীরে ধীরে নারী-দেহের কোমল অংশে মৃদু প্রহার করতে পারে।
পুরুষ অথ্যাচারী-মনোবিজ্ঞানের মতে যে প্রহার করা হয় তা আনন্দের। তাই বলে এতে দু’জনেই যে আনন্দ পাবে এমন নয়। এটা দু’জনের মানসিক অবস্থার উপর নির্ভর করে।
প্রহরণের মধ্যে আবার প্রকারভেদ আছে-
১। মুষ্টি প্রহার-হাত মুষ্টি বদ্ধ করে দেহের বিভিন্ন অংশে মৃদু প্রহরণ।
২। চপেটাঘাত (হাত খুলে রেখে ধীরে ধীরে।)
৩। দু’টি অঙ্গুলির সাহায্যে প্রহরণ।
৪। প্রহরণ ও সংবহন মিশ্রিত করে প্রহরণ।

মর্দন বা সংবাহন
যদিও মর্দন শৃঙ্গার কালে মাঝে মাঝে হয়- তবে এই মর্দন প্রকৃত শৃঙ্গার নয়।
মর্দন বেশি হয় রতিকালে বা রতির পূর্বে।
নারীদেরহর কোমল অংশে যেমন স্তন, নিতম্ব, ঊরুদ্বয় প্রভৃতির মর্দন হ’য়ে থাকে।
রতিক্রিয়াকালে স্তন ও নিতম্ব মর্দন করেও পুরুষ ও নারী উভয়ে আনন্দ পায় বলে বাৎস্যায়ন বলেছেন।
তবে যারা পছন্দ করেন তাঁরাই এটা করবেন। যদি একজন বা দু’জনেই পছন্দ না করেন তবে এর প্রয়োজন নেই।

ঔপরিষ্ঠক বা মুখমেহন
মুখমেহন স্বাভাবিক মিলন হিসাবে বাৎস্যায়ন স্বীকার করেন নি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এটি সর্বদা চলতে পারে না। তবু শাস্ত্রে এটি উল্লিখিত হয়েছে।
শাস্ত্রে উল্লিখিত হবার অর্থ অবশ্য এই নয় যে, এটি খুব ভাল আসন বা এটি সম্মান পেয়েছে। শাস্ত্রে কেবল এটাকে একটি অস্বাভাবিক মিলন বলেই এর নাম উল্লিখিত হয়েছে।
ভারতের কোন কোন জাতির মধ্যে ঔপরিষ্ঠক স্বীকৃত ও বেশ প্রচলিত-কিন্তু তাই বলেই তাকে উচ্চ স্থান দেওয়া হয় না।
মুখমেহন সব পণ্ডিতের মতেই ঘৃন্য-তাই এ বিষয়ে বেশি আলোচনা করা হলো না।
বাৎস্যায়ন বলেন নারী শুধু তিনটি শ্রেণীরই নয়-তাছাড়াও আছে আর এক শ্রেণী-তার নাম হলো নপুংষক শ্রেণী।
এই নপুংষক শ্রেণীর যোনি ঠিকমত গঠিত নয়-তাই এদের সঙ্গে যৌন ক্রিয়া সম্ভব নয়। এদের দ্বারা কেবল মুখমেহন করানো চরতে পারে।
এই শ্রেণীর নপুংষক অনেক সময় অর্থের বিনিময়ে মুখমেহনে রাজী হয়।

এই মুখমেহন আট প্রকার হ’য়ে থাক-
১। নিমিত-এতে নপুংষক তার করতলে পুরুষাঙ্গ ধরে আসে- আসে- তার ওষ্ঠাধারে ঘর্ষণ করে।
২। পার্শ্ব-লিঙ্গ মুণ্ডের আবরণ খুলে আসে- আসে- মুখে প্রবেশ করানো।
৩। বহিঃসংদংশন্তদাঁত ও ঠোঁট দিয়ে পুরুষাঙ্গের আবরণ উন্মোচন।
৪। পুরুষাঙ্গ বারে বারে মুখের ভেতরে নেওয়া ও বের করা। বহুক্ষণ এরূপ করা।
৫। অন্তঃসংদংশন্তওষ্ঠাধর দিয়ে চোষণ করা।
৬। জিহ্বা দ্বারা চোষণ।
৭। আম্রচোষণ-পুরুষাঙ্গ আম্রের মত চোষণ করা।
৮। আকন্ঠীত-সম্‌সত পরুষাঙ্গ গিলে ফেলার মত।
মুখের মধ্যে সুরতের সঙ্গে সঙ্গে আলিঙ্গনাদিও চলতে পারে।
অনেক নীচজাতীয়া নারীদের দ্বারা এ কাজ করানো যেতে পারে।
কামশাস্ত্রে মুখে সুরত নিষিদ্ধ। তবে অনেকে এটি পছন্দ করেন।-বা কোন রাবাঙ্গনা রাজী হলে তার দ্বারা এটি করান। কিন্তু অন্তঃপুর চারিনীদের এটি করা উচিত নয়।

