Monday, January 19, 2015

লালশাক খাবেন যে কারণে


Lalshak


লাল শাক রূপে যেমন মনোহারী গুণেও তেমন কার্যকরী। পাতের ভাতকে নতুন রূপ দিতেও সেরা। ছোট বড় সবাই এর স্বাদের ভক্ত। বাজারে এখন শীতকালীন ফসল লাল শাকের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। তাই আজ জেনে নেয়া যাক লাল শাকের পুষ্টিগুণ।

প্রতি ১০০ গ্রাম লাল শাকে আছে ক্যালসিয়াম ৩৭৪ মি. গ্রা., শর্করা ৪.৯৬ মি. গ্রা., প্রোটিন ৫.৩৪ মি. গ্রা., স্নেহ ০.১৪ মি. গ্রা., ভিটামিন বি১ ০.১০ মি. গ্রা., ভিটামিন বি২ ০.১৩ মি. গ্রা., ভিটামিন সি ৪২.৯০ মি. গ্রা., ক্যারোটিন ১১.৯৪ মি. গ্রা., অন্যান্য খনিজ ১.০৬ মি. গ্রা., খাদ্য শক্তি ৪৩ কিলোক্যালরি।
* লাল শাক রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
* লাল শাকের এন্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
* মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করতে লাল শাকের ভূমিকা অনেক।
* ক্যালসিয়াম দেহের জন্য অত্যন্ত দরকারী একটি উপাদান। বিশেষ করে দাঁতের সুস্থতা, হাঁড় গঠন, গর্ভবতী এবং

প্রসূতি মায়েদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে এই শাক উপকারী।

Labels:

প্রসব-পরবর্তী বিষণ্নতা

post pregnancy



ডা. মুনতাসীর মারুফ :: নতুন শিশুটিকে নিয়ে বাড়িজুড়ে উৎসব। দাদি-ফুফুদের কোলে কোলে ঘোরে সিফাতের প্রথম সন্তান। নানি-খালারাও প্রায় প্রতিদিনই ছুটে আসছে যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুরে। সিফাতের স্বামী শামিমেরও সন্তানকে ঘিরে কতো আয়োজন। কিন্তু এই উৎসবের আমেজের ভেতরেই কেমন যেন বিষাদ ঘিরে থাকে সিফাতকে। কেন থাকে? তারও কোনো উত্তর পায় না সে। প্রায়ই মন খারাপ লাগে, বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে, লুকিয়ে কিছু সময় কেঁদে হালকা হতে চায়, তবু মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারে না অন্তর্গত অস্বস্তির কথা। এমনকি ভালোবেসে বিয়ে করা শামিমকেও না। কি মনে করবে ওরা? এই ভাবনা কণ্ঠ চেপে ধরে তার।

সিফাতের সমস্যাটা সপ্তাহ দুয়েকের মাঝে কমে এলেও শান্তার সমস্যাটা রয়েই যায়। সন্তান জন্মের পর প্রথম এক মাস ভালোই ছিল সে। তারপর ধীরে ধীরে মন খারাপ ভাব বাড়তে থাকে তার। উদ্বেগ, অনিদ্রা, খাওয়ায় অরুচি– সব মিলে বিধ্বস্ত লাগে। তবুও সে বলতে পারে না কাউকে। কেউ তার পরিবর্তনটা লক্ষ করলেও হয়তো গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। অবশেষে সবার টনক নড়ে সেদিন, যেদিন অচেতন শান্তার বিছানার পাশে পড়ে থাকতে দেখা যায় ঘুমের ওষুধের তিনটি খালি পাতা।

সন্তানের আগমন আনন্দের উপলক্ষ হলেও সদ্য মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া নারীদের মন খারাপের অনুভূতির ঘটনা মোটেও বিরল নয়। বরং গবেষকরা বলেন, প্রসবের চার থেকে ছয় সপ্তাহের ভেতর প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রসূতি আবেগজনিত সমস্যার মুখোমুখি হন। নতুন মা অস্থিরতা বোধ করেন, অকারণেই মন খারাপ হয়ে যায়, বিহ্বলতা জাগে, সবকিছু যেন বিশৃঙ্খল-এলোমেলো মনে হয়, কান্না পায় প্রায়শই, আবার হঠাৎ করেই খানিকটা সময়ের জন্য উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, প্রসবের তিন থেকে পাঁচ দিনের ভেতরেই এসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রসব ও প্রসব-পরবর্তী সময়ে নারীদেহে হরমোনের তারতম্য, প্রসবজনিত মানসিক চাপ, মাতৃত্বের দায়িত্ববোধের উপলব্ধি Ñসব মিলিয়েই নারীর এই বিশেষ মানসিক অবস্থাটির সৃষ্টি হতে পারে। স্বস্তির সংবাদ হচ্ছে, এর অধিকাংশই হয়ে থাকে ক্ষণস্থায়ী। কয়েক দিন থেকে সপ্তাহ পর্যন্ত এই লক্ষণগুলো স্থায়ী হতে পারে। প্রসব-পরবর্তী সাময়িক এই মানসিক অবস্থাটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়- ‘বেবি ব্লু’। এ সময় নতুন মায়ের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত সমর্থন, সহমর্মিতা আর শিক্ষা। শিক্ষা-সন্তান প্রতিপালনের, শিক্ষা-দায়িত্বশীলতার, শিক্ষা-দৃঢ়তার সঙ্গে মানসিক চাপ মোকাবেলার। পরিবারের, বিশেষ করে স্বামীর বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে এ সময় স্ত্রীর পাশে থাকার, তাকে সাহস জোগানোর। নতুন মায়েরও উচিত মনের এই দুঃখবোধ চাপা না রেখে স্বামী বা প্রিয় কারো সঙ্গে তা শেয়ার করা, সহযোগিতা কামনা করা।