সহবাসের পরের কথা
সহবাসের পরে দু’জনেরই উচিত কমপক্ষে এক পোয়া গরম দুধ, একরতি কেশন ও দুই তোলা মিশ্রি সংযোগে সেবন করা। সহবাসে কিছু শক্তির হ্রাস হ’তে পারে। এতে করে কিঞ্চিৎ পূরণ হয়। অন্যথায় সহবাস করা উচিত নহে। এই কারণেই মনীষীরা মাসানে- একবার রতিক্রিয়া ব্যবস্থা করে দেন। যাতে উপরোক্ত সামগ্রীর যোগাড় করতে গরীব বা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকের পক্ষেও কষ্টকর না হয়। পুষ্টিকর খাদ্য না খেলে পুরুষ অচিরেই শক্তিহীন হ’য়ে পড়ে ও তার কর্মশক্তি লোপ পায়।
অত্যধিক মৈথুনের জন্য হজমশক্তি লোপ পায়। ফলে অম্ল, অজীর্ণ প্রভৃতি নানা প্রকার রোগ দেখা দেয়। এই সমস্ত রোগের হাত থেকে নিশ্চিত ভাবে নিষকৃতির জন্য মৈথুনের পর দুগ্ধ পান অত্যাবশ্যাক। অবস্থায় সম্ভব হলে নিম্নের টোটকাগুলি ব্যবহার করলে ভয়ের কারণ থাকবে না।
(১) বাদাম দুই তোলা ভালভাবে বেটে নিয়ে তা মিশ্রি সংযোগে মৈথুনের পর গরম করে খেলে বিশেষ উপকার হয়।
(২) দুতোলা ঘি, দু তোলা মিশ্রি কিংবা গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে সেবন করলে সহজে ক্ষয় পূরণ হয়।
(৩) মুগের ডাল ভালভাবে বেটে নিয়ে ভেজে নিন, পরে মিশ্রি কিংবা চিনি মিশিয়ে নাড়ার মত করে চার তোলার মত মৈথুনের পর খেয়ে নিলে উপকার হয়।
সহবাসের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষাঙ্গ ধৌত করলে নপুংষকতার লক্ষণ প্রকাশ পায়। সেজন্য রতিক্রিয়ার কিছু সময় পরে পুরুষাঙ্গ ধৌত করা বিধেয়। এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রত্যেকের উচিত।
সহবাসের পর দেহের বিষয়ে কি কি যত্ন নিতে হবে এ বিষয়ে শাস্ত্রে কতগুলি নিয়ম বিধিবন্ধ আছে। আমরা তা একে একে আলোচনা করছি।
১। সহবাসের পর দু’জনের কিছুক্ষণ পরস্পর সংলগ্ন হ’য়ে অবস্থান করবে। এতে মানসিক তৃপ্তি হয়। ধীরে ধীরে দেহ শীতল হয়। এতে প্রেম দীর্ঘস্থায়ী হ’য়ে থাকে।
২। তারপর অবশ্য প্রত্যেকেই নিজ নিজ যৌনাঙ্গ ভালভাবে ধৌত করবে-এটি অবশ্য পালনীয়। তবে কিছুক্ষণ পর।
৩। অনেক শাস্ত্রে দুজনের ্লান করা বিধান আছে তবে তা সকলে পালন করে না।
৪। শর্করা মিশ্রিত এক গ্লাস জল কিঞ্চিৎ লেবুর রস বা দধি কিংবা শুধু ঠাণ্ডা জল কিছু খেতে হবে। এতে শরীরের মঙ্গল করে।
৫। প্রয়োজন হরে কোন পেটেন্ট ঔষধ সেব করা যাইতে পারে।
৬। সহবাসের পর ঘুম একান্ত আবশ্যক-তদাই শেষ রাতে সহবাস বাঞ্ছনীয় নয়।
৭। পরদিন প্রভাতে স্নান করা একান্ত আবশ্যক। তা না হলে মন শুচি হয় না- কর্মে প্রফুল্লতা আসে না। অন্যথায় পরদিন মন খারাপ থাকে, কর্মে একঘেয়েমি আসতে পারে।
৮। সহবাস প্রারম্ভে বা শেষে নেশা সেবন ভাল নয়। এতে দৈহিক ক্ষতি হয়-প্রেম দূরে যায়-মানসিক অসাড়তা আসতে পারে।
৯। রাত্রির প্রথম ও শেষ প্রহর বাদে মধ্যম অংশই সহবাসের পক্ষে উৎকৃষ্ঠ সময়, এ কথা সর্বদা মনে রাখতে হবে।
১০। সহবাসের পর অধিক রাত্রি জাগরণ, অধ্যয়ন, শোক প্রকাশ, কলহ কোন দুরূহ বিষয় নিয়ে গভীর চিন্তা ও মানসিক কোন উত্তেজনা ভাল নয়।

সফল মৈথুন
এবারে আমরা একটি প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তা সফল মৈথুন।
এমন প্রশ্ন অনেকে করতে পারে-মৈথুন আবার সফল অ-সফল কি? যথারীতি নর-নারীর মিলন। দৈহিক মিলনের পরিপূর্ণ আনন্দ ও রেতঃপাত। এই ত মৈথুন।
আমরা বলব না, তা নয়।
তবে?
আমরা বলব শতকরা একটি কি দু’টির বেশি মৈথুন সফল মৈথুন হয় না। কেন হয় না? তা বলতে গের সফল মৈথুন কি, সে বিষয়ে আলোচনা করতে হয়। স্ত্রীর কামনার তৃপ্তি কম বেশি হয়ত হয়ে থাকে। তথাপি স্ত্রী গর্ভবতী হ’য়ে সন্তানের জন্মও দিতে সুরু করে, তবু তা সফল মৈথুন হয় না।
কেন?
এর উত্তর হলো শৈথুন বা রেতঃপাত অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু সফল মৈথুন খুব অল্প জনের ভাগ্যেই ঘটে থাকে।
এবার সে বিষয়ে আলোচনা করব।

সফল মৈথুনের পরিচয়
যে মৈথুন করলে শারীরিক, মানসিক ও দৈহিক কোনও ক্ষতি হয় না। উলটে কর্মে আনন্দ ও একাগ্রতা আসে এবং মৈথুনের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়; স্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায় এবং হৃদয় প্রফুল্ল ও শান্ত, ্লিগ্ধতায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে-তাকে সফল মৈথুন বলে।

সফল মৈথুনের ফল
১। মনের শান্তি পায়। মন সর্বকাজে দৃঢ় হ’য়ে থাকে ও মনের উৎসাহ বাড়ে।
২। কাজকর্মে একাগ্রতা আনে। কাজকর্মের দিকে মন সংযোগ বৃদ্ধি পায়।
৩। দৈহিক ও মানসিক তৃপ্তির জন্যে কর্মক্ষমতা বৃৃদ্ধি পায়। নিজেকে গর্ব অনুভব করে।
৪। স্ত্রীর প্রতি প্রেম বৃদ্ধি পায় ও স্ত্রীকে প্রকৃত ভালবাসতে পারে। স্ত্রীর আকর্ষণ আসে স্বামীর প্রতি।
৫। অন্য নারীর প্রতি আকর্ষণ থাকে না।