উপসর্গগুলো যদি থেকে যায় দুসপ্তাহের বেশি, তাহলে প্রয়োজন পড়তে পারে বিশেষজ্ঞ সহায়তার। নারী আক্রান্ত হতে পারেন ‘বিষণ্নতা’ নামের মানসিক অসুখে। গবেষকরা বলেন, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রসূতি আক্রান্ত হন ‘পোস্ট-পারটাম ডিপ্রেশন’ বা প্রসব-পরবর্তী বিষণ্নতায়। ‘বেবি ব্লু’র মতো ক্ষণস্থায়ী হয় না এ রোগ, উপসর্গগুলোও হয় তীব্রতর। প্রায় সার্বক্ষণিক মন খারাপ ভাব, হতাশা, অতিরিক্ত উদ্বেগ, অনিদ্রায় ভোগেন নতুন মা। দৈনন্দিন কাজকর্মে উৎসাহ হারান, মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না কোনো কিছুতে। এমনকি নিজের শখের বা পছন্দের কাজগুলো করতেও আর ভালো লাগে না। অল্প পরিশ্রম বা বিনা পরিশ্রমেই ক্লান্তি বোধ করেন। খাদ্যাভ্যাসে আসে পরিবর্তন। বেশিরভাগেরই খাওয়ার রুচি নষ্ট হয়ে যায়। স্বল্পাহার বা অনাহারে থাকার ফলে কিছুদিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে ওজন কমে যায়। কেউ কেউ আবার বেশি বেশি খেতে শুরু করেন। ফলে তাদের ওজন বেড়ে যেতে পারে অস্বাভাবিক হারে। অনেকেই অকারণে অপরাধবোধে ভোগেন, বিগত দিনের তুচ্ছ-প্রায় ঘটনাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার ফলে নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করেন। সবার মাঝে থেকেও নারী একাকীত্মে ভোগেন, নিজেকে অসহায় লাগে, ধীরে ধীরে পরিবারের সকলের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে খোলসবন্দী হয়ে পড়েন। মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় সামাজিক, পারিবারিক, ব্যক্তিজীবন। নারী তার নিজের জীবন সম্পর্কেই এক সময় উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন, হয়ে ওঠেন আত্মহত্যাপ্রবণ।

প্রসবের ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে নারী আক্রান্ত হতে পারেন বিষণ্নতায়। যাদের বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব ইতিহাস আছে অথবা যাদের পরিবারে কারো বিষণ্নতা আছে বা ছিল, তাদের ক্ষেত্রে প্রসব-পরবর্তী বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যথাযথ চিকিৎসা না নিলে মাস থেকে বছরব্যাপী এ রোগ স্থায়ী হতে পারে। এদের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে গুরুতর বিষণœতায় পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিষণ্নতা নারী তার সন্তানের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। মায়ের বিষণœতার কারণে সন্তান বঞ্চিত হয় উপযুক্ত মাতৃস্নেহ ও সেবা থেকে। বিষণœ নারী যেমন নিজের যত্ন নেন না, তেমনি সন্তানের যত্নেও উদাসীন থাকতে পারেন।
তাই সন্তান-জন্মের আনন্দ উৎসবের মাঝে লক্ষ রাখুন সদ্য মা হওয়া নারীটির মানসিক অবস্থার দিকেও। উপযুক্ত সমর্থন ও সহযোগিতা দিন নতুন মাকে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা করুন বিশেষজ্ঞ সহায়তার।


ডা. মুনতাসীর মারুফ
সহকারী রেজিস্ট্রার
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

Labels:

ঠাণ্ডা জ্বরের হাত থেকে বাঁচাবে যে খাবার


ঠাণ্ডা জ্বরের হাত থেকে বাঁচাবে যে খাবার


শীত আসে। প্রতিবছর শীত অনেক রকম আনন্দ বার্তা নিয়ে আসে। এর মাঝেও কারো কারো জন্য শীত বিভীষিকা হয়ে দেখা দেয়। কারণ, তারা প্রায়ই ঠাণ্ডা জ্বর বা সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হতে থাকেন। যতই উষ্ণতর কাপড়-চোপড়, লেপ-কম্বল ব্যবহার করা হোক না কেন। 
 
তাদের অবধারিতভাবে ভুগতেই হয়। রোগ পরবর্তী এ সব ব্যবস্থার চেয়ে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করাটাই শ্রেয় হবে। এ কাজে সহায়তা করতে পারে কিছু ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যা আমাদের খাদ্যে উপস্থিত থাকে।
আমরা যা কিছুই খাই না কেন, তা আমাদের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করতে পারতে হবে। এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আক্রমণকারী ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করবে। কিন্তু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সেনাসদস্য কোষগুলো কয়েকদিন পর পরই প্রতিস্থাপিত হয় নতুন কোষ দ্বারা। কোনটি বা একদিনও বাঁচে।