অসফল মৈথুনের ফল
১। মনে শান্তি থাকে না। মন ধীরে ধীরে অবসাদে ভরে ওঠে। মেজাজ হ’য়ে যায় খিটখিটে।
২। সব সময় মন উত্তেজিত ও বিরক্ত থাকে।
৩। মানসিক দুর্বলতা প্রযুক্ত কাজকর্মে ইচ্ছা কমে যায়।
৪। স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা কমে আসে।
৫। পরনারীর প্রতি আকর্ষণজনিত চরিত্রদোষ ঘটতে পারে। পতিতারয় গমনও ঘটতে পারে।
৬। শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে-সব সময় শরীর ভার ভার বোধ হয়। আহার ও নিদ্রার প্রতিও আকর্ষণ কমে যায়।
৭। বায়ুর প্রাবল্য, চোখ মুখ জ্বালা করতে থাকে।
৮। মাথা ঘোরে ও গা বমি বমি করে।
৯। ধীরে ধীরে মৈথুনের প্রতি ঘৃণাও জন্মাতে পারে।
এখন কথা হচ্ছে কি করলে মৈথুন সফল করা যায়।
মৈথুন অ-সফল হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে-উপযুক্ত পুরুষ ও নারীর মিলনের অভাব।

অ-সফল মৈথুনের কারণ
এবারে অ-সফল মৈথুনের কতকগুলি প্রধান কারণের বিষয় লেখা হচ্ছে-এগুলিও মনে মনে চিন্তা ও বিচার করে নিতে হবে।
১। মৈথুনের আগে নারীকে উত্তেজিত না করা।
২। মৈথুনে যোগ্যভাবে নিজেকে তৈরী না করা।
৩। উপযুক্ত আসন না করে মৈথুনে লিপ্ত হওয়া।
৪। শক্তির অভাবে মৈথুন পূর্ণ হ’তে পারে না।
৫। অসুস্থ অবস্থায় মৈথুন্তএতে তত পূর্ণ আনন্দ হয় না। দৈহিক ক্ষতি করে।
৬। ঘন ঘন মৈথুন্তএটি অবশ্য পরিত্যজ্য। ইহা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
৭। অযোগ্য স্ত্রী-স্ত্রী উপযুক্ত না হলে পূর্ণ মৈথুন হয় না।
৮। অন্যান্য অসুবিধা বা মানসিক কারণ।
৯। স্বামী বা স্ত্রীর অন্য নারী বা পুরুষের প্রতি গোপন আসক্তি।
১০। প্রকৃত উত্তেজনা ছাড়া মৈথুন।

উত্তেজনার বিচার
এবারে প্রকৃত উত্তেজনা কি ও কি তার লক্ষণ সে বিষয়ে বলা হচ্ছে।
উত্তেজনা দুই প্রকার-(১) আসল (২) নকল বা বাহ্যিক।
যে যৌন উত্তেজনা সাধারণতঃ নর-নারীর মধ্যে দেখা যায় তা প্রায়ই নকল উত্তেজনা।
নকল কেন তার প্রমাণ করে দেওয়া হবে-আগে আসল উত্তেজনার লক্ষণ কি তাই বলা হচ্ছে।
নারী পুরুষকে বা পুরুষ নারীকে কাছে টেনে নিয়ে পরস্পর উত্তেজনা সৃষ্টির প্রয়াস পায় এবং তার ফলে যদি হৃদয়ে উত্তেজনা জাগে তা প্রকৃত উত্তেজনা নয়।
হৃদয়ে আপনা থেকেই ভাবভঙ্গীর মুখে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হবার দুর্দমনীয় কামনা যদি জাগে তবে তা হলো আসল অর্থাৎ প্রকৃত উত্তেজনা।
প্রকৃত উত্তেজনা সম্বন্ধে বাৎস্যায়ন বলেছেন।-
যদি কোন নারীর স্মৃতি (চেহারা) বা ধ্যান ছাড়াও আপনা থেকেই হৃদয় উত্তেজিত হ’য়ে উঠে, তবে তা হরো প্রকৃত উত্তেজনা।
কিন্তু এ হলো সেই যুগের কথা-মানুষ যখন প্রকৃতির উপর নির্ভর করে চলতো। প্রকৃতির উপর নির্ভর করে সে নিজের মানসিক অবস্থা নিরূপণ করতো।
আজকাল যুগ পালটে গেছে।
নারী মূর্তি দর্শন আজকাল হামেশাই করতে হয়। হাটে-বাজারে চারপাশে নারীর নানা ভঙ্গির নানা ছবি নানা বিজ্ঞাপন। নারীর দেহ আর যৌবনের নানারূপ ভঙ্গিমার বিজ্ঞাপন দিয়েই আজকাল প্রচুর জিনিস বিক্রি হয়। সাইনবোর্ডেও নারীর নানারূপ প্রতিকৃতি দেখা যায়।
তবে আজকাল সেভাবে প্রকৃত উত্তেজনা বোজা সহজ কথা নয়।
প্রকৃত উত্তেজনা তাই আজকাল অন্যভাবে সি’র করা হ’য়ে থাকে।
অর্থাৎ যখন চিত্তবৃত্তি আপনা থেকেই নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং মনকে কিছুতেই আর সংযত করা যায় না, তখনই প্রকৃত উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং তাকেই প্রকৃত উত্তেজনা বলে।
এ কথা ঠিক যে প্রকৃত উত্তেজনা ছাড়া মৈথুন করা উচিত নয়। তেমনি প্রকৃত উত্তেজনা জাগলে তা দমন করা ঠিক নয়। তাতে দৈহিক ও মানসিন ক্ষতি হ’তে পারে।
প্রকৃত উত্তেজনার সময় ব্যতীত মৈথুন করলে তা মৈথুন হতে পারে না।

মৈথুনের শক্তির স্বল্পতা
মৈথুনে শক্তির স্বল্পতা আর শীঘ্র রেতঃপাত করলে একই কথা, কিন্তু দু’টির কারণ কিছুটা ভিন্ন।
শীঘ্র বীর্য্য পতন এক ধরনের রোগ। এ বিষয়ে আমরা এর পরে রোগের পরিচ্ছেদে বিশেষভাবে আলোচনা করব।
কিন্তু মৈথুন শক্তির স্বল্পতা একটা প্রধান জিনিজ। এটি দৈহিক ও মানসিক অবস্থার ওপর হ’য়ে থাকে। কারণঃ-
১। অধিক উত্তেজনা।
২। ঘন ঘন উত্তেজনা কিন্তু কম পরিমাণে।
৩। যখন উত্তেজনা আসে তখন স্ত্ররি সঙ্গে মৈথুন না করা।
৪। মৈথুনের সময় ভয়, লজ্জা ও কোন বাধা।
৫। বহুদিন বাদে মৈথুন করা।
৬। হস্তমৈথুন করা।
৭। দৈহিক অসুস্থতা।
৮। জন্মগত দুর্বলতা।
৯। যৌন ব্যাধি ইত্যাদি।
প্রতিকার-শীঘ্র পতন, যৌন ব্যাধি জন্মগত দুর্বলতা ইত্যাদি বিষয়ে এর পরে আলোচনা করা হয়েছে। প্রত্যেক রোগের কি ঔষধ তাও বলা হয়েছে।
নেশা সেবন
কোন প্রকার নেশা করা অবশ্যই অনুচিত বলে শাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে। তবে কিছু সংখ্যক লোক মৈথুন শক্তি বাড়াবার মত কিছু কিছু নেশা করে থাকেন। তবে নেশা যদি সামান্য হয় অর্থাৎ তাতে যদি ঠিক পুরা মাদকতা না আসে, অথচ যৌন ক্ষমতা যদি সামান্য বৃদ্ধি পায়, তবে তা নিশ্চয়ই উপকারী।
নেশায় যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়?
ঠিক তা নয়-নেশায় বীর্য্যকে কিছুটা শুকিয়ে গাঢ় করে দেয়, তাই কিছুটা বেশী সময় ধরে মৈথুন করা চলে।
শাস্ত্রের মতে মাদক দ্রব্য অল্প পরিমাণে অবশ্য ইন্দ্রিয় শক্তি ও দৈহিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রতিটি ঔষধের সাথে ব্যবহার করা হয়।
যেমন- (১) এ্যালকোহল। (২) সিদ্ধি। (৩) আফিং ইত্যাদি
কিন্তু পরিমাণে তা ব্যবহৃত হয় খুব কম-ঠিক মাত্রা অনুযায়ী।
কিন্তু লজ্জাশালী রমণী স্বামীর এ প্রস্তাব প্রকারান্তরে প্রত্যাখ্যান করে। এতে স্বামী অবশেষে মনঃক্ষুন্ন হয় এবং বেশ্যালয়ে যাওয়া সুরু করে। পেটের দায়ে যারা এ বৃত্তিকে স্বেচ্ছায় বরণ করে নিয়েছে, পয়সা রোজগারের জন্য যত নগ্ন ও গর্হিত কাজই হোক না কেন, এরা তা করে।
আর একটা কথা।
সাধালণ খাদ্য পানীয় দ্বারা যতটা সম্ভব ততটা যৌন ক্ষমতা আগে বাড়াবার চেষ্টা করা উচিত। তারপর অবশ্য ঔষধ। ঔষধের চেয়ে বেশী মাত্রায় নেশা ভাল নয়।
যৌন ইন্দ্রয়ের অক্ষমতা
যৌন ইন্দ্রয়ের অক্ষমতা হলো সকল মৈথুনের আর একটা প্রধান অন্তরায়।
মৈথুন শক্তির অক্ষমতা আর যৌন অক্ষমতার কারণ কিন্তু ঠিক এক নয়। মৈথুন শক্তির অক্ষমতা সক্ষম ইন্দ্রিয় শক্তি থাকলেও হতে পারে।
কিন্তু অনেকের ইন্দ্রিয় আবার ঠিক তার মত দৃঢ় হয় না। আর ইন্দ্রিয় দৃঢ় না হলে মৈথুন ক্ষমতা স্বাভাবিক হয় না।
এর প্রকৃত কারণ কি?
এ বিষয়ে নানা আলোচনা আগে করা হয়েছে। এখনও করা হবে।
ইন্দ্রিয় উত্তেজিত না হবার কারণ হলো অবশ্য শারীরিক দুর্বলতা। কিন্তু তা আসে কেন?
(১) অমিতাচার।
(২) জন্মগত অক্ষমতা।
(৩) যৌন ক্ষমতার অভাব।
(৪) হস্তমৈথুন অভ্যাস ইত্যাদি।
যাই হোক যৌন ইন্দ্রিয়ের অক্ষমতা উপযুক্ত চিকিৎসক দ্বারা অবশ্যই চিকিৎসা করান দরকার।
তা না হলে যৌন ইন্দ্রিয়ের ক্রমশঃ আরও মারাত্নক হ’য়ে অন্য রোগের সূচনা করতে পারে।
অযোগ্য স্ত্রী
 স্ত্রী, মৈথুনে অযোগ্য হয় কেমন করে?
এর উত্তর হলো-মৈথুনের উপযুক্ত ভাবে সহায়ক না হলে সেই স্ত্রীকে অযোগ্য বলা হয়।
স্ত্রী অযোগ্য কি করে হতে পারে।
১। মৈথুনে অনাসক্তি।
২। উপযুক্ত শ্রেণী হিসাবে মিল না হবার জন্য মৈথুনে অক্ষমতা। যেমন বৃষ বা অশ্ব জাতীয় পুরুষের সাথে পদ্মিনী জাতীয় স্ত্রীর।
৩। দৈহিক গঠনের জন্য মৈথুনে অতৃপ্তি।
৪। লজ্জা ও ভয় ইত্যাদি কারণে স্বামীর সঙ্গে মৈথুনে লিপ্ত না হতে ইচ্ছা।
৫। হৃদয়ে প্রেমের অভাব।
৬। গোপন প্রণয়ী-স্বামীর প্রতি আসক্তি বা প্রেমের অভাব।
এর জন্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মানসিক হলে তার জন্যে স্ত্রীকে ভালোবেসে তার হৃদয় জয় করতে হবে।
দৈহিক হলে, চিকিৎসার প্রয়োজন। নারী পুরুষ উভয়েই সমশ্রেণীর না হলে মৈথুনকালীন বিবিধ অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এই অসুবিধাই হলো অ-সফল মৈথুন।