আর ভাইরাস দেহে প্রবেশ করলে তাকে কোণঠাসা করতে ১০ মিলিয়ন পর্যন্ত এ্যান্টিবড়ি দেহে রক্তে ঘোরা ফেরা করতে পারে। প্রায় প্রতিটি ভিটামিন ও খনিজ পদার্থই কিছু না কিছু অংশগ্রহণ করলেও ৫টি জরুরি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক উপাদান ও তাদের উৎস সম্পর্কে এখানে জানানো হচ্ছে।

‘ফ্লু’ প্রতিরোধী কপার
রক্তের অন্যতম উপাদান, শ্বেত কণিকা, যারা জীবাণু প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অন্যতম যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে। দেহকে রক্ষা করতে হলে তাদেরও প্রয়োজনমত পুষ্টি দিতে হবে। এ তালিকায় প্রথমে আসবে কপার, যা কণিকাগুলোর বৃদ্ধিতে ব্যাপক সহায়তা করবে। কপার সহজসমৃদ্ধ খাদ্যের মধ্যে আছে শিমাই, মুড়ি, শিম, ডাল, মটরশুঁটি, কেশর আলু, ঢেঁপ, ওলকচু, শামুক, মানকচু ও চকোলেট।

‘ফ্লু’ প্রতিরোধী ভিটামিন ই
অন্যান্য ক্ষেত্রের মতই বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। ৬৫ বছরের পর সুস্থ বৃদ্ধরাও খুব কম সাইটোকাহল নামক জীবাণু রোধের রাসায়নিক মাধ্যমটি উৎপাদন করতে পারে। দেহে প্রবেশকারী জীবাণু গলাধারণকারী ম্যাক্রোদেহ কম থাকে; ন্যাচারাল কিলার কোষও কমে যায়। আর অতিরিক্ত ভিটামিন ই দিলে প্রয়োজনীয় সাইটোকাইন উৎপাদন দ্বিগুণ পর্যন্ত হতে পারে। অন্য কথায় ভিটামিন ই রোগ প্রতিরোধের কিছু কিছু ব্যবস্থাকে দ্বিগুণ হারে কাজে লাগায়।
ভিটামিন ই-র উত্তম উৎস হচ্ছে, সুর্যমুখী ফুলের বীজ, তিল, চীনা বাদাম, গম, লেটুস পাতা, জব, ভুট্টা, উদ্ভিজ তেল, মৎস ও মৎস চর্বি, ডিম ও মুরগির মাংশ।

‘ফ্লু’ প্রতিরোধী ফলিক এসিড ও ভিটামিন বি-১২
জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে যখন কোষের সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়তে থাকে তখন ফলিক এসিড ও ভিটামিন বি-১২, খুব প্রয়োজন হয়ে পড়ে। জিংকের মতই এ ভিটামিনগুলো (বি ভিটামিন) হাঁড়ের ভিতরে প্রচুর পরিমাণে থাকে। আর হাঁড়ের ভিতরে অস্থিমজ্জায়ই এসব কোষ তৈরির কারখানাটি অবস্থিত।
লেটুস পাতা, বাঁধা কপি, বৃক্ক, শিম, কমলা, সবুজ পাতাওয়ালা শাক, বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, জব, ভুট্টা ইত্যাদিতে প্রচুর ফলিক এসিড থাকে।
ভিটামিন বি-১২ শুধু প্রাণিজ খাদ্য যেমন, কলিজা, ডিম ও দুধে থাকে।

‘ফ্লু’ প্রতিরোধী জিংক
দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে সজীব রাখতে জিংক অপরিহার্য। জিংকের অসংখ্য কাজের মধ্যে অন্যতম ছিল অন্থিমজ্জার জীবাণু বিধ্বংসী কোষগুলোর উৎপাদন তদারকি করা। এটি থাইমাস গ্রন্থিরও খোঁজ খবর রাখে। থাইমাসে শ্বেত কণিকরা বিশেষভাবে পরিবর্তিত হয়ে ‘টি’ কোষ তৈরি করে।
জিংকের অন্যতম উৎস হল বিভিন্ন রকম কপি, মটরশুঁটি, তিল, তিসি, শস্যদানা, গো মাংস ও সামুদ্রিক উদ্ভিদ।

‘ফ্লু’ প্রতিরোধী কোয়ার্সেটিন
দেহে আক্রমণকারী ভাইরাসসমূহ দেহকোষকে ধ্বংস করার পর দেহে বেশ কিছু ‘যুক্তমৌল’ (ফ্রি র‌্যাডিকেল) জমা হয় যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে যে কোন সময় উড়িয়ে দিতে পারে। কোয়ার্সেটিন, এক ধরনের প্রাকৃতিক উদ্ভিজ রাসায়নিক পদার্থ যা শাকসবজি ও ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে জমা থাকে, ওই সব যুক্ত মৌলকে নিষ্ক্রিয় করে প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সচল রাখে।

(কায়াসেটিনের অন্যতম উৎস হল পেঁয়াজ, আপেল। বিশেষ করে আপেলের ত্বক), কালো চা, রসুন, মরিচ, জাম ও জাম জাতীয় ফল, আঙুর ও টমেটো।

Labels: ,

হৃদপিণ্ডের সুস্থতায় ঘণ্টায় ৫ মিনিট!