মৈথুনে অন্যান্য অসুবিধা
  সফল মৈথুনের অন্যান্য অসুবিধা হলো-
(১) আর্থিক অস্বচ্ছলতা।
(২) যোগ্য স্থানের অভাব।
(৩) খাদাদির অভাব ও দৈহিক দুর্বলতা ইত্যাদি।
একথা অবশ্যই ঠিক যে সুবিধাজনক সময়, স্থান, খাদ্যদির অভাব হলে, মৈথুন, সফল হ’তে পারে না। কোন গরীব বা অভাবী লোক আগে খাদ্যের যোগাড় করবে তারপর মৈথুন।
এখানে আর একটি প্রয়োজনীয় কথা হলো-প্রাচীন শাস্ত্র কারক বলেছেন যে, সফল মৈথুন নর-নারীর আনন্দ প্রাপ্তির উৎস তা ঠিক।
সফল মৈথুন না হলে, হৃদয়ে পূর্ণ আনন্দ প্রাপ্তি না হলে উপযুক্ত সন্তান হয় না। অ-সফল মৈথুনে যে সন্তান হয়, তা জাতির প্রতিবন্ধক স্বরূপ। সফল মৈথুনই প্রকৃত সন্তানের জন্ম দেয়।
অবশেষে একটি প্রধান কথা হলো-মৈথুন যক কম হয় তত ভালো। তাতে রতিশক্তি বৃদ্ধি পায় ওসকল মৈথুনের জন্যে দেহমনকে শক্তি সঞ্চয়ী করে তোলে।

Labels: ,

যৌনাঙ্গের পরিমাপ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত

বহু যুগ ধরে যৌনতা সম্পর্কে নানা সত্য-মিথ্যা ধারণা আমাদের মধ্যে প্রচলিত আছে৷ সেই ধারনাগুলি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত আপনাদের জানানো হল৷

যৌনাঙ্গের পরিমাপ প্রভাবিত করে ?

 একজন মহিলার যৌন সেশনকে বেশী মাত্রায় পরিতৃপ্ত করতে তার পুরুষ সঙ্গীর যৌনাঙ্গের আকার – আকৃতি বা পরিমান- পরিমিতি প্রভাবিত করে না৷ এর পরিমিতি মহিলার যৌন চাহিদা পরিতৃপ্ত করতে পারে না৷ যখন সাইজের প্রশ্ন আসে তখন সবার জন্য এক রকম সাইজ কার্যকরী হয় না৷ তাই যৌন কার্যে এটি একটি আপেক্ষিক বিষয়৷

বেশী বড় পুরুষ যৌনাঙ্গ কখনই মহিলাদের খুব বেশী Stimulate করতে পারে না৷ যৌন কার্যকালে গর্ভাশয়ের আগে পর্যন্ত পুরুষ যৌনাঙ্গ পৌঁছলেই তা পরিতৃপ্তির কারণ হয়৷ তা না হলে সঙ্গমকালীন যৌন পরিতৃপ্তি তেমন সুখকর হয়ে ওঠে না৷ এই পরিস্থিতিতে ক্ষেত্রে মহিলারা Satisfied হয় না৷

সঙ্গম যত বেশী তত ভালো ?

সঙ্গমকালীন অনুভুতি আপনি কেমন করে মিলিত হচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে, আপনি কতবার সঙ্গম করছেন তার ওপর নির্ভরশীল নয়৷ আমাদের মধ্যে ধারণা আছে, যতবেশি বার সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া যায় শারীরিক ক্ষেত্রে তার খুব ভালো ফল পাওয়া যায়৷ আপনার শারীরিক সক্ষমতা বা আপনার সুস্থ স্বাভাবিক শারীরিক অবস্থা আপনাকে যৌন মিলনে আকর্ষিত করে, এমন কিন্তু নয়, বা সুস্থ-স্বাভাবিক ভাবে প্রতিনিয়ত কয়েকবার যৌন মিলন আপনার শারীরিক সুস্থতা বাড়ায়, এই ধারণা ভুল৷
কতবার বা কতক্ষণ ধরে সেক্স্যুয়াল অ্যাক্টিভিটি হচ্ছে তা গুরুত্ব পূর্ণ নয়৷ যৌনতা নিবৃত্তি করাই যৌন মিলনের মূল বিষয় নয়, এটিও এক চরম আনন্দ যা দুজনে একসঙ্গে একভাবে অনুভব করে৷

যৌন মিলনের পদ্ধতি সকলেই জানে ?

প্রথমবার যৌন মিলনকালে প্রত্যেকেই এই ঘটনার জন্য কৌতুহলী থাকে৷ অত্যধিক আগ্রহ বা কৌতুহল বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে শীঘ্রপতনের সমস্যার সৃষ্টি করে৷ এছাড়া সঠিক পদ্ধতিতে যৌনকার্য সম্পাদিত হয় না৷ প্রথম মিলন কালীন সৃষ্ট এই অসুবিধাকে বলা হয় performance anxiety৷ যখন কোন জুড়ি প্রথমবার মিলনে আবদ্ধ হচ্ছেন তার আগে এবিষয়ে সঠিক ভাবে জেনে নেওয়া ভীষণ জরুরি৷
যৌন ইচ্ছা মানুষের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে চলে আসে ৷ এটি জন্মগত প্রাপ্ত একটি কামনা যা প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যে দেখা যায়৷ আর প্রাকৃতিকগত ভাবেও এই ইচ্ছাটি আমাদের মধ্যে চলে আসে৷ কিন্তু এই কাজের পদ্ধতি আমরা শিখি না৷ যৌন সঙ্গম নিয়ে যে সকল অবিচ্ছিন্ন ধারণা আমাদের মধ্যে প্রচলিত আছে তা থেকে বেড়িয়ে আসতে বা এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণা তৈরি করতে আমাদের এই বিষয়ে সিক্ষা গ্রহণ করা উচিত৷
যৌন মিলন যেকোন স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে অতি প্রয়োজনীয় একটি চাহিদা তাই এর সঠিক প্রগোগ কৌশল জানা আমাদের একান্ত জরুরী৷

পুরুষের যৌন চাহিদা বেশী থাকে ? 