walk benefit for health


অনেকটা সময় একটানা আমরা অফিসে বা বাড়িতে বসে কাজ করি। ফলে হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটে এবং হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ পড়তে থাকে। এতে হৃদপিণ্ডের ক্ষতি হয়। এছাড়াও পায়ের এবং দেহের নিচের অংশের পেশীগুলোতেও মারাত্মক প্রভাব পরতে থাকে। 
 
এ কারণে গবেষকগণ বলেন ঘণ্টায় মাত্র ৫ মিনিট হাঁটলে এই ধরনের সমস্যার সমাধান করা খুব সহজেই সম্ভব।
গবেষণায় দেখা যায় যারা একটানা বসে না থেকে কিছুক্ষণ পর পর উঠে হেঁটে বা ঘুরে আসেন তাদের হৃদপিণ্ড ও মাংসপেশী জনিত সমস্যা অন্যদের তুলনায় অনেক কম থাকে।

একজন ইন্ডিয়ান অরিজিন রিসার্চার বলেন,‘একটানা বসে থাকার চাইতে ১ ঘণ্টা পর পর মাত্র ৫ মিনিট হেঁটে নিলে হৃদপিণ্ডের সাথে দেহের নিচের অংশের রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা ঠিক থাকে। এতে করে হৃদপিণ্ডের সুস্থতা নিশ্চিত হয়’।

Labels:

একিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডার : একটি মনোরোগ


mental disorder


একিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডার কী : যে ঘটনা মানুষের স্বাভাবিক চিন্তার জগৎকে নাড়া দিয়ে স্বাভাবিক ছন্দকে নষ্ট করে দেয়, প্রচণ্ড ভয় ধরিয়ে দেয় এবং যে ঘটনাটিকে অবশ্যই প্রতিদিনের ঘটনা বা চিন্তা দিয়ে ব্যাখ্যা করাও সম্ভব নয়_এমন আকস্মিক, অগ্রহণযোগ্য ও অকল্পনীয় ঘটনার সঙ্গে মানসিক বিপর্যয়ের সম্পর্ক আছে। আর এ মানসিক বিপর্যয়টাই হলো একিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা তীব্র মানসিক চাপজনিত ভারসাম্যহীনতা।
সাভারে ঘটে যাওয়া ঘটনার ক্ষেত্রে ব্যাপারটির বিশদ ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। সেখানে প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রেই এমন পরিণতি ঘটার আশঙ্কা প্রায় শতভাগ। প্রতিটি মানুষের জন্যই যা অসহনীয়, অকল্পনীয়, আকস্মিক ও অস্বাভাবিক ঘটনা।

তবে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনেও এমনটি হতে পারে। সাধারণত ঘটনার সঙ্গে প্রচণ্ড ভয়, মানসিক চাপ বা ব্যথা, গুরুতর ইনজুরি বা জখম হওয়ার আশঙ্কা, মৃত্যু বা মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। সেই সঙ্গে চরমতম অসহায়ত্ব কাজ করে। মনে রাখতে হবে, এ ক্ষেত্রে হঠাৎ ঘটা এবং প্রচণ্ড ভয়_দুটিই কার্যকর ভূমিকা রাখে।


কাদের হয় : যেকোনো মানুষ, যে এমন কোনো একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বা অস্বাভাবিক ঘটনার ভুক্তভোগী কিংবা প্রত্যক্ষকারী।

কী হয় : প্রতিক্রিয়াগুলো বিভিন্ন রকমের হতে পারে। শুরুতেই একেবারে কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়, যে সময়টাকে মানুষ ব্যাখ্যা করতে পারে না। ঠিক পরবর্তী সময়েই দেখা যায় এক ধরনের ভয়ার্ত অনুভূতি কিংবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা দম বন্ধ হওয়ার মতো অনুভূতি। কারো কারো ক্ষেত্রে চিন্তায় অসংলগ্নতাও দেখা যায়।

এ ধরনের প্রতিক্রিয়াগুলো আবার অনেক সময় এমনি এমনিই ঠিক হয়ে যায়। দু-তিন মিনিট থেকে দু-তিন দিন পর্যন্ত সময় নিতে পারে। কেউ কেউ ঘটে যাওয়া ঘটনাটির সম্পূর্ণ কিংবা কিছু অংশ মনে করতে পারে না।

তবে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কেটে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে বিভিন্ন রকমের মানসিক সমস্যা শুরু হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে কিছু চিনতে না পারা, চারদিকের পরিবেশকে বুঝতে না পারা, কিছু মনে করতে না পারা, বারবার ঘটনাটি চোখের সামনে চলে আসা, দুঃস্বপ্নের মতো বিভিন্ন ভয়ার্ত দৃশ্য কল্পনা করা, কখনো ওই সব বিষয়কে ভয় করা বা এড়িয়ে চলা। টেনশনের কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রতিদিনের কাজ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

ঘটনা ঘটার কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ দুই দিনের মধ্যেই সমস্যা শুরু হয়, যা সাধারণত দুই দিন থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। যেসব ক্ষেত্রে ঘটনার কারণ বা তার ভোগান্তি থেকে যায়, সেসব ক্ষেত্রে আরো অনেক দিন সমস্যা চলতে পারে, যা পরবর্তীকালে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা পিটিএসডি-এ রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ চার সপ্তাহ পর থেকে পিটিএসডি বলা হবে।


সতর্কতা : একেবারে শুরুতে যে সমস্যা হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা কমে যাওয়ার বড় কারণ হলো আমাদের শরীর তার নিজস্ব পদ্ধতিতে বিষয়গুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে অনেককে ভারমুক্ত মনে হলেও ধীরে ধীরে আবার সপ্তাহের মধ্যে সমস্যাগুলো ফিরে আসতে পারে। যদি এসব বিষয় সতর্কভাবে মোকাবিলা না করা হয়, তবে ঘটনাটি পরবর্তী জীবনে যেকোনো ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

চিকিৎসা : শারীরিক যেকোনো ক্ষতি বা প্রতিক্রিয়ার জন্য তো অবশ্যই, মানসিক বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার জন্যও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জরুরি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া যদি কমে না আসে, তবে ওষুধ বেশ কার্যকরী এবং জরুরি। এ ছাড়া অতিরিক্ত টেনশন দূর করার জন্যও ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘটনাটিকে স্বাভাবিক দিকে প্রবাহিত করার জন্য, সে সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। প্রয়োজনে সম্পূর্ণ বিষয়টিকে মনে করতে সাহায্য করা দরকার। এ ক্ষেত্রে এক্সপার্টই শুধু নয়, বিষয়টি কাছের যেকোনো ব্যক্তিই করতে পারেন।

সাইকোথেরাপির ভূমিকাও কম নয়। বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থাপনায়, বিভিন্ন ধরনের রিলাক্সশেন ও কগনেটিভ রিস্ট্রাকচারিং বেশ উপকারী। বিষয়গুলোকে মনে করা এবং প্রয়োজনে ঘটনার স্থান বা বিষয়গুলো বারবার চিন্তার মাধ্যমে কিংবা সরাসরি প্রত্যক্ষ করাও একটি ভালো পদ্ধতি। 

সূত্র : কালের কণ্ঠ

Labels:

ডিমেনসিয়া হলে কী করবেন?

diesease 


ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন :: মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে এটা যেমন সুখকর বিষয়, অন্যদিকে বয়স্কদের কিছু কিছু রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে যার ভোগান্তি শুধু রোগীরাই হয় না ঘরের সবাইকে ভোগ করতে হয়। ভুগতে হয় পরিবারের লোকদের। তেমন একটি অসুখ ডিমেনসিয়া। ডিমেনসিয়া এক ধরনের ব্রেনের অসুখ যেখানে ব্রেনের নির্দিষ্ট কিছু জায়গার কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ১০% বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা হতে পারে। অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক রোগে ভুগছেন এমন লোকদের মধ্যে বেশি হতে পারে। পৃথিবীর সব দেশের মতো আমাদের দেশেও এই রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ ধরনের মধ্যে অ্যালজিমিয়াস ওব্রেন স্টোক টাইপই বেশি। ৬৫ বছর বয়সে ১%, ৮০ বছর বয়সে ৮-১০%, ৯০ বছর বয়সে ৩০-৪০% অ্যালজিমিয়াস রোগে ভুগে থাকেন।
যেখানে পুরুষ মহিলা সবাই আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত ৫০ এর পরে এই রোগটি দেখা দেয়। এ রোগে মহিলারা বেশি ভোগে।
রোগীর কথা শুনে মনে হয় মানুষটি বুঝি দুষ্টামি করছে বা ভান করছে রোগীর চোখ, কান সবই ঠিক আছে কিন্তু তারপরও কি যেন নাই যার কারণে লোকটি তার নিকটাত্মীয়র নাম বলতে পারে না, চিনে না, ভুলে যাচ্ছে সব কিছু, আচরণ করছে শিশুর মতো।
লক্ষণসমূহ :
১। ভুলে যাওয়া এমনকি নিজের পরিবার-পরিজনদের নাম ভুলে যায়, সন্তানদের নাম ভুলে যায়, রাস্তা ঘাট চিনতে পারেনা।
২। খেয়াল হারিয়ে ফেলা।
৩। মনে করতে না পারা।
৪। হিসাব-নিকাশে গ-গোল হওয়া।
৫। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। দিনের বেলায় বেশি ঘুমায়।
৬। খেয়ে বলে খাইনি, সবকিছু খুঁজতে থাকে, রেগে যায়, মাঝেমধ্যে একদিকে চলে যায়।
৭। সেক্সুয়াল অপ্রীতিকর আচরণ করে ফেলে।
৮। অনেক সময় পায়খানা শরীরে ও বিভিন্ন জায়গায় মাখে।
কী কী সমস্যা হতে পারে :
১। খাওয়াতে গেলে রেগে যায়
২। একদিকে চলে যেতে চায়
৩। মারতে চায়
৪। বিছানায় প্রস্রাব করে দেয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে পায়খানা পর্যন্ত করে ফেলে বিছানায়।
৫। ওষুধ খেতে চায় না।
৬। রোগ আছে যে রোগী বুঝে না।
৭। অজানা-অচেনা নতুন পরিবেশে লক্ষণগুলো বেড়ে যায়।
কী কী বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত :
১। রোগীর প্রতি খেয়াল রাখা।
২। ঝঃৎড়শব হলো কিনা লক্ষ্য রাখা।
৩। শ্বাসকষ্ট, হেপাটিক, এন্ডোক্রাইন রোগ আছে কিনা তা রোগীকে কতোটুকু ক্ষতি সাধন করছে ক্ষতিয়ে দেখা।
৪। মদ্যপানের অভ্যাস আছে কিনা।
৫। শরীরের কোনো জায়গায় টিউমার হলো কিনা।
৬। হারিয়ে যাওয়ার ভয়।
৭। চলাফেরার জন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায়।
সাধারণ কারণ :
১। আলজিমিয়া ডিজিজ
২। স্ট্রোক
৩। ভিটামিনের অভাব বিশেষ করে ভিটামিন বি১, বি১২, ফলিক এসিড
৪। নিউরোসিফিলিস
৫। হাইপোথাইরডিজম
৬। মাথায় আঘাত অথবা বার বার মাথায় ইনজুরি হওয়া।
৭। দীর্ঘদিন মাদকাসক্ত, অ্যালকোহল ও অন্যান্য নেশাদ্রব্য দীর্ঘদিন সেবন।
৮। বিভিন্ন অর্গান ফেইলুর হওয়ার পর।
৯। এইডস রোগ।
১০। ব্রেন টিউমারও অন্যান্য জায়গায় টিউমার।
দেখা গেছে, সাইকিয়াট্রিস্ট দ্বারা চিকিৎসা করার পর বেশির ভাগ রোগী মোটামুটি ভালো থাকে। অতএব সবাই সচেতন হোন বয়স্কদের চিকিৎসায় এগিয়ে আসুন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক
চেম্বার : আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল

Labels: ,

বুকের দুধের উপকারিতা

breast feeding


 ডা. নওশিন শারমিন পুরবী :: প্রকৃতির অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানবশিশুর অপেক্ষাকৃত অসহায় অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। পরিবার-পরিজন বিশেষ করে মায়ের পরিচর্যায় এই শিশুটি পরবর্তীতে বেড়ে ওঠে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিরূপে। এই বেড়ে ওঠার পেছনে মায়ের দুধের অবদান অপরিসীম। এটি এমনই এক সুষম খাদ্য যা ১ম ৬ মাস খাওয়ালে সে সময়ে অন্য কোনো খাবার, পানীয়, মধু, চালের গুঁড়োর সুজি, চিনির পানি, এমনকি সাধারণ পানি- কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই।

মাতৃস্তনে ১ম যে দুধ আসে তার নাম শাল দুধ। এটি হালকা হলুদ বর্ণের, আঠালো, পরিমাণে কম। এটি শিশুর প্রথম খাবার এবং প্রথম টিকা হিসেবে কাজ করে। এতে প্রচুর প্রোটিন ও ভিটামিন থাকে। পরিমাণে কম হলেও এতে আছে এৎড়ঃিয ঋধপঃড়ৎ যা শরীরকে সুগঠিত করে। আছে এমন সব উপাদান যা রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে। ফলে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কানপাকা, মেনিনজাইটিস, এলার্জি বা এক্সিমা কম হয় বা হলেও তাড়াতাড়ি আরাগ্য লাভ করে।

শাল দুধ অনেকটা জোলাপের মতো কাজ করে পেট পরিষ্কার করে ফলে শিশুর জন্ডিস কম হয়। ভিটামিন ‘এ’ থাকার কারণে অন্ধত্ব দূর হয়। শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়িয়ে দিয়ে হাড়ের গঠন মজবুত করে। মুখম-লের হাড় ও মাংশপেশি সুগঠিত হয়। এ ছাড়া শিশুর মস্তিষ্কের গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে শিশুর ওছ বা বুদ্ধি ধার ১০ মাত্রা বৃদ্ধি করে।
জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যদি বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ দেয়া যায় তবে গর্ভফুল তাড়াতাড়ি পড়ে যায় এবং প্রসব পরবর্তী রক্তপাত কম হয়। ফলে মায়ের রক্তস্বল্পতা তৈরি হয় না এবং জরায়ু খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। প্রসবের পরবর্তী আধ ঘণ্টার মধ্যে যারা শিশুকে বুকের দুধ দেন তাদের দুধ তৈরি ও দুধ খাওয়াতে পরবর্তীতে অসুবিধা কম হয় এবং তারা অনেকদিন পর্যন্ত বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারেন।

১ম ৬ মাস পর্যন্ত মা যদি শিশুকে রাতদিন শুধু বুকের দুধ খাওয়ান তবে তা শতকরা ৯৮ ভাগ ক্ষেত্রে জন্ম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে এ শিশুরা যদি বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য কোনো কিছু খায় বা ৬ মাসের আগে মাসিক ফিরে আসে বা বাচ্চার বয়স যদি ৬ মাসের বেশি হয় তবে তা কার্যকর নাও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কপারটি, মিনিপিল, ইনজেকশন, কনডম বা ক্ষেত্রবিশেষে স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ ব্যবস্থা নিতে হবে।
সবচেয়ে বড় কথা বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য মা বেশিরভাগ সময় শিশুর সঙ্গে কাটায়। ফলে মা ও শিশুর মাঝে ১টি নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়। অন্যথায় শিশুর সঙ্গে মায়ের একটি দূরত্বের তৈরি হয় যা কারোই কাম্য নয়।

মায়ের বুকের দুধ এবং কৌটার দুধের (বিকল্প দুধ) তুলনামূলক অবস্থান :