যৌনতায় পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়েরই সমান আগ্রহ থাকে৷ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ ভালোবাসে যৌন পরিতৃপ্তি পাওয়ার জন্য৷ আর মহিলাদের ক্ষেত্রে ঘটনাটি ঘটে ঠিক উল্টো৷ অর্থাৎ মহিলারা যৌন মিলনে এগিয়ে আসে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য৷ যৌন মিলন ভালোবাসার পরিনতি হতে পারে এর উল্টোটা কখনই হয় না অর্থাত যৌন মিলনের ফলে ভালোবাসা সৃষ্টি হতে পারে না৷
মহিলারা তাদের শারীরিক চাহিদা সম্পর্কে এত মুখর হয় না৷ পুরুষ এই চাহিদার কথা অতি সহজেই বলতে পারলে ও মহিলারা তাদের যৌন চাহিদার কথা খুব সহজে বলতে পারেন না৷ কিন্তু আজকাল দেখা যাচ্ছে মহিলারাও এই ব্যপারে তাদের মতামত বা চাহিদার কথা জানাতে বা বলতে দ্বিধা বোধ করছেন না৷

Labels: , ,

কিভাবে অধিক সময় যৌন মিলন করবেন? তিনটি গুরুত্বপুর্ন পদ্ধতি।

মিলনে পুরুষের অধিক সময় নেওয়া পুরুষত্বের মুল যোগ্যতা হিসাবে গন্য হয়। যেকোন পুরুষ বয়সেরর সাথে সাথে  মিলনের নানাবিধ উপায় শিখে থাকে। এখানে বলে রাখতে চাই – ২৫ বছরের কম বয়সী পুরুষ সাধারনত বেশি সময় নিয়ে মিলন করতে পারেনা। তবে তারা খুব অল্প সময় ব্যাভধানে পুনরায় উত্তেজিত/উত্তপ্ত হতে পারে। ২৫ এর পর বয়স যত বাড়বে মিলনে পুরুষ তত বেশি সময় নেয়। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে  পুনরায় জাগ্রত (ইরিকশান) হওয়ার ব্যাভধানও বাড়তে থাকে।

তাছাড়া এক নারী কিংবা একপুরুষের সাথে বার বার মিলন করলে যৌন মিলনে বেশি সময় দেয়া যায় এবং মিলনে বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায়। কারন স্বরুপ: নিয়মিত মিলনে একে অপরের শরীর এবং ভাললাগা/মন্দলাগা, পছন্দসই আসনভঙ্গি, সুখ দেয়া নেয়ার পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত থাকে।
[উল্লেখ্যঃ যারা বলেন “এক তরকারী দিয়ে প্রতিদিন খেতে ভাল লাগেনা – তাই পর নারী ভোগের লালসা” – তাদেরকে অনুরোধ করছিঃ দয়াকরে মিথ্যাচার করবেন না। এমন যুক্তি ভিত্তিহীন। পরকীয়া আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে। মাত্র কয়েক মিনিটের কাম যাতনা নিবারনের জন্য আজীবনের সম্পর্কে অবিশ্বাসের কালো দাগ লাগাবেন কেন? অবিবাহীত ভাই ও বোনেরা, আপানাদের কি অতটা বড় বুকের পাটা আছে – যদি বিয়ের পরে আপনি জানেন যে আপনার স্ত্রী ‘সতী’ নয় তখন তার সাথে বাকি জীবন কাটাবেন? তাহলে কেন শুধু শুধু বিবাহ-পুর্ব মিলনের জন্য এত ব্যকুলতা? যে ধরনের নারীকে আপনি গ্রহন করতে পারবেন না – অথচ সেই আপনি অন্য পুরুষের ভবিষ্যৎ বধুর সতীত্ব লুটবেন?
দুঃখিত যদি কারো ব্যক্তি সত্বায় আঘাত করে থাকি।]
মুল আলোচনায় আসি। বলছিলাম যৌন মিলনে অধিক সময় দেয়ার পদ্ধতি সমুহ নিয়ে…

পদ্ধতি ১:- চেপে/টিপে (স্কুইজ) ধরা:
এই পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেছেন মাষ্টার এবং জনসন নামের দুই ব্যাক্তি। চেপে ধরা পদ্ধতি আসলে নাম থেকেই অনুমান করা যায় কিভাবে করতে হয়। যখন কোন পুরুষ মনে করেন তার বীর্য প্রায় স্থলনের পথে, তখন সে অথবা তার সঙ্গী লিঙ্গের ঠিক গোড়ার দিকে অন্ডকোষের কাছাকাছি লিঙ্গের নিচের দিকে যে রাস্তা দিয়ে মুত্র/বীর্য বহিঃর্গামী হয় সে শিরা/মুত্রনালী কয়েক সেকেন্ডর জন্য চেপে ধরবেন। (লিঙ্গের পাশ থেকে দুই আঙ্গুল দিয়ে ক্লিপের মত আটকে ধরতে হবে।)। চাপ ছেড়ে দেবার পর ৩০ থেকে ৪৫ সেকেন্ডের মত সময় বিরতী নিন। এই সময় লিঙ্গ সঞ্চালন বা কোন প্রকার যৌন কর্যক্রম করা থেকে বিরত থাকুন।
এ পদ্ধতির ফলে হয়তো পুরুষ কিছুক্ষনের জন্য লিঙ্গের দৃঢ়তা হারাবেন। কিন্তু ৪৫ সেকেন্ড পুর পুনরায় কার্যক্রম চালু করলে লিঙ্গ আবার আগের দৃঢ়তা ফিরে পাবে।
স্কুইজ পদ্ধতি এক মিলনে আপনি যতবার খুশি ততবার করতে পারেন। মনে রাখবেন সব পদ্ধতির কার্যকারীতা অভ্যাস বা প্রাকটিস এর উপর নির্ভর করে। তাই প্রথমবারেই ফল পাওয়ার চিন্তা করা বোকামী হবে।