বিকল্প দুধে সবসময় রোগজীবাণু বহন করার ভয় থাকে। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণ ও বর্জনের সমন্বয়ে তৈরি হয় কৌটার দুধ। এতে অর্থ ব্যয় হয়। সময়ের অপচয় ঘটে। রাসায়নিক ও অজৈব পদার্থ থেকে যেতে পারে। এছাড়া বোতল বা নিপল পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত করাও বেশ কষ্টসাধ্য।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে জন্মের পর থেকে যারা শিশুদের বিকল্প দুধ পান করিয়েছেন মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুর তুলনায় তাদের ডায়রিয়া ২৫ গুণ বেশি এবং শ্বসনতন্ত্রের ইনফেকশনে মৃত্যর সম্ভাবনা ৪ গুণ বেশি।
গরুর দুধে আয়রন থাকলেও মাতৃদুগ্ধের মতো তা শোষণ হয় না। মায়ের দুধের আয়রন শতকরা ৫০ ভাগ আর গরুর দুধের আয়রন শতকরা ১০ ভাগ কাজে লাগে।
গরুর দুধে ভিটামিন-সি থাকে না। এছাড়া ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে বলে শিশুর কোনো কোনো সময় খিঁচুনি তৈরি হতে পারে।

গরুর দুধের অতিরিক্ত আমিষ থাকে যা শিশুর অপরিপক্ব কিডনি দিয়ে বের হয়ে যাওয়া কঠিন। এছাড়া হজমও কষ্টকর। গরুর দুধ, মধু, গ্লুকোজ দিলে হজম হতে বেশি সময় লাগে। অনেক সময় পেট ফেঁপে থাকে। শিশু দেরিতে খেতে চায়। পায়খানা শক্ত হয়, প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্যে কষ্ট পায়।
গরুর দুধ বেশি খেলে প্রায়ই শরীরে পানি জমে ফলে শিশুটিকে মোটাসোটা দেখা যায়।
অন্যদিকে মায়ের বুকের দুধ এ সকল ঝামেলামুক্ত এবং নিরাপদ। তাছাড়া অর্র্র্র্র্থ সাশ্রয়ের কথা যদি বিবেচনা করি তবে স্তন্যদায়ী মায়ের বাড়তি খাবারের পেছনে যে খরচ হয় তা কৌটার দুধের খরচের তুলনায় অনেক কম।
তাছাড়া কৌটার দুধ তৈরিতে প্রয়োজন হয় জ্বালানি, বিশুদ্ধ পানি, পাশাপাশি সঠিক নিয়মে তৈরি করতেও জানতে হয়।

স্তন্যদায়ী মায়ের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :
# প্রসবের ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টা পর স্তনে প্রচুর দুধ তৈরি হয়। মাতৃদুগ্ধ তৈরি কখনই স্তনের গঠন বা আয়তনের ওপর নির্ভর করে না। এটি নির্ভর করে ২টি হরমোনের ওপর। এছাড়া মায়ের মানসিক অবস্থা এবং নিয়মিত বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো এ ক্ষেত্রে দায়ী।
# মাতৃস্তনের বোঁটা ও বোতলের বোটা বা চুষনি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির বলে শিশুরা বিভ্রান্ত হয়। বোতলের দুধ মুখে দিলেই টপটপ করে দুধ আসে। অথচ বুকের দুধ টানতে শিশুকে বেশি পরিশ্রম করতে হয় তখন আর মায়ের দুধ খেতে চায় না।
# শিশুরা যতোবার খেতে চায় ততোবার এবং যতোক্ষণ খেতে চায় ততোক্ষণ খাওয়াতে হবে। মোটামুটি দিনে-রাতে ৮ থেকে ১২ বার খেতে দিতে হবে।
# প্রসবের পর কিছুদিন দুধ খাওয়ানোর সময় জরায়ুতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে, পানির পিপাসা লাগতে পারে, অন্য বুক দিয়ে দুধ ঝরতে থাকেÑ এর সবই স্বাভাবিক। দুধ খাওয়ানোর আগে শরবত বা পানি খেয়ে নেবেন।
# মায়ের বুকে শিশুর সংস্থাপন ও সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। মা শিশুকে কোলে নিয়ে নিশ্চিন্তে আরাম করে বসবেন। হেলান দিয়ে পিঠের পেছনে ১টি বালিশ নেবেন যেন কোমর বাঁকা না হয়। হাতের নিচে ১টি বালিশ নেবেন।
# শুয়ে খাওয়াতে শিশুকে পুরোপুরি মায়ের দিকে ঘুরায়ে যথাসম্ভব বুকের কাছে টেনে নিতে হবে যেন শিশুর পেট মায়ের পেটে এবং শিশুর বুক মায়ের বুকে লেগে থাকে। শিশুর মাথা, ঘাড়, শরীর যেন ১ সরল রেখায় থাকে। ঘাড় বাঁকা অবস্থায় শিশু আরাম করে খেতে পারে না।
# সিজারিয়ান মা যেভাবে আরাম পান সেভাবে বসে বা শুয়ে খাওয়াবেন। প্রয়োজনে সেলাইয়ের জায়গার ওপর বালিশ দিয়ে বা বসার অবস্থায় হাঁটুর ভাঁজের নিচে বালিশ দিয়ে আরামদায়ক পোশাক পরে বসবেন।
# বুকের বোঁটা শিশুর ওপরের ঠোঁটে কয়েকবার লাগাবেন। তাতে শিশু বড় হা করবে। বোঁটার চারদিকের কালো অংশে দুধ জমা থাকে। শুধু বোটা মুখে দিলে পেট ভরবে না এবং মাও বোঁটায় ব্যথা পাবেন। তাই বোটার চার পাশের কালো অংশসহ মুখে দিতে হবে।
# ঘাড়ের নিচে হাত দিতে পারেন তবে মাথায় নয়। মনে রাখবেন শিশু দুধ টানে তারপর পান করে অতঃপর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার জন্য থামে। তাই অনেক মা শিশুটি কিছু সময় চুপ করে থাকলে মনে করেন পেট ভরে গেছে। তাই বুক ছাড়িয়ে নেন। এটি ঠিক নয়।
# জোর করে স্তন ছাড়াতে নেই যদি মাঝে উঠতে হয় তবে আঙুল ঠোঁটের পাশ দিয়ে ঢুকিয়ে দিলে শিশু ধীরে ধীরে ছেড়ে দেবে।
# শিশুর দুধ খাবার শব্দ অনেক সময় বাইরে থেকে শোনা যায়। দুধ খাওয়ানোর পর শিশু পরিতৃপ্ত থাকবে এবং কান্নাকাটি করবে না।
# তাড়াহুড়া করে খাওয়াতে চাইবেন না। এতে হরমোন কাজ করতে পারে না প্রয়োজনে বাটি চামচে খাওয়ানো যেতে পারে।

স্তন্যদায়ী মায়ের পুষ্টি :
বাংলাদেশী মহিলাদের প্রতিদিন ২০০০ থেকে ২২০০ কিলোক্যালরি শক্তির প্রয়োজন হয়। স্তন্যদায়ী মায়ের অতিরিক্ত প্রয়োজন হয় ৫০০ থেকে ৭০০ কিলোক্যালরি। প্রতিদিনের খাবার থেকে ৫০০ কিলোক্যালরি এবং বাকি ২০০ কিলোক্যালরি শরীরে জমান চর্বি থেকে সরবরাহ হয়।

যেভাবে খাবারের মাধ্যমে এই ৫০০ কিলোক্যালরি পূরণ সম্ভব :
অতিরিক্ত-১ মুঠো চালের ভাত ২৪০ কিলোক্যালরি
১/২ মুঠো ডাল ১২০ কিলোক্যালরি
১ মুঠো সবজি ১ চামচ তেল ৫০ কিলোক্যালরি
হলুদ ফলমুল ৯০ কিলোক্যালরি
মোট= ৫০০ কিলোক্যালরি
হলুদ ফলমুলের মধ্যে পাকা আম, গাজর, মিষ্টি কুমড়া উল্লেখ্যযোগ্য। ভিটামিন-এ আয়রন ব্যবহারে সহায়তা করে। আমলকী, বাতাবি লেবু, কামরাঙা, পেয়ারা, ভিটামিন-সি আয়রন শোষিত হতে সাহায্য করে। ছোট মাছ, শাক-সবজি, কচু শাক, মুলা, ডিম, দুধে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। সম্ভব হলে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ খেতে হবে।
মায়ের অপুষ্টির কারণে বুকের দুধের পরিমাণ ও গুণগত মান কমে যায়। ১ম ৬ মাসে মা প্রতিদিন ৯০০ থেকে ১০০০ সিসি দুধ তৈরি করেন। কিন্তু অপুষ্টিতে ভোগা মা ৫০০ সিসি’র বেশি দুধ তৈরি করতে পারেন না।
তখন শিশুর ওজন কমে যায়। শিশুর পুষ্টির ও বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
* অন্ধ-কুসংস্কার, পুষ্টিজ্ঞানের অভাব, দারিদ্র্য, পারিবারিক অসহযোগিতা, স্তন্যদায়ী মা নিজে না খেয়ে অন্যদের মাঝে খাবার বিতরণের সংস্কৃতি, অতিরিক্ত পরিশ্রমের সবই আমাদের বর্তমান সমাজচিত্র। মায়েরা যেখানে কাজ করেনÑ তার কর্ম ক্ষেত্রটিও মাতৃবান্ধব নয়। শিশুকে খাওয়ানোর পরিবেশ তারা পায় না। এরপর আছে গুঁড়ো দুধের বাজার প্রচার। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিভিন্নভাবে জনসাধারণ, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ করে মাকে প্রলুব্ধ করে। মায়ের দুধের প্রচার অভিযানের ক্ষেত্রে এটিও আরেকটি অন্তরায়।
* জাতীয় পর্যায়ে নীতি-নির্ধারণ এবং আইনের বাস্তবায়ন ঘটিয়ে এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান, স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, দাইসহ তৃণমূল পর্যায়ের যারা স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত তাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। জনসাধারণের মাঝে এসব তথ্য পৌঁছে দিতে প্রচার মাধ্যমকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
* আমাদের সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় আমাদের আগামী প্রজন্ম তৈরি হবে সুস্থ, সবল, উন্নত জাতি হিসেবে।

লেখক : চিকিৎসক
গাইনী বিভাগ, আনোয়ার খাঁন মর্ডান হাসপাতাল
ধানমণ্ডি, ঢাকা।

Labels: , ,