পদ্ধতি ২:- সংকোচন (টেনসিং):
এ পদ্ধতি সম্পর্কে বলার আগে আমি আপনাদের কিছু বেসিক ধারনা দেই। আমরা প্রস্রাব করার সময় প্রসাব পুরোপুরি নিঃস্বরনের জন্য অন্ডকোষের নিচ থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত অঞ্চলে যে এক প্রকার খিচুনী দিয়ে পুনরায় তলপেট দিয়ে চাপ দেই এখানে বর্নিত সংকোচন বা টেনসিং পদ্ধতিটি অনেকটা সে রকম। তবে পার্থক্য হল এখনে আমরা খিচুনী প্রয়োগ করবো – চাপ নয়।
এবার মুল বর্ননা – মিলনকালে যখন অনুমান করবেন বীর্য প্রায় স্থলনের পথে, তখন আপনার সকল যৌন কর্যক্রম বন্ধ রেখে অন্ডকোষের তলা থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত অঞ্চল কয়েক সেকেন্ডের জন্য প্রচন্ড শক্তিতে খিচে ধরুন। এবার ছেড়ে দিন। পুনরায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য খিচুনী দিন। এভাবে ২/১ বার করার পর যখন দেখবেন বীর্য স্থলনেরে চাপ/অনুভব চলে গেছে তখন পুনরায় আপনার যৌন কর্ম শুরু করুন।
সংকোচন পদ্ধতি আপনার যৌন মিলনকে দীর্ঘায়িত করবে। আবারো বলি, সব পদ্ধতির কার্যকারীতা অভ্যাস বা প্রাকটিস এর উপর নির্ভর করে। তাই প্রথমবারেই ফল পাওয়ার চিন্তা করা বোকামী হবে।

পদ্ধতি ৩:- বিরাম (টিজিং / পজ এন্ড প্লে):
এ পদ্ধতিটি বহুল ব্যবহৃৎ। সাধারনত সব যুগল এ পদ্ধতির সহায়তা নিয়ে থাকেন। এ পদ্ধতিতে মিলনকালে বীর্য স্থলনের অবস্থানে পৌছালে লিঙ্গকে বাহির করে ফেলুন অথবা ভিতরে থাকলেও কার্যকলাপে বিরাম দিন। এই সময় আপনি আপনাকে অন্যমনস্ক করে রাখতে পারেন। অর্থ্যৎ সুখ অনুভুতি থেকে মনকে ঘুরিয়ে নিন।যখন অনুভব করবেন বীর্যের চাপ কমে গেছে তখন পুনরায় শুরু করতে পারেন।
বিরাম পদ্ধতির সফলতা সম্পুর্ন নির্ভর করে আপনার অভ্যাসের উপর। প্রথমদিকে এ পদ্ধতির সফলতা না পাওয়া গেলেও যারা যৌন কার্যে নিয়মিত তারা এই পদ্ধতির গুনাগুন জানেন। মনে রাখবেন সব পদ্ধতির কার্যকারীতা অভ্যাস বা প্রাকটিস এর উপর নির্ভর করে। তাই প্রথমবারেই ফল পাওয়ার চিন্তা করবেন না।

পরিশিষ্ট:
উপরের সবকয়টি পদ্ধতি আপনার সঙ্গীর তৃপ্তির উদ্দেশ্যে। অনেকের ধারনা নারী এ ট্রিকস্ গুলো অনুমান বা জানতে পারলে পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। ধারনাটি সম্পুর্ন ভুল। আপনি আপনার স্ত্রীকে পদ্ধতিগুলো বুঝিয়ে বলুন। দেখবেন সেই আপনাকে সাহায্য করছে। কারন সে জানে আপনি বেশি সময় নেয়া মানে সে লাভবান হওয়া।

Labels:

নারীকে যৌন উত্তেজিত করার চারটি সুত্র

১. সিঙার: বেশির ভাগ নারী মিলনপুর্ব সিঙারে সরাসরি যৌন মিলনের ছেয়ে বেশি তৃপ্তি পেয়ে থাকে। তাই ফোর-প্লে তে অধিক সময় নিন।

 ২. কল্পনা / ফ্যান্টাসী: শাররীক মিলনকালে অথবা অন্য সময় যৌনতা নিয়ে কল্পনা করা মোটেও ভুল নয়। সঙ্গীর উত্তেজক কর্মকান্ডের সাথে আপনার কল্পনা মিশিয়ে এক সুখকর আবেশে জড়াতে পারেন। কল্পনার রাজ্যে সব পুরুষ রাজা আর তার সঙ্গী রাণীর আসনে থাকে।

৩. সরাসরি মিলনে দেরী করা: নারী, বিশেষ করে তরুনীরা সাধারনত বেশি বেশি চুমা, ছোয়া সহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক যৌন উত্তেজক বিষয় একটু বয়স্কদের চেয়ে বেশি কামনা করে। বয়সবেধে চরম উত্তেজনায় পৌছতে কম/বেশি সময় নিয়ে থাকে। আপনার সঙ্গীর আকাঙ্খার উপর ভিত্তি করে পেনিট্রেশানের আগে আরো কিছু সুখ আদান প্রদান করুন।

৪. ভাইব্রেটর: আমাদের দেশে এখনো সেক্স টয় বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ। তাই নারীকে উত্তেজিত করার জন্য ভাইব্রেটর এর বিকল্প আপনার মধ্যমা আঙুলী দিয়ে তার যোনীর ভিতর জি-স্পট (যৌনাঙ্গের কিছুটা ভিতরে অতি সংবেদনশীল অঞ্চল) এ কম্পন সৃষ্টি করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন কোন অভ্যাস যেন স্থায়ী না হয়ে যায়?

Labels:

কেন খাবেন পুষ্টিতে ভরপুর ও ঔষধিগুণের আনারস?

এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে মৌসুমি ফল আনারস। আনারস একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল। সৌন্দর্যের জন্য এ ফলকে ‘স্বর্ণকুমারী’ বলে অ্যাখায়িত করা হয়। আমাদের দেশে অনেক স্থানেই আনারসের চাষ হয়।

তবে মূলত সিলেট, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় ব্যাপক আকারে আনারসের চাষ করা হয়। আনারস ফল যেমন রসালো তেমনি আছে এর পুষ্টি আর ঔষধি গুণ। আসুন জেনে নেয়া যাক রসে টইটুম্বুর এই ফল সম্পর্কে:

ইতিহাস:

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফল আনারস। এর বৈজ্ঞানিক নাম Ananas comosu।দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণ অঞ্চল হচ্ছে আনারসের উৎপত্তিস্থল। বিশেষ করে দক্ষিণ ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ের বিভিন্ন অঞ্চলে। আনারস গাছ ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজদের দ্বারা ব্রাজিল থেকে মালাবার উপকূলে আমদানি হয়।
পরবর্তীতে সমগ্র দক্ষিণ আমেরিকা ও পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে আনারসের চাষ প্রবর্তিত হয় এবং ক্রমে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দো চীন, ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্র (হাওয়াই রাজ্য), মেক্সিকো, মালয়েশিয়া, পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ও অস্ট্রেলিয়ায় এর চাষ প্রসার লাভ করে।

পুষ্টি উপাদান :

পুষ্টিগুণে আনারস অতুলনীয়। প্রতি ১০০ গ্রামে আনারসে পাওয়া যায় ৫০ কিলোক্যালরি শক্তি। এতে ভিটামিন-এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
১০০ গ্রাম আনারসে ০.৬ ভাগ প্রোটিন, ০.১২ গ্রাম সহজপাচ্য ফ্যাট, ০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১৩.১২ গ্রাম শর্করা, ০.১১ গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৪ মি. গ্রাম ভিটামিন-২, ভিটামিন- সি ৪৭.৮ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০২ গ্রাম, আঁশ ১.৪ গ্রাম এবং ১.২ মিলি গ্রাম লৌহ রয়েছে।

ব্যবহার :

আমাদের দেশে সাধারণত পাকা আনারস খাওয়া হয়। কেটে পিস করে অথবা জুস করে। পাকা আনারস স্বাদে মিষ্টি। তবে কাঁচা আনারসের চাটনি তৈরি করা যায়। কাঁচা আনারস টক হয়। আনারস টিনজাত ফল হিসেবেও সংরক্ষণ করা হয় এবং এই ধরনের আনারসের চাহিদা বিদেশের বাজারে খুব বেশি।
আনারস দিয়ে জ্যাম, জেলি, স্কোয়াশ, রস প্রভৃতি তৈরি হয় এবং তা বিদেশে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এছাড়া আনারস থেকে কোনো কোনো সময় অ্যালকোহল ভিনেগার, সাইট্রিক এসিড উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্নায় ও সালাদে আনারসের ব্যবহার তো রয়েছেই।

ঔষধি গুণ:

শুধু পুষ্টিগুণেই সমৃদ্ধ নয় আনারস। আছে এর বহুমুখী ঔষধিগুণ।

১. কোষক্ষয় রোধ করে:

আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। যেগুলো শরীরের কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে অথেরোস্ক্লেরোসিস, হার্ট রোগ, বাত এবং বিভিন্ন ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়।

২. সর্দি-কাশিতে সুরক্ষা দেয়:

আনারসে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং bromelain। যা জীবাণুর সংক্রমণ বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবনের পাশাপাশি আনারস খেলে সর্দি-কাশি থেকে কার্যকরভাবে আরোগ্য লাভ সহজ হয়।

৩. হাড় শক্ত করে:

প্রচুর পরিমান ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে আনারসে। যা হাড় ও কানেক্টিভ টিস্যুকে করে শক্তিশালী। এক কাপ আনারসের জুস আমাদের দৈনিক প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজের ৭৩ ভাগ পূরণ করতে সক্ষম।

৪. স্বাস্থ্যকর মাড়ি ও দাঁতে:

আনারস খেলে ভালো থাকবে আপনার দাঁতের মাড়ি আর দাঁত দুটোই। আর ভুলে যাবেন না এতে আছে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁতের জন্য উপকারী।

৫. কৃমিনাশক:

আনারস কৃমিনাশক। কৃমি দূর করার জন্য সকালে খালি পেটে আনারস খাওয়া উচিত। তবে অবশ্যই এ্যাসিডিটি থাকলে খালি পেটে আনারস ক্ষতি করতে পারে।

৬. রক্ত পরিষ্কার করে:

দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল। ফলে শিরা-ধমনির দেয়ালে রক্ত না জমার জন্য সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে। ফলে রক্ত শোধনে এই ফলের ভূমিকা রাখে।

৭. হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বাড়ায়:

আনারস রক্ত পরিষ্কার করে হৃৎপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে। হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। এছাড়াও হৃৎপিণ্ডের নানা রকম অসুখে থেকে আনারস দেয় সুরক্ষা।

৮. ত্বকের যত্নে:

আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। ত্বকের অসুখ, জিহ্বা, তালু, দাঁত, মাড়ির যে কোনো অসুখের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আনারস। দেহের তৈলাক্ত ত্বক, ব্রণসহ সব রূপলাবণ্যে আনারসের যথেষ্ট কদর রয়েছে। এছাড়াও আনারসের প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচায়।

৯. উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে:

আপনি যদি উচ্চরক্ত চাপে ভুগছেন? এবং এটি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছেন? তবে আনারস আপনার জন্য হবে আদর্শ খাদ্য। কারণ, আনারসে আছে উচ্চ পরিমাণে পটাসিয়াম এবং কম পরিমাণে সোডিয়াম, যা আপনার রক্তচাপের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

১০. রোগীর পথ্য হিসেবে:

আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, যা আমাদের শক্তি জোগায়। গবেষণায় দেখা গেছে, আনারস গলা ব্যথা, সাইনোসাইটিসজাতীয় অসুখগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে। হজমে সাহায্য করে। সঙ্গে শরীরের অন্য অঙ্গগুলোকেও ভালো রাখে।
দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহয়তা করে আনারস। আবার আনারস ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে কাজ করে। যে কোনো অসুস্থতার পরে মুখে রুচির জন্য আনারস খাওয়া যেতে পারে।
মোট কথা, দেহের পুষ্টি সাধন এবং দেহকে সুস্থ-সবল ও নিরোগ রাখার জন্য আনারস অতুলনীয় এবং কার্যকরী একটি ফল। বাজার থেকে ফরমালিন মুক্ত টাটকা আনারস কিনে এনে নিয়মিত খান। আর সুস্থ থাকুন, প্রিয়।

Labels: ,